ছোটবেলা থেকেই আমার কম্পিউটারের প্রতি ভীষণ আগ্রহ ছিল। তখনও জানতাম না কম্পিউটার কি, এর ভেতরে কি আছে, এটার কাজইবা কি। শুধু কম্পিউটার দেখলেই ঘাটাঘাটি করতে ইচ্ছে করত। যন্ত্রটা আমাকে খুব করে কাছে টানতো। সময়-সুযোগ পেলেই এটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতাম। ভাবতাম বড় হয়ে পড়াশোনা করে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হব। যখন প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করি। তখন মনে হলো সফটওয়্যার ডেভেলপার হব। সময় বয়ে চলে। হ্যাকিংয়ে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর এখন স্বপ্ন শুধু একজন দেশসেরা হ্যাকার হওয়ার। দেশসহ সারা বিশ্বের সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করার।
এভাবেই নিজের জীবনের গল্প বলছিলেন স্কুল পড়ুয়া তরুণ সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ তানজিম শাহ কবির। তার এই হ্যাকার হয়ে উঠার পেছনে রয়েছে নানান ঘটনা।
নোয়াখালীর সদরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম তানজিম শাহ কবিরের। ডাকনাম তৃণব। বাবা হুমায়ুন কবির। দীর্ঘ দিন ধরে সৌদি আরবের একটা কোম্পানিতে হেড অব একাউন্টটেন্ট ছিলেন। বর্তমানে ব্যবসা করছেন। মা নিগার সুলতানা একটা প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। ছোট ভাই তাহমিদ শাহ কবির, বাবা-মাকে নিয়ে থাকেন নোয়াখালীর মাইজদীতে।
তখন তৃণব পড়তেন পুলিশ কেজি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে। শিশু মনে ছিল এক পৃথিবী কৌতূহল। কম্পিউটার দেখলেই ঘাটাঘাটি করতে ইচ্ছে হত তার। তখন বিদেশে থাকা বাবার সাথে কম্পিউটার শেখার বিষয়ে কথা বলেন। বাবা পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার পরমার্শ দেন। তখন বন্ধুদের কম্পিউটার দেখলেই বসে যেতেন শেখার জন্য। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবার ল্যাপটপটা হয়ে যায় তার মনের সব কৌতূহল মেটানোর হাতিয়ার। স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরে একটু সময় পেলেই সেটি নিয়ে তিনি বসে যেতেন। ঘাটাঘাটি করতেন। এর ২-৩ বছর পর শিক্ষিকা মায়ের ল্যাপটপটাও হয়ে উঠে তার পথ চলার অংশীদার।
তৃণব বলেন, ইন্টারনেট, গুগল, ইউটিউব ছিল আমার কম্পিউটার শেখার প্রাথমিক শিক্ষাগুরু। দিনের মধ্যে একটু সময় পেলেই বসে যেতাম ল্যাপটপ নিয়ে। গুগলে মনের সব কৌতূহল, প্রশ্নগুলি সার্চ করতাম। পড়াশোনা করতাম। সে বিষয়ে আবার ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখতাম। এভাবে কেটে যায় এক বছর। পঞ্চম শ্রেণি পাস করে উঠি যষ্ঠ শ্রেণিতে। ভর্তি হই নোয়াখালী জিলা স্কুলে। গুগল, ইউটিউবের কল্যাণে ইতিমধ্যেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের বিষয়ে জানতে পারি। তখন জানার আগ্রহটা আরও বেড়ে গেল। প্রতিদিন একটু একটু করে জানার ও শেখার চেষ্টা করেছি। নিজের অদম্য চেষ্টায় পাইথন, সি প্রোগ্রামিংয়ের অনেকটাই শিখেছি।সেসাথে নিজে থেকেই কম্পিউটার চালানো এবং বিভিন্ন ছোটখাটো নানা কাজ করার চেষ্টাও করেছি। যেমন, বিভিন্ন প্রযুক্তির ডিভাইস খুলে আবার ঠিকঠাক মত সংযুক্ত করে ফেলতে পারতাম। ছোট ছোট সাফল্যে ধীরে ধীরে নিজের উপর আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে।
সপ্তম শ্রেণিতে উঠলে স্কুলের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের পক্ষ থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ পান তৃণব। ক্লাসের যেসব স্টুডেন্টের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সম্পর্কে ধারণা ছিল শুধু তাদেরকে নিয়ে এই প্রোগ্রামিং কোর্স করানো হয়। এরই মধ্যে দেশে চলে আসে বৈশ্বিক মহামারি করোনা। তখন কোর্সের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এদের মধ্যে যারা ভাল করেছেন এমন ৭-৮ জন স্টুডেন্টকে নোয়াখালী শিক্ষা অধিদপ্তরের জেলা শিক্ষা অফিস থেকে অনলাইনে ক্লাস করানো হয়। ওই দলের সুভাগ্যবানদের মধ্যে একজন ছিলেন তৃণব।
তৃণব বলেন, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের পক্ষ থেকে আয়োজিত কোর্স থেকে সি প্রগ্রামিং শিখেছি। এরপর বিরামহীন চেষ্টা ও অধ্যবসায়ে নিজে নিজে ইউটিউব, গুগলে সার্চ করে সেগুলি আরও বিস্তারিত জেনেছি। ইউটিউব থেকে প্রোগ্রামিংয়ের বিভিন্ন কোর্স সংগ্রহ করে তার থেকে শেখার চেষ্টা করেছি।এরপর আবার করোনার সময় নোয়াখালী শিক্ষা অধিদপ্তরের জেলা শিক্ষা অফিস থেকে নেয়া অনলাইন ক্লাসগুলি অনেক সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। প্রোগ্রামিং গুরুমুখি বিদ্যা। কিন্তু করোনার জন্য কোন মেন্টরের কাছে যেতে পারতাম না। পরিস্থিতির কারণে যেকোনো প্রোগ্রামিং নিয়ে কাজ করার সময় যখন আটকে যেতাম, তখন অনলাইন জাজ প্লাটফর্মে অ্যাপ্লাই করতাম। কীভাবে প্রবলেম সলভ করা যায় সে বিষয়ে প্র্যাকটিস করতাম। এভাবে প্রোগ্রামিং শিখেছি।
কম্পিউটার প্রোগ্রামিং নিয়ে চর্চা করতে করতে একটা সময়ে এসে শেখাটা যেনো তার নেশায় পরিণত হয়ে যায় তৃণবের। দিনের মধ্যে সময় পেলেই ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতেন। দক্ষ ব্যবসায়ী বাবা ও শিক্ষিকা মা ছেলের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে ছেলের পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন। কে শুনে কার কথা। তৃণব নিজের মতো করে শেখার নেশায় শুধু কাজ করে যেতেন। পাশাপাশি পড়াশোনাটাও চালিয়ে গেছেন স্বপ্নবাজ এই তরুণ।
কম্পিউটার প্রোগ্রামিং নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে করতে জানতে পারেন ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ে বিষয়ে। তৃণব বলেন, যখন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখেছি, তখন সারা দেশের অনেক প্রোগ্রামারের সাথে পরিচয় হয়। সামাজিক যোগাযাগমাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে যুক্ত হয়েছি। তখন কয়েকজন বড় ভাইকে দেখেছি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করছেন। তখন বিষয়টা ভাল করে বুঝতাম না। শুধু এটুকু বুঝতাম সাইবার সিকিউরিটি মানে কাউকে বা প্রতিষ্ঠানকে হ্যাক করা। পরে ওই ভাইদের সাথে যোগাযোগ করে, কথা বলে বুঝতে পারি সাইবার সিকিউরিটি মানে ভার্চুয়াল জগতে ওয়েবসাইটের নিরাপত্তার কাজ করা। তখন আমার আগ্রহ জন্মে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কিছু করার। কেননা এতে কিছু হলে নিজেকে সিকিউর করতে পারব, সেসাথে দেশের মানুষকেও সিকিউর করতে পারব। ওই ভাইদের পরামর্শ অনুসারে গুগলে দিনরাত সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে আর্টিকেল পড়ে ও ইউটিউবে ভিডিও দেখে বিস্তারিত ধারণা লাভ করি। এভাবে চলে ৬-৭ মাস। সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে মোটামুটি একটা পরিষ্কার ধারণা হয়ে যায়।
নিজের চেষ্টায় হ্যাকিং বিষয়ে জানলেও প্রকৃত জ্ঞান লাভে যেতে হবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। যেকোনো মূ্ল্যে নিজেকে হ্যাকিংয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবেই। লক্ষ্য এখন তার এ বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নেয়া। একদিন তিনি বাবাকে হ্যাকিং শেখার আগ্রহের কথা বলেন। ২০২১ সালের জুন মাসের ঘটনা। অবশ্য বাবা আর জে কিবরিয়ার এক অনুষ্ঠানে একজন বিখ্যাত ইথিক্যাল হ্যাকারের সফলতার গল্পটা ফেসবুকে আগেই দেখেছিলেন। ফলে পেশায় ঝানু ব্যবসায়ী হুমায়ুন ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ে ছেলের সম্ভাবনা আঁচ করতে মোটেও ভুল করেননি। তৃণবের বাবা ছেলের মতকেই প্রাধান্য দিয়ে ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ের কোর্সে ভর্তি করিয়ে দেন ইশিখন ডটকমে। ইশিখনে সবচেয়ে কম বয়সী শিক্ষার্থী ছিলেন তৃণব। অল্প বয়স। ছেলে কি সত্যিই শিখতে পারছে কিছু। এমন শঙ্কা কিছুটা হলেও ছিল তার বাবা-মায়ের। তারা ছেলের কাছাকাছি থাকতেন। টিচার যা জিজ্ঞাসা করতেন, সব কিছুই সাথে সাথে জবাব দিয়ে দিতেন। ফলে তারাও একটু আশ্বস্ত হন।
তৃণব বলেন, আমি ছিলাম আমার ক্লাসে ব্যাচের মধ্যে সবচেয়ে বয়সে ছোট। সবাই আমাকে আদর করতেন। ভালোবাসতেন। যেকোনো বিষয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। মজার বিষয় ছিল ক্লাসে স্যাররা যখন কোন বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করতেন, তখন সাথে সাথে ঠিকঠাক মতো উত্তর দিয়ে দিতাম। তখন স্যার বলতেন, তুমি তো সবই জানো। তাহলে এখানে আসছো কেন? এভাবে আনন্দের সাথে কখন যে তিন মাসের কোর্সটা শেষ হয়ে যায় বুঝতেই পারিনি।
ইশিখনে ইথিক্যাল হ্যাকিং তো শেখা হলো। বাবার ল্যাপটপে তখন আর কাজ চলছিল না তৃণবের। এবার আবদার করল ভালো কনফিগারেশনের কম্পিউটারের। অল্প বয়সী ছেলে। কম্পিউটার কিনে দিলে সারাক্ষণ কী না কী করে। পড়াশোনা আবার গোল্লায় যাবে না তো! এমনটাই ভাবছিলেন তার বাবা-মা। সে কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিতে একটু দেরি করেছিলেন। এদিকে তৃণবও নাছোড়বান্দা। রীতিমতো কান্না জুড়ে দেয়। কম্পিউটার তার লাগবেই লাগবে। বাবা যেন কম্পিউটার কিনে দেন সে জন্য ১০০ রাকাত নফল নামাজও পড়েছে সে। অবশেষে ছেলের আবদার রক্ষা না করে পারেননি ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির।
কম্পিউটার পেয়ে নাওয়া-খাওয়া যেনো ভুলে যান তৃণব।সারাক্ষণ কম্পিউটার নিয়ে পড়ে থাকেন। এমনও হয়েছে, সারা রাত কাজ করেছেন তিনি। একটুও ঘুমাননি। তখন তার বেডরুমে কম্পিউটার থাকত। এখন অবশ্য আলাদা রুমে থাকেন। সে রুমে তালা লাগিয়ে দেন তার বাবা। কারণ হিসেবে তার বাবার কথা হলো, আগে একাডেমিক পড়াশোনা, তারপর অন্য কিছু। তবে মাঝে মাঝে কিছুটা সময়ের জন্য রুম খুলে দেন। তখন তৃণব কাজের ভুবনে হারিয়ে যেতেন।
তৃণবের ভাষ্য, বাবা যখন কম্পিউটার রুমে তালা দিয়ে রাখেন, তখন নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করতে পারি না। খানিকটা মন খারাপ হলেও ভালোই লাগে। কারণ তারা তো আমার ভালোর জন্যই সব করছেন।
তৃণব কাজ করেন ইথিক্যাল হ্যাকিং বা নৈতিক হ্যাকিং নিয়ে। এককথায় এরা ভালো হ্যাকার। এরা অন্যের সিস্টেমে অনুমতি নিয়ে ঢুকে ত্রুটি খুঁজে বের করে তা ঠিক করে দেন। হ্যাকিং দুই প্রকার।হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার বা ইথিক্যাল হ্যাকার এবং ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার বা ম্যালিসিয়াস হ্যাকার। ম্যালিসিয়াস হ্যাকাররা কোনো দেশ, কোম্পানি কিংবা প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমের রুল এবং সিকিউরিটি ভেঙে ফেলে এবং মূল সিস্টেমের ক্ষতিসাধন করে। এই ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় ইথিক্যাল হ্যাকারদের। মোটকথা সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে ইথিক্যাল হ্যাকারদের বিকল্প নেই।
তৃণব বলেন, দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিতে ইথিক্যাল হ্যাকারদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। অনলাইন মার্কেট প্লেসেও তাদের কাজের কোনো কমতি নেই।
প্রশিক্ষণ নেয়ার পর এবার প্র্যাকটিক্যালি কাজের পালা। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে কম করে ১৮ বছর হতে হবে। তিনি ক্লাস নাইনে পড়েন। বয়স মাত্র ১৫ বছর। তখন কৌশল অবলম্বন করে ‘হুমায়ুন কবির’ বাবার নামে আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খুলেন। আপওয়ার্কে তিনি কাজের জন্য আবেদন করে রাখেন। কোনো বায়ারের পছন্দ হলে তাকে নক দেন। এভাবে প্রথম কাজের অর্ডার পান। কাজটি ছিল ডাটা রিকভারি। মূল ছিল ২১০ ডলারের। খুশিতে টাকাটা বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেন।যেখানে পাঁচ-দশ ডলার দিয়ে বেশির ভাগ নতুন ফ্রিল্যান্সারের আয়ের শুরু হয়, সেখানে তৃণবের প্রথম আয়ই ছিল ২১০ ডলার।
নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা, সময়নিষ্ঠতা, বিশ্বস্ততা, কাজের প্রতি কমিটমেন্টের কারণে অল্প দিনের মধ্যে বায়ারদের মনে জায়গা করে নেন তৃণব। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বায়াররা তার কাছ থেকে কাজ করিয়ে নেন।
নিজের কাজ সম্পর্কে তৃণব বলেন, আমার কাজের চাহিদা অনেক বলে অনেক কম সময় অনেক টাকা আয় করা সম্ভব হয়েছে। এই যেমন, দুই মাসে ১২ ঘণ্টা কাজ করে দুই লাখ টাকার বেশি আয় করেছি। আমি প্রতি ঘণ্টা কাজের জন্য ৫০ থেকে ১০০ ডলার নিই। ওয়েবসাইট টেস্টিং করে সবচেয়ে বেশি আয় করেছি। এ ছাড়া র্যা নসামওয়্যার সরানো, ফাইল ডিক্রিপ্ট, ম্যালওয়্যার ক্লিন, অ্যাকাউন্ট সিকিউরিটি, সার্ভার সিকিউরিটি ইত্যাদি কাজও করেছি। আসলে ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ের কাজ এমনই। সময় অনুপাতে টাকা আয় করা যায়।
অবশ্য তার এই সফলতা একদিনে আসেনি। দিনের পর দিন তিনি কম্পিউটার নিয়ে পড়ে থেকেছেন। চর্চা বাদ দেয়নি এক দিনও। তৃণব বলেন, পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শুধু অনুশীলন করেছি। দিন-রাত লাভ-ক্ষতি কোনো কিছুর কথা ভাবিনি। শেখার মাঝে হারিয়ে গেছি। শিখতে শিখতে কাজ করেছি। পাশাপাশি একাডেমিক পড়াশোনাও করেছি। বায়াররা এত কাজ দিচ্ছিলেন যে, কাজ করে কুলিয়ে উঠতে পারছিলাম না। অন্যদিকে চলে আসে নাইনের বার্ষিক পরীক্ষা। পরিস্থিতি এমন ছিল যে বায়ারদের কাউকে কিছু না জানিয়ে একাউন্টটা ডিএক্টিভেট করতে গিয়ে ডিলেট করে দেই। এখনো ওই অবস্থায় আছে।
পরীক্ষার জন্য অনলাইন মার্কেপ্লেসে একাউন্ট বন্ধ করলে কি হবে। দেশের যেসব বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙক্ষী, ক্লাসমেট, ক্লায়েন্ট, কোম্পানি তৃণবকে চিনত, অনলাইনে যোগাযোগ করে বিভিন্ন কাজে অফার দিতে শুরু করেন। দেশের বিভিন্ন কোম্পানির কাজ পেতেই থাকেন। যতটুকু সম্ভব হয়েছে সেগুলি করেছেন। এখনও দেশের ও বিদেশ থেকে বায়াররা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাজের অফার দিয়ে আসছেন। আগামী অক্টোবর মাসে এসএসসির টেস্ট পরীক্ষার জন্য এখন পড়াশোনায় মনোযোগ দিয়েছেন তরুণ এই ইথিক্যাল হ্যাকার।
অল্প বয়সে অর্জনের ঝুলিতে উঠেছে তার অনেক প্রাপ্তি। পেয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অসংখ্য বিদেশি বায়ার ও দেশের হাজারো মানুষের ভালোবাসা, আন্তরিক সহযোগিতা। তৃণব বলেন, মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলালিংকের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ্লিকেশনে ছয় থেকে সাতটি বাগ খুঁজে পেয়েছিলাম। এ জন্য বাংলালিংক আমাকে তিনটি অ্যাপ্রিসিয়েশন লেটার দেয়। বাংলালিংকের পক্ষ থেকে আমার সম্পর্কে বলা হয়, তোমাকে দেখে আমরা অনেক অনুপ্রাণিত আর গর্বিত যে আমাদের দেশের অনেক ছোট ছোট বাগ হান্টার আছে, যা উন্নত দেশেও নজিরবিহীন। তোমার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে আমাদের বাগ হান্ট প্রোগ্রামে কোনো বয়সের সীমা নেই। বিষয়টা আমার কাছে অনেক গর্বের।
নতুনদের উদ্দেশে তৃণব বলেন, তরুণরা যারা হ্যাকিং শিখতে চায় তাদের একটু বেশি সময় দিতে হবে। আর হতে হবে একটু পরিশ্রমী। না হলে শিখতে পারবে না। মেধা থাকলে সব সম্ভব। আমার বয়সীরা কেউ যদি ইথিক্যাল হ্যাকিং, কোডিং শেখে, তাহলে তাদের জীবন সুন্দর হবে। অনেক খারাপ অভ্যাস থেকে দূরে থেকে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারবে। আমাদের দেশের কিশোর-কিশোরীরা অনেক মেধাবী। তাদের নিয়ে আমি অনেক আশাবাদী।
স্বপ্ন দেখেন মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট, ফেসবুক, টুইটার, গুগলের মতো বড় বড় কোম্পানিতে সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিস্ট হিসেবে কাজ করার। দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে চান তিনি। দেশের নামিদামি বেসরকারি প্রযুক্তি কোম্পানির সেবার পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবাও করতে চান আত্মপ্রত্যয়ী এই তরুণ। সেসাথে দেশের অসহায়, গরিব ও মেধাবী বেকার তরুণরা যারা ইথিক্যাল হ্যাকিং শিখতে চান তাদের জন্য ভবিষ্যতে ট্রেনিং দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তার। দেশের ও মানুষের জন্য কাজ করতে তার ভালো লাগে। সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করতে চান। সুস্থ ও ভাল থেকে এভাবে যেনো সব সময় কাজ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন। এর জন্য সকলের দোয়া চান তিনি।