তাইপে শহরে ২০ থেকে ২৩ মে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল কম্পিউটেক্স ২০২৫-বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রযুক্তি প্রদর্শনী। এক হাজার চার শ’র বেশি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়, যাদের অনেকে তাদের নতুন পণ্য ও cutting-edge উদ্ভাবন এই মঞ্চেই প্রথমবারের মতো প্রদর্শন করে। কম্পিউটার হার্ডওয়্যার থেকে শুরু করে চিপসেট ও AI প্রযুক্তি-সব কিছুতেই ছিল ভবিষ্যতের ছোঁয়া।
‘AI First’-এটাই ছিল কম্পিউটেক্স ২০২৫-এর মূল প্রতিপাদ্য, আর প্রযুক্তি নির্মাতারা এবারে সেটিকে শুধু ধারণাতেই সীমাবদ্ধ রাখেনি, বাস্তবেও প্রমাণ করেছে। প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া প্রায় প্রতিটি পণ্যে ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক কোনো না কোনো ফিচার। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় এনভিডিয়ার সিইও জেনসেন হুয়াং-এর দেড় ঘণ্টাব্যাপী ভাষণে, যেখানে পুরো সময়জুড়েই ছিল এআই-এর ভবিষ্যৎ এবং এর শিল্পজগতের রূপান্তর ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা।
ভবিষ্যতে এনভিডিয়া কিভাবে একাই ‘এআই ফ্যাক্টরি’ গড়বে সেই ধারণা দিয়েছেন তিনি। সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্যও কম্পিউটেক্সে বেশ কিছু চমৎকার প্রযুক্তিপণ্য হাজির করেছেন নির্মাতারা।
এনভিডিয়া আরটিএক্স ৫০৬০
মাঝারি বাজেট গেমিং পিসির জন্য এনভিডিয়া এনেছে আরটিএক্স ৫০৬০ জিপিইউ। দাম ২৯৯ ডলার। জিপিইউটিতে থাকছে ৮ জিবি ভির্যাম এবং ৩৮৪০টি কুডা কোর। মাত্র ১৪৫ ওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এটি চলতে সক্ষম। তবে ৮ জিবি ভির্যাম এবং দামের তুলনায় জিপিইউর কম্পিউটিং শক্তির অভাব প্রতিটি গেমে সুস্পষ্ট।
শক্তিশালী প্রসেসরের সঙ্গে জিপিইউটি ব্যবহার করেও পুরনো আরটিএক্স ৪০৬০-এর চেয়ে তেমন ভালো গেমিং পারফরম্যান্স দেখা যায়নি। যাঁরা ১৪৪০পি রেজল্যুশনে গেম খেলেন, তাঁদের অবশ্যই ডিএলএসএস প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। এ হিসেবে কাছাকাছি মূল্যে ইন্টেল আর্কবি৫৮০ অথবা নতুন এএমডি আরএক্স ৯০৬০ এক্সটি কেনাই যুক্তিযুক্ত মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে কিছু ক্ষেত্রে যেমন ভিডিও এনকোডিং বা স্ট্রিমিং করলে অবশ্যই এনভিডিয়া জিপিইউটি এগিয়ে থাকবে।
এসার এআই ট্রান্সবাডস
স্মার্টফোনের ওপর নির্ভর না করে কথোপকথন ভাষান্তর করার সেবা (এআই ট্রান্সলেশন সিস্টেম) সরাসরি হেডফোনেই যুক্ত করেছে এসার। নাম এআই ট্রান্সবাডস। এয়ারপডসের চেয়ে কিছুটা বড় হলেও ব্যবহারের সময় অদ্ভুত মনে হবে না। মোট ১৫টি ভাষা লাউভ ট্রান্সলেশন করতে পারে এটি। নিখুঁতভাবে ম্যান্ডারিন ভাষান্তর করে দর্শনার্থীদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে ডিভাইসটি। এর মূল্য সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। এসারের দাবি, এখনো অনেক কাজ বাকি। ফলে কবে ট্রান্সবাডস বাজারে আসবে সেটি পরিষ্কার নয়।
এমএসআই ইউকি-ও ল্যাপটপ
সর্বাধুনিক ইন্টেল কোর আলট্রা ৯ ২৮৮ভি প্রসেসর অথবা ১৩.৩ ইঞ্চি ওলেড ডিসপ্লে নয়, এমএসআই প্রেস্টিজ ১২ এআই প্লাস ইউকি-ও এডিশন ল্যাপটপটি দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে এর অসাধারণ ডিজাইনের জন্য। ল্যাপটপটির ওপর আছে বিখ্যাত জাপানি শিল্পী কাটসুশিকা হকুসাইয়ের আঁকা ‘দ্য গ্রেট ওয়েভ অফ কানাগাওয়া’ চিত্রকর্ম।
প্রতিটি ল্যাপটপের ওপর চিত্রকর্মটি প্রিন্টের পাশাপাশি এর কিছু ডিটেইল হাতেও আঁকা হবে, তাই ল্যাপটপটি মিলবে লিমিটেড এডিশন হিসেবে। পারফরম্যান্সের দিক থেকেও ল্যাপটপটি এগিয়ে। এর প্রসেসর ৫.১ গিগাহার্জ পর্যন্ত গতিতে কাজ করতে সক্ষম। পাশাপাশি আছে ৩২ জিবি র্যাম এবং ইন্টেল আর্ক ১৪০ভি জিপিইউ। ঝকঝকে উজ্জ্বল কালার এবং দুর্দান্ত কালার অ্যাকিউরেসির ওলেড ডিসপ্লেটি তৈরি করা হয়েছে ভিডিও এবং ছবি সম্পাদনার লক্ষ্যে। ব্যাটারি লাইফও চমৎকার, ১৩ ঘণ্টা অনায়াসে পার হবে। লিমিটেড এডিশনের ল্যাপটপটির মূল্য হতে পারে সাত হাজার ডলার। তবে তিন হাজার ডলারেও মিলছে এর সাধারণ সংস্করণ।
এএমডি রেডিওন আরএক্স ৯০৬০এক্সটি
গেমারদের জন্য সুখবর, এএমডির উন্মোচিত আরএক্স ৯০৬০এক্সটি জিপিইউর দাম ৩০০ ডলার থেকে শুরু। মাত্র ৩৫০ ডলারে মিলবে ১৬ জিবি ভির্যাম সমৃদ্ধ মডেল।
মাঝারি বাজেটে পর্যাপ্ত ভির্যাম পাওয়া এখন বেশ কঠিন। এখন আর ৮ জিবি ভির্যামে ঠিকঠাক খেলার উপায় নেই বেশির ভাগ গেম, ভির্যাম স্বল্পতায় গেম খেলার সময় ফ্রেম ড্রপ হয়। আরএক্স ৯০৬০এক্সটি মডেলটিতে আছে ৩২টি কম্পিউট ইউনিট, ৩২টি রে অ্যাকসেলারেটর এবং ৬৪টি এআই অ্যাকসেলারেটর। কার্ডটির সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স ২৫.৬ টেরাফ্লপস, এআই পারফরম্যান্স কাজের প্রকারভেদে ৪১০ থেকে ৮২১ টিওপিএস পর্যন্ত হতে পারে।
৩০০ ডলার মূল্যের মডেলে থাকছে ৮ জিবি এবং ৩৫০ ডলার মূল্যের মডেলে থাকছে ১৬ জিবি ভির্যাম। দুটি মডেলই ১৫০ থেকে ১৬০ ওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, আর সে জন্য প্রয়োজন আট পিনের পাওয়ার জ্যাক। তবে এবারও এএমডি কার্ডগুলোতে এক্স২৬৪ ভিডিও এনকোডিং সুবিধা দেয়নি। তাই ভিডিও এডিটিং বা ক্যাপচারিংয়ে এখনো এনভিডিয়ার কার্ডগুলো থেকে পিছিয়ে থাকছে। গেমিং পারফরম্যান্সে এ দুটি কার্ডই সমমূল্যের এনভিডিয়া কার্ডের চেয়ে এগিয়ে।
মিনিসফোরাম জি১ প্রো
শক্তিশালী কিন্তু ক্ষুদ্র কম্পিউটারের জন্য মিনিসফোরাম ব্র্যান্ডটি সমাদৃত। প্রতিষ্ঠানটির নতুন জি১ প্রো মডেলটি দেখতে চমৎকার, অনেকটা প্লে স্টেশন ৫-এর মতো। স্ট্যান্ডের মধ্যে দাঁড় করিয়ে ব্যবহার করা যায়। উচ্চতায় পিসিটি মাত্র ১২.৪ ইঞ্চি। এর মধ্যে আছে এএমডি রাইজেন ৯ ৮৯৪৫এইচএক্স প্রসেসর, এনভিডিয়া আরটিএক্স ৫০৬০ জিপিইউ এবং ৩২ জিবি পর্যন্ত র্যাম।
পিসিটি চালাতে মাত্র ৩৫০ ওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। আলাদা অ্যাডাপ্টারের দরকার নেই, পিসির মধ্যেই ক্ষুদ্রাকৃতির পাওয়ার সাপ্লাই দেওয়া আছে। মাঝারি গ্রাফিকসে সর্বশেষ সব গেম এতে খেলা যাবে। যাঁরা টিভির সঙ্গে ব্যবহারের জন্য পিসি খুঁজছেন, তাঁদের জন্য আদর্শ। মূল্যের বিষয়ে মিনিসফোরাম এখনো কিছু জানায়নি।
স্যামসাং স্মার্ট স্পিকার
কম্পিউটেক্সে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছে স্যামসাং। নতুন প্রজন্মের ইউটি ওয়ান ওলেড ডিসপ্লে প্রযুক্তি এবং ৫০০ হার্জ রিফ্রেশ রেটের কিউডি-ওলেড ডিসপ্লের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি নতুন এক পরীক্ষামূলক মডেলের স্মার্ট স্পিকারও উন্মোচন করেছে। এতে গান শোনার পাশাপাশি এআই অ্যাসিস্ট্যান্টও আছে, দৈনন্দিন বেশ কিছু কাজ এতে করা যাবে।
মূল আকর্ষণ এর মধ্যে থাকা ভাঁজযোগ্য ওলেড ডিসপ্লে। বেশির ভাগ সময় ডিসপ্লেটি ভাঁজ হয়ে ছোট হয়ে থাকে, তবে প্রয়োজনে নিজ থেকেই ভাঁজ খুলে পূর্ণাঙ্গ আকৃতি ধারণ করতে সক্ষম। দাম এবং ডিভাইসটি কবে বাজারে আসবে তা জানা যায়নি। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া টুডে