নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানার বারদীতে জন্ম দীপক কুমার বণিক দীপু’র। পিতা নিত্যানন্দ বণিক ও মা স্মৃতি রানী বণিক ছিলেন শিক্ষক। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। শৈশব ও কৈশোরের সোনালি দিনগুলি কাটে তার বারদীতে। আশু ডাক্তারের বাড়ির ছেলে দীপু। ছোটবেলা থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন ডাক্তার হওয়ার। কলেজ জীবনে দুষ্টুমি বেশি করাতে ডাক্তারি পড়া হলো না। হয়েছেন চাকরিজীবী ও রাজনীতিবিদ।
বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। এছাড়া পেশাজীবী সংগঠন কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের ঢাকা মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক। মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতিতে বিশ্বাসী দীপু। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ধারণ করেন মননে। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির পথচলা শুরু। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, বাকসু (৯৭-৯৮) এর সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন।
বুধবার সন্ধ্যায় তার সাথে আড্ডা জমে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের ক্লাবে। তার বর্ণাঢ্য জীবনের নানা দিক নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন বিবার্তা২৪.নেটের নিজস্ব প্রতিবেদক উজ্জ্বল এ গমেজের সাথে। আজ আপনাদের শোনাবো দীপক কুমার বণিক দীপুর জীবনের গল্প।
শৈশবের দিনগুলোর কথা দিয়েই আপনার জীবনের গল্প শুনতে চাই।
সোনারগাঁও থানার দলরদী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাইমারি পাস করি। ছোটবেলায় আমি ভীষণ দুষ্টু ছিলাম। বেশি পড়াশুনা ভাল লাগতো না। বন্ধুদের সাথে খেলাধুলাই ছিল আমার নেশা। নিজে পড়ে শিখার চেয়ে বাবা-মার কাছে শুনে শিখতে বেশি অভ্যস্থ ছিলাম। আমার স্কুলের অন্যান্য বন্ধুদের তুলনায় বয়সে ও উচ্চতায় ছোট ছিলাম। শিক্ষকরা অনেক আদর করতেন। মজার কথা কি জানেন, আমার হাতে খড়ি কিন্তু গার্লস স্কুলে। মা গার্লস স্কুলের শিক্ষক থাকায় মার সাথে স্কুলে যেতাম। বড় আপুরা কোলে নিত। কার আগে কে কোলে নিবে। কে কত বেশি আদর করবে, সবাই সেই প্রতিযোগিতা করতো। অনেক মজার সেই দিনগুলি খুবই মিস করি এখন। মিস করি সেই আপুদের, স্যারদের যাদের স্নেহে আমি ধন্য। আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে গিয়ে ভর্তি হই।
আমার প্রাইমারি স্কুল আমার বাসা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ছিল। তখন আমাদের এলাকায় রিকশা চলতো না। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে খেয়েদেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতাম। আবার স্কুল থেকে ফিরে গোসল করে খেয়ে একটু বিশ্রাম করে বিকালে মাঠে খেলতে যেতাম। একটু সুযোগ পেলে সারাদিন হইচই, দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি করে বেড়াতাম। এতো দুষ্টুমির পরও ১৯৯২ সালে বারদি হাইস্কুল থেকে সাইন্স বিভাগে এসএসসিতে স্টার মার্কস পেয়ে পাস করি।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন কেমন ছিল?
ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল ছোটবেলা থেকেই। ১৯৯২ সালে সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সেরা বিদ্যাপিঠ নটরডেম কলেজে সাইন্সে ভর্তি হই। নটরডেম কলেজ জীবন আর স্কুল জীবনের মধ্যে তেমন একটা পার্থক্য ছিল না। এসএসসি পাস করার পর কলেজ জীবনে সবাই একটা উন্মুক্ত বাতাসের ছোঁয়া পায়। সবার মনে একটা আশা থাকে কলেজ জীবনে অনেক স্বাধীনতা থাকবে। ইচ্ছে মতো চলাফেরা করা যাবে। আমার মত যারা নটরডেমে ভর্তি হয়েছিল তাদের কপালে সেটা জোটেনি।
নটরডেম কলেজ সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটা প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রতিদিন ক্লাস করতে হতো। মাসে ৯০% ক্লাসে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক ছিল। এখানে বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ানো হয়। এমনভাবে পড়ানো হয় কোনো ছাত্রের বাসায় গিয়ে যেন প্রাইভেট পড়তে না হয়। প্রতিদিন হোমওয়ার্ক দিত। ভুল হলে একাধিকবার করতে হতো। নিয়মিত কুইজ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। কলেজ ছাত্রদের বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার সুযোগ থাকে। বিভিন্ন ক্লাব যেমন-নটরডেম ডিবেটিং ক্লাব, আবৃত্তি ক্লাব, নাটক ক্লাব, ইতিহাস ক্লাব ইত্যাদি। এসব ক্লাবে সম্পৃক্ত থেকে নিজের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ ছিল। এসবের মধ্য দিয়ে কিভাবে যে দুটি বছর কেটে গেছে বুঝতেই পারিনি। কুইজ পরীক্ষায় ফেল করলে, দুষ্টুমি করলেও কপালে শাস্তি জুটতো। ক্লাসের এক প্র্যাকটিক্যাল খাতা ব্রাদাররা কতবার যে লেখাতো তার কোনো হিসেব থাকতো না। সব মিলে জীবনে বিচিত্র ধরনের শিক্ষা গ্রহণের পর এইচএসসিতেও ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে পাস করি।
দুষ্টুমি আমার পিছু ছাড়েনি কখনও। যে সময়টাতে ডাক্তারি ভর্তিযোদ্ধের জন্য লেখাপড়া করতে হত সবচেয়ে বেশি, সেই সময়টাতেই দুষ্টুমি যেন মাথাঝাড়া দিয়ে উঠেছিল সবচেয়ে বেশি। অগত্যা যা হওয়ার তাই হল। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন চুকে ভর্তি হলাম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সব সাধকের বড় সাধকদের সাথে কাজ করার ব্রত নিলাম।
আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন জাগছে, ডাক্তার না হওয়াতে কি এখন দুঃখ হয়? আমি বলব, মোটেই না। আমি কৃষিবিদ হিসাবে গর্বিত। দেখুন বাংলাদেশের সবচেয়ে বুমিং খাত হচ্ছে কৃষি। একবার ভেবে দেখুনতো, দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় বাংলাদেশের লোক সংখ্যা কত ছিল? আর এখন কত? কৃষিজমির পরিমাণ তখন কত ছিল? আর কমতে কমতে কৃষিজমির পরিমাণ কততে এসে দাঁড়িয়েছে? তা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষিখাত ছাড়া আর কোনো খাতে এমন উন্নয়ন কি হয়েছে?
ছাত্র রাজনীতিতে এলেন কিভাবে?
আমি মনে-প্রাণে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং নীতিতে বিশ্বাসী। ছোটবেলায় যখন গণমাধ্যমে আমার বয়সী বন্ধুরা মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস শুনতো, আমি বাবা-মার সাথে শুনতাম মুক্তিযোদ্ধের সঠিক ইতিহাস। চেতনার উন্মেষ পরিবার থেকেই হয়। জন্মগত চেতনায় বিশ্বাসী আর রূপান্তরিত চেতনাবাদীদের পার্থক্য কিছুটা থেকেই যায়।
কলেজে পড়াকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে মিশতাম, আড্ডা দিতাম। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পড় রাজনীতিতে না জড়ানোর চিন্তা ছিল। কিন্তু কথায় বলে না, ‘ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান বানে’। আমার অবস্থাও হয়েছে তাই। জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান শুনলে রুমে বসে থাকতে পারতাম না। রুম থেকেই স্লোগান শুরু করে দিতাম। মুক্তিযোদ্ধারা যে চেতনায় দেশ স্বাধীন করেছে, সেই চেতনা প্রতিষ্ঠায় সামান্য সহযাত্রী হতেই ছাত্র রাজনীতিতে জড়ানো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আমার ইচ্ছা ছিল নির্বাচিত নেতা হওয়ার, আমি যখন সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি, সেই সুযোগটা কাছে চলে আসে।
বাকসু নির্বাচন আসে, সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে ছাত্রলীগ থেকে মনোনয়ন পাই। সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত হই বাকসু ৯৭-৯৮ এর সদস্য হিসেবে। রাজনীতির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলাম। স্বপ্ন ছিল বাকসুর ভিপি হওয়ার, কিন্তু নির্বাচন আর হয়নি, হয়নি স্বপ্নপূরণও। ফ্যাকাল্টি এসোসিয়েশনের নির্বাচিত নেতা ছিলাম। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুল হক হলে থাকতাম। তখন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম।
যাইহোক, ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসলে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকতে পারিনি। তখন থাকতাম ময়মনসিংহ শহরে। ছাত্রদলের মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা ছিল নিত্যসঙ্গী।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের অভিবাবক প্রিন্সিপ্যাল মতিউর রহমান স্যার ও আইন অঙ্গণে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট জহিরুল হক চাচা সেই দুর্দিনে আমাদের আগলে রেখেছেন। বিনা পয়সায় চাচা যেভাবে আমাদের আইনি সহায়তা দিয়ে গেছেন, সেই ঋণ শোধ করার নয়। উনি না থাকলে হয়তো, জেলের ঘানি টানতে হত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটও কপালে ঝুটত না। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনটা ছিল অনেক আনন্দঘন। অনেক মজার মজার ও স্মরণীয় ঘটনা ঘটে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। অনেক মিস করি এখন।
ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের যত ইতিহাস সবই এসেছে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের হাত ধরে। যারা ছাত্র রাজনীতি করে, তারা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পাশে থেকে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করে। মুষ্টিমেয় কিছু ছাত্রের খারাপ কর্মের জন্য, সামগ্রীকভাবে ছাত্র রাজনীতির দোষারোপ করা ঠিক নয়। কেউ রাজনীতি করে আদর্শের টানে, কেউবা করে মাস্তানী করতে, ক্যান্টিনে ফাও খেতে। যারা স্বার্থের জন্য রাজনীতি করে, তারা জনকল্যাণে রাজনীতি করে না। আর রাজনীতিতে অনুপ্রবেশকারী তো থাকেই। দলের আদর্শের প্রতি মমত্ববোধ না থাকার দরুণ যেকোনো ধরনের অপকর্মই তারা করতে পারে। যার দুর্নাম বর্তায় ছাত্র সংগঠনের ওপর। তাই নেতৃত্ব নির্বাচনে সতর্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার জন্য গ্রুপিং এর সৃষ্টি হয় এবং অনুপ্রবেশকারীরা সুযোগ পায়।
ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ফিরে পেতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এর মধ্যে অন্যতম হল ছাত্রসংসদ নির্বাচন। এই দেখুন না, বাকসু ৯৭-৯৮ এর পরে আজ পর্যন্ত আর বাকসু নির্বাচন হয়নি। নেতৃত্বের বিকাশের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরি। পরিশুদ্ধ ছাত্র রাজনীতি চর্চা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমেই আসতে পারে। কোনো ছাত্রনেতা, যিনি নির্বাচিত নেতা হতে চান, তার ও তার সহযাত্রীদের আচার আচরণ ছাত্র-ছাত্রীবান্ধব হতে হয়। যেকোনো কাজ করার আগে ভোটের কথাটা তাদের মনে আসবে এবং স্বাভাবিকভাবেই ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে মানুষের যে নেতিবাচক ধারণা আছে, তা পাল্টাতেও সাহায্য করবে।
হৃদয়গ্রাহী ছাত্রবান্ধব কর্মসূচি ছাত্র সংগঠনগুলোর নেয়া দরকার। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিচ্ছন্ন ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। তারমধ্যে অন্যতম হলো ছাত্রনেতা হওয়ার বয়স নির্ধারণ করে দেওয়া। আমি মনে করি এ পদক্ষেপ খুব ভাল একটি পদক্ষেপ। ছাত্রসংগঠনগুলোর সব পর্যায়ে সম্মেলন হলে এই পদক্ষেপ আরো বেশি ফলপ্রসূ হত।
ছাত্র রাজনীতি শেষ করে ছাত্র-ছাত্রীরা তার কর্মজীবনে প্রবেশ করবে যথা সময়ে, এই সুযোগ তৈরি করেছেন শেখ হাসিনা। বেশী বয়স পর্যন্ত যদি নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়, সেইক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের কর্মজীবনে প্রবেশ করতে দেরি হবে।
এবার সামগ্রিক রাজনীতি নিয়ে কিছু বলুন।
বাংলাদেশের রাজনীতি আমার দৃষ্টিতে দু’টি শিবিরে বিভক্ত যা মুক্তিযুদ্ধের সময়েও ছিল। একপক্ষ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ। আর অপর পক্ষের নাম এন্টি আওয়ামী লীগ। পাকিস্তানি চেতনার লোকগুলোর ভাবনা, আজো পাল্টায়নি। বাংলাদেশের অর্জনে তাদের মনে আজও দোলা দেয় না। এমনকি তখনকার বিদেশি পাকি বন্ধুগুলোও আছে আগের অবস্থানে। যখনই সুযোগ পেয়েছে, তাদের সম্মিলিত শক্তি আঘাত হেনেছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে। শত চড়াই উৎরাই পার করেই আওয়ামী লীগকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। আর একটা ব্যাপার, ভাল লোকদের রাজনীতিতে আসা উচিৎ। অনেকেই বলেন, রাজনীতি কলুষিত হয়ে গেছে। এ দায়ভার কার? আমার আপনার সকলের। হয়ত আপনি দেশকে ভালোবাসেন গভীরতমভাবে। লাভ কি ভাই?
দেশটাকে সোনার বাংলা করার দায়িত্ব আমার আপনার সকলের। আপনি রাজনীতি করেন না বিধায়, দুবৃর্ত্তরা সুযোগ পাচ্ছে। নিষ্ঠাবান সত্যিকারের রাজনীতিবিদরা ভূমিকা রাখতে পারছেন না অসৎ এর ভিড়ে। এতে ক্ষতি হচ্ছে আমার, আপনার সর্বোপরি দেশের।
একবারও কি ভেবে দেখেছেন কখনো, আপনার প্রত্যাশা পূরণে, আপনি কতটুকু ভূমিকা রাখতে পেরেছেন? রাজনীতিতে দুর্বিৃত্তায়ন বন্ধ হোক এটা আমরা সকলেই চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত নিষ্ঠাবান লোক আপনি। আপনি ভাবেন, আপনার জন্য রাজনীতি নয়।
আমি বলি, আপনার রাজনীতি করার দরকার আছে। দেশমাতৃকা আপনার পানে চেয়ে আছে। মাতৃ ঋণ শোধ করার সুযোগ নিন। ৩০ লাখ শহীদের আত্মা সোনারবাংলা দেখতে চায় অতিদ্রুত। আপনি আসুন, আপনি আসলে নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদের সংখা বাড়বে। প্রাধান্য পাবে নিষ্ঠার রাজনীতি, উড়ে যাবে সব অসৎ এর দল।
আওয়ামী লীগ সরকার সম্পর্কে আপনার মুল্যায়ন কী?
আওয়ামী লীগ এর কাছে সকলের প্রত্যাশা অন্য যে কোনো দলের তুলনায় অনেক অনেক বেশি, আর এটাই স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগের কাছে আমার আপনার সকলের প্রত্যাশা golden A+। কিন্তু আওয়ামী লীগ এর result হল A.। সকলক্ষেত্রে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি, একথা সত্য। কিন্তু একথাও ধ্রুবতারার মত সত্য, অন্যদের মতো ফেল করেনি আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দেশের প্রতি মমত্ববোধ অনেক বেশি। যে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে জাতির পিতার কন্যা সেদল যদি দেশকে উন্নতির স্বর্ণশিখরে নিতে না পারে, তাহলে পারবে কে? ভুলভ্রান্তি হতেই পারে সরকার পরিচালনায়। তবে সামগ্রীক মুল্যায়ন করা উচিৎ এই সরকারের।
ভাবা উচিৎ, যা পেরেছে এই সরকার, অন্য কোনো সরকার কি তা পারত কিনা? সমস্যা হল, দু’একটি অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্খিত ঘটনা সকল অর্জনকে ম্লান করে দেয়। আমাদের সকলকে তাই চোখ কান খোলা রাখতে হবে। আমিতো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, শত প্রতিকুলতার মধ্যেও যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, আগামী ১০ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে মালয়েশিয়ার মত উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে আমার দেশ।
দল হিসেবে কী কী করা উচিৎ বলে মনে করেন?
আমি আওয়ামী লীগার হিসেবে গর্বিত। গর্ব করার মত স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস আছে এই দলের। বাংলাদেশের জনগণের অধিকার আদায়ের সকল আন্দোলনে, সকল অর্জনে ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ৬২ তে শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ তে ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার মত গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আর কোনো দলের আছে?
দল হিসেবে করণীয় তো অনেক কিছুই আছে। সব বিষয়ে আলোকপাত করা সম্ভব নয়। তবে কিছু বিষয় আমি উল্লেখ করছি।
দেখুন দেশ ডিজিটালাইজেশনে কিন্তু অনেকদূর এগিয়েছে। যার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে কিন্তু দল হিসেবে কতটা ডিজিটাল তা কিন্তু ভাববার বিষয়। দলীয় ভাবনা, কর্মসূচি, ইনফরমেশন কালেকশন সবকিছুই ডিজিটালাইজেশনের সুযোগ আছে। দলকে গতিশীল করতে ডিজিটালাইজেশন এর বিকল্প নেই। আজ বিশাল এক জনগোষ্ঠি ডিজিটালাইজড ইয়াং। তাদের কাছে টানতে ইনোভেটিবভ কর্মসূচি নেওয়া দরকার। আর একটি বিশাল জনগোষ্ঠি আছে যারা একেবারেই খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ, শিক্ষাদীক্ষা কম হওয়াতে এ জনগোষ্ঠির বেশিরভাগ অংশই ফ্লোটিং ভোটার। এ জনগোষ্ঠিকেও বিশেষ কর্মসূচির আওতায় আনা জরুরি।
আওয়ামী লীগ কর্মী সমর্থকদের আরো বেশি দল সম্পৃক্ত করতে কিছু মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া দরকার। রিকগনিশন কেন প্লে এ ভাইটাল রোল ইন দিস রিগার্ড। সরকারের সফলতা জনগণের কাছে তুলে ধরতে “লেটস উইন পিওপল মাইন্ড” কর্মসূচি হাতে নেওয়া যেতে পারে।
আপনার সংস্কৃতি প্রেমের কথা বলুন।
ছেলেবেলা মার কাছে আবৃত্তি শুনেছি, সংস্কৃতির প্রতি, কবিতার প্রতি ভালবাসা সেই শিকড়েই বাঁধা। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি সব ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলাম। যেকোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা, কবিতা আবৃত্তি করতাম। অনেক স্টেজ প্রোগ্রাম করেছি। মাঝে মাঝে নাটকও করেছি। কোরাস গানও গেয়েছি। একবার ঢাকা বিভাগীয় কবিতা উৎসবে দ্বিতীয় হয়েছিলাম। জাতীয় পর্যায়েও বিভিন্ন কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। বিটিভিতে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতাম, আবৃত্তি করতাম। এখন আর সময় করে উঠতে পারি না।
কর্মজীবন শুরু করলেন কখন?
বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পাস করার পর মাস্টার্স করার সুযোগ হয় নাই। অনার্স শেষ করার পর পরই একটা বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করা শুরু করি। চাকরির পাশাপাশি পরে এমবিএ করেছি। একটা টেলিকম কোম্পানিতে কাজ করছি।
প্রিয় ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কিছু বলুন?
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও আরজ আলী মাতুব্বর আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব।
আপনি তো কবিতা আবৃত্তি করতেন, আপনার প্রিয় কবি কারা?
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমার প্রিয় কবি। আর এখনকার কবিদের মধ্যে কবি মাহাবুবুল হক শাকিল আমার প্রিয় কবি।
আর গান?
বেশি পছন্দ দেশাত্মকবোধক গান। এ গানের সাথে মিশে আছে হৃদয়ের আবেগ, অনুভূতি, ভালবাসা। রক্তের সাথে মিশে আছে এর আবেদন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আমি একজন আদর্শ রাজনীতিবিদ হতে চাই। মানুষের জন্য, জাতির জন্য সেবামূলক কাজে আমি অনেক আনন্দ পাই। জনকল্যাণমূলক কাজ করতে আমার অনেক ভাল লাগে। আমার ইচ্ছা একজন রাজনৈতিক নেতা হয়ে মানুষের জন্য কল্যাণমূলক কিছু করার।
প্রতিবেদনটি বিবার্তায় প্রকাশ হয়েছে। দেখতে যেতে হবে
এই ঠিকানায়।