টেকসই খ্রিষ্টান সমাজ বিনির্মাণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ

প্রকাশ: সোমবার, ০৭ এপ্রিল, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশ, দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট), দি সেন্ট্রাল এসোসিয়েশন অব খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভস (কাককো) লি., দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি.-এর আয়োজনে ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের হল রুমে গোলটেবিল আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয়।

শনিবার (২৯ মার্চ), আলোচনা সভায় একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে খ্রিষ্টান সমাজের নেতৃত্ব, দক্ষ জনবল, মন্ডলী ও খ্রিষ্টান সমাজের যুবদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতায়ন, নেতৃত্বের বিকেন্দ্রিকরণের মাধ্যমে যুবদের নেতৃত্বে নিয়ে আসাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আরোচনা করা হয়।

আলোচনায় খ্রিষ্টান সমাজের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থের যথাযথ বিনিয়োগের মাধ্যমে উল্লিখিত বিষয়গুলোকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে টেকসই খ্রিষ্টান সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব বলে উঠে আসে।

আলোচনা সভার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করতে গিয়ে ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ বলেন, আমাদের খ্রিষ্টান সমাজের প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষ জনশক্তির অভাব দেখা দিচ্ছে। একই সাথে তরুণদের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।

তিনি বলেন, এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য কো-অপারেটিভগুলো মন্ডলীর সাথে কিভাবে বিনিয়োগ করলে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা সম্ভব এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গতানুগতিক পরিচালনায় গতানুগতিক ধারা থেকে কিভাবে ভিন্নভাবে পরিচালনা করা যায় সেই বিষয়ে চিন্তা করতে হবে।

মূল বক্তব্যে কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি বলেন, বাংলাদেশের ছোট খ্রিষ্টান সমাজ ধীরে ধীরে আরো ছোট হয়ে যাচ্ছে। দেশের ভিতরে এবং বাইরে একটা বড় অংশ অভিবাসন করছে।

তিনি বলেন, আমাদের অনেক সম্পদ আছে কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। যুব সমাজ অনেকটা আদর্শ ও লক্ষবিহীন, অনিরাপত্তা ও হতাশায় ভুগছে। তার ভবিষ্যৎ জীবন ও স্বপ্ন সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে দেশ ত্যাগ করছে।

কার্ডিনাল আমাদের নেতৃত্বকে আধুনিক সমাজের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্বে রুপান্তরিত করার আহ্বান জানান।

খ্রিষ্টান সমাজের আলোচিত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে একটি কমিটির গঠিত হয়, কমিটি আগামী দুই মাসের মধ্যে টেকসই খ্রিষ্টান সমাজ বিনির্মানে কি ধরণের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যায় সেই বিষয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরবে এবং তাদের সুপারিশমালা পেশ করবে।

আলোচনায় ভিশন ঠিক করে পরে মিশন নির্ধারণ এবং সেই অনুযায়ী সামনের দিনগুলোতে কাজ করার সুপারিশ আসে নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে।

কাথলিক মন্ডলী এবং মন্ডলী দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী নেতৃত্বের অভাব নিয়ে আলোচনা হয়। একই সাথে খ্রিষ্টান যুবরা কেন মন্ডলী বিমূখ এবং মন্ডলী দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করতে চায় না সে বিষয় নিয়ে স্টাডি করার সুপারিশ আলোচনায় উঠে আসে।

ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া বলেন, আগামীর ভালো নেতৃত্ব তৈরি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের শিক্ষা খাত উন্নয়ন করার জন্য ঢাকা ক্রেডিট সকল ধরণের সহায়তা করবে।

“ইতোমধ্যে ঢাকা ক্রেডিট স্বাস্থ্য, জেন্ডার বৈষ্ণম্য দূরীকরণ, মানসম্পন্ন শিক্ষা ও দরিদ্র বিমোচনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এখন আমাদের শিশুদের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে,” বলেন প্রেসিডেন্ট কোড়াইয়া

শিক্ষা খাতে বাংলাদেশে খ্রিষ্ট মন্ডলীর অবদান বেশি, শিক্ষার হার বেশি কিন্তু উচ্চ শিক্ষার হার কম বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হয়।

আমাদের সমাজেরর কোথাও কোনো অসংগতি থাকলে সেগুলোকে চিহ্নিত করে দ্রুততম সময়ে নিরসন করতে হবে উল্লেখ করে আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ ক্রুজ বলেন, আমাদের যুবদের সাথে বিস্তর আলোচনা করতে হবে, তাদের কথা শুনতে হবে। যুবদের জন্য নেতৃত্বের দ্বার উন্মেচিত করতে হবে।

নির্মল রোজারিও বলেন, আমাদের সোসাইটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এর চাইতে সুন্দর উদ্যোগ আর হতে পারে বলে মনে হয়না। আমাদের সমন্বিত ভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে কাককো লি.-এর চেয়ারম্যান পংকজ গিলবার্ট কস্তা বলেন, আমরা অন্তত যদি ৫০০০ ছেলে-মেয়েছে দক্ষ করতে পারি প্রাথমিকভাবে তাহলে খ্রীষ্টান সমাজের মধ্যে ভালো প্রফেশনাল হয়ে উঠবে।

হাউজিং সোসাইটি’র চেয়ারম্যান আগষ্টিন প্রতাপ গমেজ বলেন, আমরা হাউজিং সোসাইটি সর্বদা মন্ডলী এবং খ্রীষ্টান সমাজের উন্নয়নের জন্য সকল ধরণের সহায়তা করে যাবে।

কারিতাস এশিয়ার প্রেসিডেন্ট বেনেডিক্ট আলো ডি’ রোজারিও মনে করেন, শুধু বর্তমান যুবদের নিয়ে ভাবলে হবে না, আমাদের আগামী আলফা প্রজন্মকে স্টাডি করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

হলিক্রস কলেজের প্রধান শিক্ষক সিস্টার শিখা গমেজ সিএসসি বলেন, আমাদের একটা টাস্কফোর্স গঠন করে সেই অনুযায়ি কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশ বাপ্টিষ্ট চার্চ এর চেয়ারম্যান খ্রীষ্টফান অধিকারী মনে করেন, এই উদ্যোগ সুন্দর এবং যুগান্তারী কিন্তু সকলকে সাথে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

উক্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকার সহকারী বিশপ সুব্রত বনিফাস গমেজ,  ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি মাইকেল জন গমেজ, ট্রেজারার সুকুমার লিনুস ক্রুশ, সিইও জোনাস গমেজ, হাউজিং সোসাইটি’র চেয়ারম্যান আগষ্টিন প্রতাপ গমেজ, কারিতাস বাংলাদেশের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সেবাষ্টিয়ান রোজারিও, ন্যায় ও শান্তি কমিশনের সেক্রেটারী ফাদার লিটন হিউবার্ট গমেজ সিএসসি,  নটরডেম কলেজের প্রিন্সিপাল ফাদার হেমন্ত রোজারিও সিএসসি, গ্রীণ হেরাল্ড স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল সিস্টার জ্যাকলিন গমেজ আরএনডিএম।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মন্ডলীর ফাদার, সিস্টার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ, ওয়াইসিএস, খ্রিস্টান ছাত্রকল্যাণ সংঘ ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সূত্র: ডিসিনিউজবিডি
image

আপনার মতামত দিন