টেক দুনিয়ায় এবার বড় চমক দিয়েছে শাওমি। ২০২৫ সালের শুরুতেই তারা অ্যাপলকে পেছনে ফেলে পরিধানযোগ্য প্রযুক্তির বাজারে এক নম্বরে উঠে এসেছে। ক্যানালিসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, শাওমির বাজার শেয়ার এখন ১৯%। এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে নতুন মি ব্যান্ড ও রেডমি ওয়াচ, যেগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে দারুণ ফিচার অফার করছে। এটা দেখায়, কেবল হার্ডওয়্যারে নয়, কৌশলগত দিক থেকেও শাওমি এখন অনেক বেশি পরিপক্ব।
শাওমির দাপট: ১৯% বাজার শেয়ার
শাওমির নতুন ডিভাইস-মি ব্যান্ড ও রেডমি ওয়াচ-বাজারে এনে প্রতিষ্ঠানটি তাদের বাজার শেয়ার বাড়িয়ে ১৯ শতাংশে নিয়ে গেছে। বছরে সরবরাহ (shipment) বেড়েছে ৪৪ শতাংশ, যার ফলে মোট সরবরাহ দাঁড়িয়েছে ৮.৭ মিলিয়ন ইউনিটে।
বাজারে প্রবৃদ্ধি ও বেসিক ওয়্যারেবলসের উত্থান
২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বৈশ্বিকভাবে সরবরাহ হয়েছে মোট ৪৬.৬ মিলিয়ন ইউনিট ওয়্যারেবল ব্যান্ড, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩% বেশি। এর মধ্যে বেসিক ওয়্যারেবলস বিভাগেই সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যা সাধারণত ফিটনেস ট্র্যাকার ও হালকা স্মার্ট ফিচারযুক্ত ডিভাইসগুলোকে বোঝায়।
বাকি প্রতিযোগীদের পারফরম্যান্স
>> অ্যাপল: দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। যদিও নির্দিষ্ট ইউনিট উল্লেখ করা হয়নি, প্রতিষ্ঠানটি ১৬% বাজার শেয়ার ধরে রেখেছে।
>> হুয়াওয়ে: তৃতীয় অবস্থানে থেকে ৩৬% প্রবৃদ্ধিতে ৭.১ মিলিয়ন ইউনিট সরবরাহ করেছে। এর ফিট ও জিটি সিরিজের জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্য।
>>স্যামসাং: তাদের গ্যালাক্সি ফিট ও গ্যালাক্সি ওয়াচ মডেলগুলোর জন্য সরবরাহ বেড়েছে ৭৪%, যা মোটে ৪.৯ মিলিয়ন ইউনিটে দাঁড়িয়েছে।
>>গারমিন: বিদ্যমান ব্যবহারকারীদের নতুন মডেলে আপগ্রেড করতে উৎসাহিত করে সরবরাহ বাড়িয়েছে ১০%, যা ১.৮ মিলিয়ন ইউনিট।
বাজারের দিক পরিবর্তন: হার্ডওয়্যার থেকে ইকোসিস্টেমে
ক্যানালিসের গবেষণা ব্যবস্থাপক সিনথিয়া চেন বলেছেন, “হার্ডওয়্যার থেকে আয় কমে যাওয়ায় নির্মাতারা এখন ইকোসিস্টেম ও সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক সেবা উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছেন।” এর ফলে ডিভাইস বিক্রির পাশাপাশি গ্রাহক ধরে রাখার দিকেও জোর দেওয়া হচ্ছে।
ভোক্তাদের পছন্দ: মূল্য, ব্যাটারি ও স্বাস্থ্য ফিচার গুরুত্বপূর্ণ
একটি ভোক্তা জরিপে (১৮,১৮৫ জন অংশগ্রহণকারী) উঠে এসেছে তিনটি মূল বিষয়:
>>দাম: স্মার্টওয়াচ কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিবেচ্য বিষয়।
>> ব্যাটারি লাইফ: ১৪,৬৯১ জন ভোক্তার মতে এটি দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
>> স্বাস্থ্য ট্র্যাকিং: ফিটনেস ও স্বাস্থ্য নজরদারি ফিচার তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে।
অ্যাপলের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা
প্রসঙ্গত, অ্যাপল চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে স্মার্টওয়াচের দশম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে একটি বিশেষ সংস্করণ উন্মোচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ক্যানালিসের পূর্বাভাস, এ ডিভাইসটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির বাজার শেয়ার আরও বাড়তে পারে।
ওয়্যারেবল প্রযুক্তির বাজার দ্রুত পরিবর্তনশীল। শাওমির মতো প্রতিযোগীরা আক্রমণাত্মক মূল্যনীতি ও নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে বাজার দখলে ব্যস্ত, অন্যদিকে অ্যাপল ও স্যামসাং উন্নত সেবা ও ইকোসিস্টেমে বিনিয়োগ করে স্থায়ী গ্রাহক তৈরি করতে চাইছে। প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য এটি একটি উত্তেজনাপূর্ণ সময়—নতুন ফিচার, উন্নত ব্যাটারি ও স্বাস্থ্য ট্র্যাকিং প্রযুক্তি নিয়ে পরিধানযোগ্য প্রযুক্তি আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। সূত্র: গেজেট ৩৬০ ও অ্যান্ড্রয়েট অথরিটি।