ফ্রিল্যান্সিং শেখানোর কাজ পাচ্ছে ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রতিষ্ঠান

প্রকাশ: শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪
Image টেকভয়েস২৪ রিপোর্ট
news-banner
  ছবি: সংগৃহীত
দেশের শিক্ষিত যুব ও যুব নারীদের যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেবে সরকার, তার কাজ পাচ্ছে ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ‘দেশের ৪৮ জেলায় শিক্ষিত কর্মপ্রত্যাশী যুবদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ প্রশিক্ষণ দিতে ব্যয় হবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।

এ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ পাবেন ২৮ হাজার ৮০০ যুবক ও যুব নারী। শিক্ষিত বেকারদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা এবং বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করাই হচ্ছে প্রকল্পের উদ্দেশ্য। প্রশিক্ষণ নিতে কোনো টাকা লাগবে না, বরং ৫০০ টাকা করে দৈনিক ভাতা পাবেন তাঁরা। সরকার চায়, প্রশিক্ষণ নিয়ে তরুণেরা দেশে বসেই বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ করবেন।


অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আজ রবিবার বেলা সোয়া ১১টায় অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রস্তাব উত্থাপিত হওয়ার কথা রয়েছে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এটি বাস্তবায়ন করবে। কমিটি অনুমোদন করলে কাজ পাবে ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড নামের কোম্পানিটি।

ক্রয় কমিটিতে প্রশিক্ষণ নিয়োগের প্রতিষ্ঠানবিষয়ক প্রস্তাব উপস্থাপনের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী স্বাক্ষরিত সারসংক্ষেপে বলা হয়, ‘যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রস্তাবটি দেখেছেন, অনুমোদন করেছেন এবং ক্রয় কমিটিতে উত্থাপনের সম্মতি দিয়েছেন।’

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সরকার আগেই একটি প্রকল্প নেয়, যা বহাল রাখছে অন্তর্বর্তী সরকারও। প্রকল্পটির নাম ‘দেশের ৪৮ জেলায় শিক্ষিত কর্মপ্রত্যাশী যুবদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি’। সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি।

গত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্প প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়েছিল। তিন বছর আগে ১৬ জেলার জন্য একই ধরনের আরেকটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প সরকার বাস্তবায়ন করে। এটাও ছিল ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি। পরীক্ষামূলক প্রকল্পের খরচ ছিল ৪৭ কোটি টাকা। সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে এর আওতায় যাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁদের ৬৪ শতাংশ বা ৮১৩ জন অর্থ উপার্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর ২১ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের চাকরি করছেন।

প্রশিক্ষণ দিতে প্রতি জেলায় ২৫টি কম্পিউটার ও হাইস্পিড ইন্টারনেট-সংবলিত দুটি ল্যাব স্থাপন করা হবে। প্রতিটি ল্যাবে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন ২৫ জন করে প্রশিক্ষণার্থী। একেক ব্যাচে ৫০ জন ভর্তি হতে পারবেন। তবে আবেদন করতে হবে অনলাইনে। প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক পাস এবং তাঁদের বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। চূড়ান্ত করতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। তিন মাসের প্রশিক্ষণকালে দৈনিক ভাতা মূলত ২০০ টাকা। তবে খাবারের জন্য প্রত্যেককে আরও ৩০০ টাকা দেওয়া হবে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, এ উদ্যোগ তিনি সমর্থন করেন। তবে প্রশিক্ষণ নিয়ে তরুণেরা তা কাজে লাগাতে পারছেন কি না, সে বিষয়ে নজরদারি থাকতে হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) নিষ্ক্রিয় তরুণের বয়সসীমা হিসাব করে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়স পর্যন্ত। বিবিএসের ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ১৬ লাখ।

বিবিএসেরই স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস (এসভিআরএস)-২০২২ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৪০ দশমিক ৬৭ শতাংশ বা ১ কোটি ২৯ লাখ তরুণ এখনো নিষ্ক্রিয়। আর ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সসীমার মধ্যে থাকা ছেলেদের মধ্যে নিষ্ক্রিয় ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং মেয়েদের মধ্যে নিষ্ক্রিয় ৬১ দশমিক ৭১ শতাংশ।

ক্রয় কমিটিতে উপস্থাপিত তথ্যে দেখা যায়, দরপত্রে ২০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তবে গ্রহণযোগ্য (রেসপনসিভ) হয় ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড, বাংলাদেশ আইটি ইনস্টিটিউট, এসইও এক্সপেইট বাংলাদেশ লিমিটেড এবং নিউ হরাইজনস সিএলসি অব বাংলাদেশ। কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়ন যোগ করে প্রথম হয় ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড।

image

আপনার মতামত দিন