ধরেন আজ আপনি কিছু শিখতে পারবেন; নামি দামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে কোর্স করবেন; কাল বিদেশ যাবেন; পরশু লাখ থেকে কোটিপতি হবেন; এমনকি পরিচিতও পাবেন। কিন্তু তাতে আমার কি? আপনার ভালো হলেই বা আমার কি? খারাপ হলেই বা আমার কি?
অনেক সময় তো অনেকেই একটা ছোট ‘ধন্যবাদ’ শব্দটাও বলে না। আমাদের বরং কপালে জোটে নিন্দা মন্দ। তাহলে আমাদের অজুহাত দিয়ে লাভ কি? ক্ষতিটাই বা কার? আর লাভ টাই বা কার? উত্তরটা না হয় আপনাদের জন্যই ছেড়ে দিলাম. . .
একটা বাস্তব কাহিনীতে পড়েছিলাম, ৭৫ বছরের এক বৃদ্ধা শুধুমাত্র তার শখ পূরণের জন্য পাহাড়ে বাইসাইকেল প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছিলেন। সেই প্রতিযোগিতায় তিনি জয়ী হন। শেষে উনি বলেন তার ইচ্ছে শক্তিটাই তাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। আপনাদের জেনে রাখা ভালো, ঐ প্রতিযোগিতাটাই কিন্তু সব বয়সের মানুষ ছিল এবং সব থেকে বেশি বয়স ছিল ঐ বৃদ্ধা মহিলার।
আরো মজার কথা হলো ঐ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করার এক মাস আগে উনি নিজে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করার জন্য কোটে আবেদন করেছিলেন। তারপর তার নাতির কাছে থেকে প্রতিযোগিতার কথা শুনেই তিনি অনুপ্রাণিত হন এবং জিতে ফেরেন।
কি অদ্ভুত না? উনি কি পারতেন না অজুহাত দিতে! উনি অজুহাত দেননি। এ জন্যই আমি এতোদিন পর বাংলাদেশের একটা বিভাগে বসে তাকে নিয়ে উদাহরণ দিচ্ছি।
আপনি মুখে বলেন আপু কিছু একটা করতে চাই, আপু নিজের একটা পরিচয় চাই, আপু শিখতে চাই সেলের দরকার নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এই আপনিই চেষ্টা করেন না বরং সর্টকাট খোঁজেন। আপনাদেরই কোনো আগ্রহ নেই।
আপনি যদি শখের বিজনেস করতে চান, তাহলে আমার কিছু বলার নাই। কারণ শখে মানুষ অনেক কিছু করেন। এমনকি অনেক ভুয়া ডাক্তার চিকিৎসাও করেন শখের বসে। ঠিক তেমনই না হয় আপনিও হলেন ভুয়া উদ্যোক্তা; সমস্যা নেই। তবে যদি আসলেই একটা কিছু করতে চান, তাহলে আজই একটা প্লান তৈরি করুন যে, আজ থেকে এক বছরের মাঝে আপনি আপনার বিজনেসটা কে কোথায় দেখতে চান!
এইবার প্লান করেই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখবেন না, স্বপ্নের পথে কাজ করেন; চেষ্টা করেন; সময় ও শ্রম দেন।
আপনার বাচ্চা আছে, আপনার সংসার আছে, আপনার একাডেমিক পড়াশুনা আছে, আপনার বাড়িতে সমস্যা এবং ইত্যাদি ইত্যাদি আমাকে বা আমাদের করুণ করে শুনিয়ে কি লাভ আছে বলেন! আপনার কর্মই বলে দিবে আপনার কর্ম ফলটা কতটা মিষ্টি হবে!
আপনি কোনোরকম যদি কিন্তু ছাড়াই এই গ্রুপটা থেকে নিজের চেষ্টায় যখন সঠিক শিক্ষাটাকে অর্জন করতে পারেন তখন এই জীবনে আপনার অর্থ বা সম্মানের কমতি হবে না। এইটুকু আমি বলতে পারি।
আপনি যা শিখবেন সবটাই আপনার। এমনকি আপনি কোটিপতি হয়ে গেলেও এক পয়সাও আমরা নিব না। তাই আমাদের অজুহাত ও দিবেন না। আমাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। আপনার ভালো লাগলে গ্রুপে থাকবেন; সময় দিয়ে শিখবেন, তাহলে অনেক কিছু পাবেন। আর ভালো না লাগলে থাকবেন না, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ভুলেও আমাদের কখনো কোনো অজুহাত দিবেন না। আমরা আমাদের পরিবার পড়াশোনা বিজনেস সব কিছু সামলিয়ে গ্রুপে সময় দিয়েই টিকে আছি। তাই আপনাদের অজুহাতগুলো প্রচণ্ড রকম হাস্যকর লাগে।
আজকের কথাগুলো যদিও কড়া লিকারের চায়ের মতো, তবে আশা করি, এই সময়ে এইটাই আপনাদের কাজে দিবে।
( ফারদীন হক জ্যোতি-এর ফেসবুক পেজ থেকে. . .)
লেখক : ফারদীন হক জ্যোতি, নারী উদ্যোক্তাদের জনপ্রিয় ফেসবুক প্লাটফর্ম উইম্যান অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) গ্রুপের মডারেটর এবং ‘রঙ্গিলা রং’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকার্তা।