ডা. মাহফুজার রহমান উজ্জ্বল। জন্ম কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার মাস্টারপাড়া গ্রামে। বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। মা গৃহিনী। দুই ভাই আর তিন বোন। বড় ভাই ইঞ্জিনিয়ার। থাকেন দুবাইয়ে। সেখানে আওয়ামী লীগের সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক উপ সম্পাদক এবং ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন ডাক্তার মাহফুজার রহমান উজ্জ্বল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তিনি মনেপ্রাণে ভালোবাসেন। তাঁর নীতি-আদর্শকে মনে লালন করেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হবেন। তার স্বপ্ন সফল হয়েছে। তবে স্বপ্ন আরো আছে। কী সে স্বপ্ন?
বুধবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবার্তা২৪.নেটের নিজস্ব প্রতিবেদক উজ্জ্বল এ গমেজের সাথে অনেকক্ষণ গল্পে বেরিয়ে আসে তাঁর জীবনের নানা ঘটনা।
আজ আপনাদের শুনাবো ডাক্তার মাহফুজার রহমান উজ্জ্বলের সেই স্বপ্নের গল্প। তাহলে আসুন শুনি তার মুখেই।
আপনার জন্ম, শৈশবে বেড়ে ওঠার দিনগুলোর কথা বলুন।
আমার শৈশবের দিনগুলো চমৎকার একটা পরিবেশে কেটেছে। সুজলা-সুফলা, শস্য-শামলা রূপসী বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিভৃত পল্লীতে মাটি, পানি, বাতাস কংক্রিট মিশানো এক শৈশব। মাছ ধরা, সাঁতার কাটা, গাছে চড়া, পাখির মতো গাছের এডাল থেকে ওডালে চড়ে বেড়ানো। ঘরে ফিরলে বাবা-মার শাসন, আদর-স্নেহ, ভালবাসা এ ছিল বিচিত্র অভিজ্ঞতা।
প্রাইমারি স্কুলের দিনগুলো এভাবেই কেটেছে। সারাদিন ছোটাছুটি, সন্ধ্যা হলে পড়তে বসা, সকালে আরেক দফা ছোটাছুটির পর আবার স্কুল। স্কুল শেষে বন্ধুরা মিলে খেলার মাঠে খেলাধুলা। হৈচৈ করে ঘুরে বেড়ানো। অনেক সুন্দর ছিল ওই দিনগুলো। বলতে পারেন নিপাট সুন্দর এক শৈশব পার করে এসেছি।
বিবার্তার পাঠকদেরকে শৈশবের কোনো স্মরণীয় ঘটনার কথা বলতে চান কী?
একবার বন্ধুদের সাথে পুকুরে সাঁতার কাটতে গিয়ে পানিতে ডুবে যাচ্ছিলাম। আর পানি খাচ্ছিলাম। তখন বন্ধুরা দেখে তাড়াহুড়ো করে সবাই মিলে আমাকে টেনে তুলেছিল। তখন কিছু মনে ছিল না। কিছুক্ষণ পরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসি। মনে হলো যেন নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। আজ আমার কাছে সেটা দ্বিতীয় জীবন ফিরে পাওয়ার মতো লাগে।
এবার হাইস্কুল জীবনের গল্প শুনতে চাই।
হাইস্কুলে উঠে জীবনটা একটু বদলে যায়। ধীরে ধীরে পড়ালেখার পাশাপাশি বড় হবার একটা চিন্তা-চেতনা আসে মনে। এটা ছিল পরিবর্তনের সময়। এ সময়টাতে দেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনেক বই পড়েছি। ফলে চিন্তা-চেতনা একটু একটু করে বদলাতে থাকে। দেশের প্রতি আলাদা রকমের টান হৃদয়ে অনুভব করতে থাকি। স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা মনে কাজ করতে থাকে।
ছোটবেলায় কি হওয়ার ইচ্ছে ছিল?
অবাধ্য কৈশোরের ভেতরেও বাধ্য একটা সত্তা ছিল। যেখানে আমার ছোট ছোট স্বপ্নরা বাস করতো। সে স্বপ্নগুলোর মধ্যে একটা ছিল বড় হয়ে ডাক্তার হওয়া। উত্তরবঙ্গের দিনমজুর মানুষের মাঝে আমার বেড়ে ওঠা। সেখানকার মানুষের জীবনধারা আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। কীভাবে অভাবি-গরিব-দুস্থরা সামান্য অসুস্থতায় কতটা অসহায় হয়ে যায়। এগুলো আমি খুব কাছে থেকে দেখে বড় হয়েছি। এসব আমাকে কষ্ট দিতো। ভাবতাম এদের জন্য যদি কিছু করতে পারতাম। গ্রামের এসব অসহায় মানুষদের সেবার জন্যই স্বপ্নটাকে বাস্তবায়নের দিকে যেতে থাকি। যেভাবেই হোক আমাকে ডাক্তার হতে হবে।
কলেজের দিনগুলো কীভাবে কেটেছে?
কলেজ জীবন একটা স্বপ্ন পূরণ বলতে পারেন। আমি ২০০২ সালে এসএসসি পাস করার পর উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ নিউ গভ. ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হই। স্বপ্নের লালন-পালন এখানেই। পরিবারের বাইরে এসে কলেজেই জীবনকে নতুন করে আবিষ্কার করতে থাকি। এ পর্যায়ে আস্তে আস্তে জীবনের নানান দর্শনগুলো সামনে আসতে থাকে। সব সময় বই পড়তাম। পড়াশুনায় নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করতাম। কলেজে নানা ধরনের বইয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়। পড়ার পাশাপাশি আমি নিজের মনের সাথে বহির্বিশ্বকে মেলাতে থাকি। আমি নিজেকে একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য লড়াই করেছি। কীভাবে যে রাজশাহীর আড়াই বছরের কলেজ জীবন কেটে গেছে বুঝতেই পারি নি।
ছাত্রজীবনে রাজনৈতিক কোনো দলের সাথে যুক্ত ছিলেন কিনা?
ছাত্রজীবনে রাজনীতির কথা বলছেন! আমি তো এখনো ছাত্র। ডাক্তাররা সারাজীবনই ছাত্র থাকে। হা. . . হা. . .। আমি সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এস কোর্সে ভর্তি হয়েছি। এখনও ছাত্র আছি। আমি পরের পাঁচ বছরের জন্য আবার ছাত্র। যাহোক, ছাত্র রাজনীতিতে আমি ছোটবেলায় সরাসরি জড়িত না থাকলেও আমার কাছের বন্ধুরা কলেজ জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল। কিছুটা অনুপ্রেরণা আমি তাদের থেকেও পেয়েছি। আমি প্রথম ২০১০ সালের নাগেশ্বরী উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে যুক্ত হই। সেখানেই ছাত্র রাজনীতির বীজ বপন হয়েছিল খাতা কলমে। আর মনের ভেতর তো একটা রাজনৈতিক প্লট আমি সেই ছোটবেলা থেকেই গেঁথে ফেলেছিলাম।
রাজনীতি করার চেতনাটা পেলেন কীভাবে?
আমার দাদা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ ভক্ত। মনে প্রাণে বঙ্গবন্ধুকে তিনি ভালবাসতেন ও শ্রদ্ধা করতেন। ছোটবেলা থেকেই বাবার মুখে দাদার বঙ্গবন্ধু প্রিয়তার কথা অনেক শুনেছি। তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ, দর্শন আমাকে রাজনীতির প্রতি আকর্ষণ করে। সত্যিকার অর্থে আমার ভেতরের যে রাজনৈতিক দর্শন আছে সেটি এসেছে আমার বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস পড়ার পর থেকে। বঙ্গবন্ধুর সমস্ত জীবনের ইতিহাস আমার ভেতরের রাজনৈতিক দর্শনকে পরিপূর্ণ একটা রূপ দিয়েছে।
প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কারা?
শৈশবে আমার স্বপ্ন ছিল শেখ হাসিনা এবং সজীব ওয়াজেদ জয়কে কাছ থেকে দেখার। ছাত্ররাজনীতি করার সুবাদে তাঁদেরকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর যোগ্য সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাজ, নীতি, আদর্শ আমাকে রাজনীতিক জীবনে কাজের অনুপ্রেরণা দেয়। সজীব ওয়াজেদ জয় আমার দেখা অসাধারণ একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বিনয়ী একজন মানুষ। অল্প সময়ে মেধা দিয়ে দেশের অনেক কিছুই বদলে দিয়েছেন। ভাল কিছুর জন্য সবসময় বদ্ধপরিকর তিনি। তারা দুজনই আমার প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
কোন মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করলেন?
ঢাকা ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হই ২০০৪-৫ সেশনে। সেখান থেকেই ডাক্তারি পড়াশুনার জীবনের শুরু। মেডিকেল পড়াশুনার জীবনটাও শুধু বাড়ির কাজ, পরীক্ষা, প্র্যাকটিক্যাল এসবের মধ্যদিয়েই পার হয়ে গেছে। মেডিকেলের পড়ালেখা অনেক কঠিন আর কষ্টের। কিন্তু বন্ধুবান্ধবদের সাথে করে কষ্টগুলো আনন্দে পরিণত হয়েছে। তাই কখন যে ডাক্তার হয়ে গেছি বুঝতেই পারি নি।
মেডিকেল কলেজে আপনার প্রিয় স্যার কে ছিলেন? কার প্রেরণায় আপনি ভাল ডাক্তার হতে পেরেছেন বলে মনে করেন?
মেডিকেলে পড়ার শুরুতেই একজন শিক্ষককে দেখে অভিভূত হয়েছিলাম। ডাক্তার আশরাফ স্যার। তিনি এনাটমি পড়াতেন। মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি আমার অনুকরণীয় আদর্শ। তাঁর কথাবার্তা, চালচলন সবকিছু আমাকে মুগ্ধ করতো। মনে মনে তাঁকে আমি গুরুর আসনে স্থান দেই। আমার গুরু হয়ে গিয়েছিলেন তখন। এর পর অনেক স্যারের সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। অনেকেই আমাকে এ পথে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।
ডাক্তারি পেশার চ্যালেঞ্জগুলো কি কি?
ডাক্তারি পেশার চ্যালেঞ্জ. . .? দেখুন উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ডাক্তারি পেশার চ্যালেঞ্জ অনেক। আর এটা থাকবেই। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত চিকিৎসা ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই। বাংলাদেশের ডাক্তারি পেশার প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো অজ্ঞতা। এ অজ্ঞতার কারণেই জনগণ আর চিকিৎসকের মাঝে একটা দুরত্ব তৈরি হচ্ছে। বর্তমান সরকার এটা কাটিয়ে উঠেছে অনেক খানি। চিকিৎসা সেবাকে জনগণের কাছে নিয়ে এসেছে। সারা বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানা প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছেন। চিকিৎসা ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশন করছে। শুধু আমরা নিজ নিজ জায়গায় সচেতন হলে এ সেবায় সব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠব বলে আমার বিশ্বাস।
এ প্রজন্মের ডাক্তাররা সেবামূলক পেশাটাকে ব্যবসার বিশাল একটা প্লাটফর্ম তৈরি করেছেন এবিষয়ে আপনার অভিমত কী?
দেখুন দেশের প্রতিটি পেশাই সেবামূলক। সরকারের প্রতিটি সেক্টর থেকেই জনগণ সেবা পাচ্ছে। শিক্ষা, চিকিৎসা যাই বলেন না কেন, সব পেশারই একটামাত্র লক্ষ্য সেবা দান করা। তবে কিছু মধ্যসত্ত্বভোগী চিকিৎসক এটাকে বড় ধরনের ব্যবসায়িক প্লাটফর্ম বানিয়ে ফেলেছে বটে। সেখানেও কিন্তু ডাক্তাররা সেবাই দিচ্ছে। মাঝখানে ব্যবসায়িক ফায়দাটা অন্য কোনো পকেটে যাচ্ছে। আর বাইরের দেশের সাথে যদি তুলনা করেন তাহলে আমাদের দেশের ডাক্তাররা অনেক স্বল্প মূল্যেই দেশব্যাপী নানান ধরনের স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছেন। তবে হ্যাঁ, কিছু জায়গায় ডাক্তাররা হয়তো সরাসরি ব্যবসার সাথে জড়িয়ে যাচ্ছেন, যেটা এ পেশাটার জন্য একটু বিব্রতকর। তবে প্রাইভেটাইজেশনের যুগে আপনি ব্যবসায়িক দিকটাকে কোনোভাবেই আটকাতে পারবেন না। এখানে প্রতিটি সেবাই ব্যবসার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
মেডিকেল হাসপাতালে মাঝে মাঝে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে রোগি মেরে ফেলার অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে যদি কিছু বলতেন?
এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। দেখুন, আপনি চাইলেই তো হাসপাতালে রোগি মারার অভিযোগ করতে পারেন। কিন্তু ব্যাপারটা হলো- খবরের কাগজে যখন ‘ভুল চিকিৎসায় রোগির মৃত্যু’ এ ধরণের শিরোনাম আসে তখন সেটা যে ভুল চিকিৎসায় হয়েছে সেটা প্রমাণ করছে কে বা কারা? অভিযোগ হতেই পারে। সেটা খতিয়ে দেখার ব্যাপার আছে। না দেখেই আপনি সিদ্ধান্তে যেতে পারেন না। আর ডাক্তাররা প্রাণপণ চেষ্টা করে যায় একজন রোগিকে বাঁচাতে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে অবহেলা হয় না তা কিন্তু মিথ্যে নয়। আমাদের দেশে হাসপাতাল, বিছানা, ডাক্তারের আনুপাতিক হারের তুলনায় রোগি অনেক বেশি। এখানে অনেক সময় অনেক জায়গায় অনেকেই অবহেলার শিকার হচ্ছে বা হয়। সেটার জন্য সরাসরি ডাক্তারদের দিকে অভিযোগের তীর তোলা সঠিক নয়।
গ্রামে বা শহরের আনাচে-কানাচে অনেক দাঁতের ডাক্তারের চেম্বার দেখা যায়। এসব জায়গায় চিকিৎসা নেয়াটা কতটা নিরাপদ বলে মনে করেন?
আমাদের দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে ডাক্তারের সংখ্যা খুবই কম। প্রতিটি মানুষের ৩২ টি দাঁত থেকে শত শত রকমের অসুখ। সারা শরীরের সাথে এর নিবিড় সম্পর্ক। নানান ধরনের অসুখের সাথে আমাদের দাঁত, মুখ জড়িয়ে আছে। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ সেটা জানি না। অন্ধকারে পড়ে আছি। এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে কিছু সুবিধাভোগী চিকিৎসক মানুষকে ঠকিয়ে অপচিকিৎসা দিচ্ছে। আর বর্তমানে এটা দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। দাঁতের চিকিৎসা খুব সেন্সিটিভ মাইক্রোসার্জারী। মানুষের শরীরে বিভিন্ন রকম প্রাণঘাতী ভাইরাস বাহিত রোগ যেমন-এইডস, হেপাটাইটিস। এগুলো একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়াচ্ছে। তবে দিন দিন এ সেবার প্রসার ঘটছে। ইতোমধ্যে সরকার নতুন মেডিকেল কলেজ খুলেছে। এর সাথে যদি সঠিকভাবে কর্মসংস্থান হয়, তাহলে এটার ব্যাপকতা আরো বাড়বে, মানুষ অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসবে।
ডাক্তারি জীবনে যদি কোনো স্মরণীয় ঘটনা থাকে. . .
প্রত্যেক ডাক্তারের জীবনেই কিছু স্মরণীয় ঘটনা থাকে। আমারও আছে। তবে আমারটা একটু ব্যতিক্রম। ডাক্তারি জীবন শুরুতে রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েছি আর নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছি। এ রাজনীতিটাই আমার ভেতরে একটা নতুন রূপ দান করে। যা হতে চেয়েছি তা হতে পেরেছি। যেখানে পাস করাটাই একজন ডাক্তারের মূল লক্ষ্য থাকে. . . হা. . . হা. . . । এর সাথে অল্প বয়সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল অফিসার হিসেবে জয়েন করা এবং এম এস এ চান্স পাওয়া সবই আমার কাছে স্মরণীয় ঘটনা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
ছোটবেলা থেকেই অভাবী মানুষের কষ্ট দেখে বড় হয়েছি। যখন যেভাবে পেরিছি তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। তাদের ভেতরের অভাববোধটা জানি এবং বুঝি। আমি স্বপ্ন দেখি খুব শিগগিরই নিজের এলাকায় একটা হাসপাতাল করার। সেখানে সব বিভাগ থাকবে। মানুষ নামমাত্র মূল্যে কিংবা বিনামূল্যে সেবা পাবে। লাইনের পর লাইন দিয়ে মানুষ ভাল সেবার জন্য এখানে আসবে। আমি মানুষের সেবা করে, দিন শেষে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়বো।
যেহেতু নিজের রক্তকে রাজনীতির সাথে মিশিয়ে ফেলেছি সেহেতু নিজের রাজনৈতিক দর্শনের সাথে সাধারণ মানুষকে মিশিয়ে আরো বড় বড় স্বপ্নের প্ল্যাটফরম তৈরি করতে চেষ্টা করব। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগণের কাছে যেতে আর ডাক্তার সমাজের একজন হয়ে জনগণকে কাছে থেকে সেবা করতে চাই। শৈশবে দেখে আসা গ্রামের অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সব দুঃখ, দুর্দশা ঘুচাতে চাই। মোটকথা বাকি জীবনটুকু মানুষের সেবায় নিবেদন করে মানুষের মাঝে বাস করব। আমি চাই মানুষ যেন আমাকে তাদেরই সন্তানের মতো ভাবে। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে সে স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই। স্বপ্ন দেখি এমন একটি সোনার বাংলার যে স্বপ্ন জাতির জনক দেখেছিলেন। আমি সে স্বপ্নের একজন অক্লান্তকর্মী হতে চাই।
আপনার ডাক্তার হওয়ার পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি বলে মনে করেন?
আসলে ‘বাবা-মা’ তো আমার পৃথিবী। রক্তের সাথে যেমন মিশে আছেন তেমনই আমার সকল কর্মে তারা আছেন সবসময়। সে দিনগুলো মনে হলে আজো চোখে জল চিকচিক করে। আমি স্কুল ফাঁকি দিয়ে খেলতে যেতাম বাবা কানে ধরে নিয়া আসত, আবার সে বাবাই বুকে জড়ায়ে পরক্ষণেই আদর করে দিত। আমার বৃত্তি পরীক্ষা। বাবা-মা সারা রাত জেগে আমাকে দেখভাল করতেন। পরীক্ষা আমার অথচ তাদের চোখে ঘুম নেই। কত রাত এভাবে পার করে দিয়েছেন আমার জন্য তার কোনো হিসেব নেই। আর ফাঁকে ফাঁকে আমার জীবনের স্বপ্ন গেঁথে দিয়েছেন। আজ আমি যা হয়েছি তার পেছনে সবটুকু অবদানই বাবা-মার। তাঁদের কড়া শাসন আবার কোমল আদরেই আজ আমি ডাক্তার হতে পেরেছি। এছাড়াও যাদের অবদানের কথা আজ স্বীকার না করলে এ লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে তারা হলেন প্রাইমারি শিক্ষকদের মধ্যে মার্জুনা, লাইলুন্নাহার, ঝরনা, জাহানারা আপা নির্মল স্যার, প্রয়াত ইসহাক স্যার, হাইস্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে সুব্রত, তৈবুর স্যার। ওনারা আমাকে শিক্ষা দানের পাশাপাশি শিখিয়েছেন কিভাবে স্বপ্ন দেখতে হয়।
অবসরে কি করেন?
আসলে অবসর বলতে তো এখন আর তেমন কিছু পাই না। তবুও কিছু সময় পেলে সেটাকে নিজের মত করে কাজ করি। কখনো গান শুনি, আড্ডা মারি। জীবনে আড্ডা টা আমার কাছে সবার ওপরে ছিল। বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডার ওপর আর কোনো ভাল অবসর কাটানোর পথ তো দেখি না। তবে ইদানিং রাজনৈতিক ধারার বইপত্রে অনেক ঝোঁক এসেছে। ইতোমধ্যেই অনেক বই পড়ে ফেলেছি। আরো অনেক অনেক জানতে চাই। নিজের রাজনৈতিক দর্শনকে আরো শক্তিশালী করতে চাই।
প্রতিবেদনটি বিবার্তায় প্রকাশ হয়েছে। দেখতে যেতে হবে
এই লিংকে।