জ্বালানি তেলের মজুদ বাড়াতে নির্মাণ হচ্ছে আরো ছয় ট্যাংকার

প্রকাশ: শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
চাহিদার তুলনায় দেশে জ্বালানি তেলের মজুদ সক্ষমতা কম। এই পরিস্থিতিতে দেশে জ্বালানি তেলের মজুদ সক্ষমতা বাড়াতে ৫২ হাজার টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ছয়টি ট্যাংক নির্মাণ শুরু করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)।

এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৩২ হাজার টনের তিনটি ও চট্টগ্রামের বাইরে ২০ হাজার টনের তিনটি ট্যাংক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। বিপিসি নিজেই এ নির্মাণ ব্যয়ের পুরো অর্থায়ন করবে। কোম্পানিগুলোকে ট্যাংক নির্মাণের কর্মপরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে। নতুন এসব ট্যাংক স্থাপনের মাধ্যমে দেশের জ্বালানি তেল মজুদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং সংকটকালে সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিপিসির তথ্যানুযায়ী, দেশে বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে জ্বালানি তেলের মোট মজুদ সক্ষমতা ১৩ লাখ ২৫ হাজার ৫৩০ টন। এর মধ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে (ইআরএল) ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৯৮০ টন, পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে (পিওসিএল) ৩ লাখ ৪ হাজার ৪৭০ টন, মেঘনা পেট্রোলিয়ামে (এমপিএল) ২ লাখ ৩৪ হাজার ২৬৬ টন, যমুনা অয়েল কোম্পানিতে (জেওসিএল) ২ লাখ ২০ হাজার ৫২ টন, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানিতে (এসএওসিএল) ৫৪ হাজার ৭৫৭ টন, এলপি গ্যাস লিমিটেডে (এলপিজিএল) ৫৪০ টন এবং ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস ব্লেন্ডার্সে (ইএলবিএল) ৯ হাজার ৪৬৪ টন।

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি মজুদ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য চট্টগ্রামে ৩২ হাজার টনের তিনটি, গোদনাইলে পাঁচ হাজার টনের একটি ও আলীগঞ্জে ১৫ হাজার টনের দুটি ট্যাংকের নির্মাণকাজ চলছে। এর মধ্যে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে ট্যাংক নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করে মাটি পরীক্ষার কাজ শেষ করেছে। পদ্মা ও মেঘনা অয়েলের ডিপোতে মাটি পরীক্ষার কাজ চলছে। গোদনাইলে পাঁচ হাজার টনের একটি ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের আলীগঞ্জ ডিপোতে ১৫ হাজার টনের দুটি ট্যাংক নির্মাণের কাজ চলছে। সব মিলিয়ে নতুন করে ৫২ হাজার টনের ছয়টি ট্যাংক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।

বিপিসির নতুন চারটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের মজুদ সক্ষমতা বাড়বে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৮০০ টন। এর মধ্যে এসপিএম প্রকল্পে দুই লাখ টন, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা থেকে ঢাকার কুর্মিটোলা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার পাইপলাইন প্রকল্পে নয় হাজার টন, ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন প্রকল্পে ২১ হাজার টন এবং ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পে ২৮ হাজার ৮০০ টন ডিজেল মজুদ করা যাবে। এসব প্রকল্পের বাইরে বিপিসির জ্বালানি বিপণন কোম্পানিগুলোর প্রধান স্থাপনায় ট্যাংক নির্মাণ করা হলে মজুদ সক্ষমতা আরো বাড়ানো সম্ভব হবে।

বিপিসির জ্বালানি বিপণন কোম্পানি যমুনা অয়েলের (জেওসিএল) প্রধান স্থাপনার ট্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী গুপ্তখাল এলাকায় যমুনা অয়েলের মোট ১৯টি বিভিন্ন ধরনের ট্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে ১০ হাজার টন জ্বালানি ধারণক্ষমতার চারটি, সাত হাজার টনের দুটি, ছয় হাজার টনের একটি, পাঁচ হাজার টনের একটি, ৩ হাজার ২০০ টনের একটি, ২ হাজার ৬০০ টনের একটি, ২ হাজার ২০০ টনের একটি, দুই হাজার টনের তিনটি, ১ হাজার ৮০০ টনের একটি, ১ হাজার ৭০০ টনের দুটি, ৬৫০ টনের একটি ও আন্ডারগ্রাউন্ড ৯০ টনের একটি ট্যাংক আছে। এসব ট্যাংকের জ্বালানি মজুদ ধারণক্ষমতা ৮৪ হাজার ৯৪০ টন। বিকল্প ব্যবস্থায় আরো চার হাজার টন জ্বালানি মজুদ রাখতে পারে কোম্পানিটি।

দেশে গড়ে ৪০ দিনের জ্বালানি মজুদের সক্ষমতা আছে বিপিসি ও তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের কোম্পানিগুলোতে। নতুন চারটি প্রকল্পে আরো আড়াই লাখ টন জ্বালানি মজুদ রাখা সম্ভব হবে। তবে প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হতে সময় লাগবে। 

বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, মজুদের সক্ষমতা বাড়ানো গেলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য যখন কম থাকে তখন সংগ্রহ করে অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব। তাছাড়া জরুরি প্রয়োজনে বিপিসি এ মজুদ থেকে সরবরাহ করতে পারবে।

বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও পরিচালন) মণি লাল দাশ বলেন, ‘জাতীয় জ্বালানি নীতি অনুসারে ৬০ দিনের সমপরিমাণ জ্বালানি মজুদ রাখার নিয়ম আছে। কিন্তু আমাদের সক্ষমতা কম। জ্বালানি মজুদ বৃদ্ধির জন্য কোম্পানিগুলোকে তাদের চট্টগ্রামের প্রধান স্থাপনায় নতুন ট্যাংক স্থাপনের জন্য বলা হয়েছে। এজন্য চট্টগ্রামে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলের গুপ্তখাল এলাকার প্রধান ডিপোগুলোয় প্রায় ৩২ হাজার টন ধারণক্ষমতার তিনটি ট্যাংক স্থাপনের প্রকল্পের কাজ চলছে। যমুনা অয়েলের ট্যাংক স্থাপনের জায়গার মাটি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মেঘনা ও পদ্মা অয়েলের ডিপোতে মাটি পরীক্ষার কাজ চলছে। দ্রুত কাজ শেষ হলে তারা দরপত্র আহ্বান করে ট্যাংক নির্মাণের কাজ শুরু করবে।’

তিনি আরো জানান, প্রধান স্থাপনার বাইরে গোদনাইল ডিপোতে পাঁচ হাজার টনের একটি ট্যাংক নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মে মাসে সেখানে জ্বালানি মজুদের কমিশনিং শুরু হবে। মেঘনা পেট্রোলিয়ামের আলীগঞ্জ ডিপোতে ১৫ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার দুটি ট্যাংক নির্মাণের কাজও চলছে। চট্টগ্রামের প্রধান স্থাপনা ছাড়াও বাইরের ডিপোগুলোয় মোট ৫২ হাজার টন জ্বালানি তেল মজুদের জন্য ট্যাংক নির্মাণ করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে সারা দেশেই এ ধরনের ট্যাংক নির্মাণ করবে বিপিসি। সূত্র: বণিক বার্তা
image

আপনার মতামত দিন