শখ থেকে নেশা, এখন ফটোগ্রাফি তার পেশা

প্রকাশ: শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২০
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png উজ্জ্বল এ গমেজ
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
ছোটবেলা থেকেই খুব সুন্দর পিয়ানো বাজাতেন। নাচ করতেন। গিটারও শিখেছেন। কোনটাতেই আগ্রহ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। একদিন পাবলিক বাসে চড়ে স্কুলে যাচ্ছিলেন। দেখেন বাসের দরজায় দাঁড়িয়ে একজন লোক বাতাস খেতে খেতে যাচ্ছেন। তখন তার মনে হলো, ওয়াও! কী মজা! লোকটা বাতাস খেতে খেতে যাচ্ছেন, আবার তাকে ভাড়াও দিতে হচ্ছে না। বিষয়টা তো দারুণ! তাহলে আমিও বাসের হেল্পার হবো। কলেজে পড়ার সময় ভাবতেন বিমান বালা হয়ে আকাশে উড়বেন। বিশ্বের নানা দেশে ঘুরবেন। অন্যদিকে, সময় পেলেই ফুজি সাইবার শট ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তুলতেন। ছবি তুলতে ভীষণ ভালো লাগতো।

সময়ের পালাক্রমে ফটোগ্রাফিতেই মন আটকে যায় তার। প্রথমে শখ, পরে নেশা। এখন সেটি পরিণত হয়েছে পেশায়। কীভাবে হলো সেটি? সেই গল্প টেকভয়েস২৪-কে শুনিয়েছেন অদম্য ও আত্মপ্রত্যয়ী ফটোগ্রাফার মম মোস্তফা।
 
মম মোস্তফার জন্ম খুলনায়। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। বাবা গোলাম মোস্তফা ছিলেন সরকারি চাকুরে। বাবা এখন অবসরে। মা মনোয়ারা বেগম গৃহিণী। এক ভাই, দুই বোনের মধ্যে মম ছোট। ভাই ব্যবসায়ী, বোন গৃহিণী।
 
বাবার পুলিশের চাকরি। বদলি হতে হয় নতুন নতুন কর্মস্থলে। নতুন জায়গায় গিয়ে স্কুলে ভর্তি হলেও বাবার সাথে আবার যেতে হয় নতুন কোনো গন্তব্যে। কখনো রংপুর, খুলনায়, আবার কখনোবা চট্টগ্রামে।  কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মম ঘুরে বেড়িয়েছেন বাবার চাকরির সুবাদে- শহরের অলিগলি, গ্রামের মেঠো পথ-প্রান্তরে।
 
এক জেলা থেকে অন্য জেলা- এভাবে ঘুরে ঘুরে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও ব্যবসা বিভাগ থেকে এইচএসসি পাশ করেন মম। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন জেলায় ঘোরাঘুরির ফলে ভ্রমণের প্রতি একটা আলাদা ভালোলাগা তৈরি  হয়। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা রুপসী বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য্যের প্রতি নিবিড় টান অনুভব করতে থাকেন। তখন ভাবেন কী করে এই ঘুরে বেড়ানোটাকে পেশা হিসেবে নিয়ে প্রকৃতির কাছে, মানুষের মাঝে থাকা যায়।
 
মম বলেন, স্কুলজীবন থেকেই ছবি তুলতে ভীষণ পছন্দ করতাম। ছবি তোলার প্রতি ঝোঁক দেখে বাবা আমাকে একটা ফুজি সাইবার শট ডিজিটাল ক্যামেরা কিনে দিয়েছিলেন। সময়ে পেলেই সেটা দিয়ে পারিবারিক ছবি, ফুল, লতা-পাতার ছবি তুলতাম। কিন্তু ভালো মতো ক্যামেরা চালাতে পারতাম না। এভাবে কলেজর পেরিয়ে ভর্তি হই ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে। বিবিএ প্রথম বর্ষে পড়ার সময় শখের বশেই চঞ্চল মাহমুদ স্যারের কাছে ফটোগ্রাফির উপর তিন মাসের বেসিক কোর্স করি। দেখি ব্যাপারটা আসলেই তো খুব সহজ।

প্রশিক্ষণের টেকনিক্যাল জ্ঞান ছবি তুলতে গিয়ে বাস্তবে প্রয়োগ করা শুরু করি। দেখি ছবি তো আগের তুলনায় বেশ ভালোই হচ্ছে। তখন মনে হলো আরও একটু শিখি। জানার আগ্রহটা বেড়ে যায়।  জানা ও শেখার নেশা থেকে ভর্তি হই  ‘প্রিজম’-এর অ্যাডভান্স ডিপ্লোমা কোর্সে। এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্সও শেষ করি। ফটোগ্রাফির উপর থিউরিটিক্যাল পড়াশোনার পাশাপাশি প্র্যাকটিকেল ছবি তুলতে তুলতে কখন যে ছবি তোলাকে মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছি, বুঝতেই পারিনি। শখ থেকে ছবি তোলাটা পরিণত হয়ে যায় নেশায়।
 
মমর ইচ্ছে সমস্ত বাংলাদেশটা ঘুরে দেখার। তখন তার মনে হলো বাংলাদেশের এই অপরূপ সৌন্দর্য্যটা শুধু আমি একা দেখবো কেন? যারা নানা কারণে ঘুরতে পারছেন না, যারা ঘরে বসে থাকেন তাদের সাথে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দটা ভাগাভাগি করে নিতে ফটোগ্রাফিটা হতে পারে ভালো মাধ্যম। তাহলে আমি সারাদেশে ঘুরে বেড়াতে পারবো। পাশাপাশি আয়ও হবে। সে ভাবনা এবং ঘুরে বেড়ানোর স্বভাব এ দুটো বিষয় মিলে যাওয়াতে তিনি ভাবেন, ছবি তোলোটাকে পেশা হিসেবে নিলে কেমন হয়?
 
মম বলেন, তখন আমি বিবিএ পড়ছিলাম। এরপর করতে হবে এমবিএ। চাকরি খুঁজতে হবে। শুরু হবে ক্যারিয়ার জীবন নিয়ে নতুন  ব্যস্ততা। এতসব কিছুর কথা মাথায় আসাতে মনে হলো ফটোগ্রাফিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিলে মন্দ হবে না। আর এটা এমন পেশা যেটাতে আমাকে এক জায়গায় থাকতে হবে না। তাহলে ঘোরাটাও হবে, আয়-রোজগারও হবে।
 
বিবিএ তৃতীয় বর্ষে উঠে ক্যারিয়ারকে গুরুত্ব দিয়ে বিবিএ পড়াটা বন্ধ করেন মম। ভর্তি হন ‘পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট’-এ। কেননা তার পক্ষে একসাথে বিবিএ ও পাঠশালার পড়াশোনাটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। দুটি বিষয়েই পড়াশোনার ভীষণ চাপ ছিল। পরে শুধু ফটোগ্রাফিতে তিন বছরের  ডিপ্লোমা করেন আত্মপ্রত্যয়ী এই তরুণ ফটোগ্রাফার।
 
বাবা-মার ইচ্ছে ছিল মেয়ে বিবিএ-এমবিএ পড়ে ব্যাংকার হবে। অন্যদিকে, মেয়ে বেছে নিল ফটোগ্রাফি। মম বলেন,  ওই সময়ে মেয়ে হয়ে ফটোগ্রাফিকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেয়াটা অতো সহজ ছিল না। যখন শখের বশে ছবি তুলেছি, তখন পরিবারের কেউ কিছু বলতো না। এটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেয়ার পর কেউ তেমন খুশি ছিল না। পাঠশালায় পড়ার সময়ে আমার শিক্ষক শিবলী ভাই, আবু নাছের ভাইয়ার মতো সিনিয়র ফটোগ্রাফারদের সাথে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছি। ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করেছি। ইভেন্টের কাজ করেছি। এভাবে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজে চালিয়েছি।
 
২০০৯ সালে ‘প্রিজম’-এ ফটোগ্রাফিতে ডিপ্লোমা কোর্স করার সময় একটা ভালো মানের ক্যামেরার খুব প্রয়োজন ছিল মমর। কিন্তু তাকে প্রথমে দেয়া হয়নি। কারণ সময়ে-সময়ে তার শখ বদল হচ্ছিল। বাবা-মার ধারণা ছিল এবারও তার শখ বদল হতে পারে।
 
মমর ভাষ্য, বাবা-মা না দিতে চাইলেও ডিএসএলআর ক্যামেরা আমার চাই। শুরু করি অনশন। দুইদিন না খেয়ে, কান্না-কাটি করার পর মায়ের মন গলে।  তখন মা আমার জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়। তার সেভিংস অ্যাকাউন্টের  টাকা দিয়ে নিক্কন ডি৮০ মডেলের ডিএসএলআর ক্যামেরাটি কিনে দেয়। এরপর আমার ফটোগ্রাফিতে যোগ হয় নতুন দিগন্ত। শুরু হয় ছবি তোলা। বাঁধাহীনভাবে উদ্দাম গতিতে চলে এই যাত্রা। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক ওয়েডিং ও বিভিন্ন ধরনের ইভেন্টের কাজ করেছি। পরে ফটোগ্রাফি পেশার জন্য যত ইকুইপমেন্ট কিনতে হয়েছে সব আমি নিজের আয় করা টাকায় কিনেছি।

ছবি তোলাকে পুরোপুরিভাবে পেশা হিসেবে নেয়ার পর আর থেমে থাকেননি মম। প্রত্যহিক জীবনের ঘটে যাওয়া নানান বিষয়ে অগণিত ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছেন। প্রকৃতি, মানুষ, জীবন, সংস্কৃতি সবই এসেছে ফ্রেমে। কেমন ছবি বেশি তুলতে পছন্দ করেন? জবাবে মম জানান, সব ধরনের ছবিই তোলা হয়। তবে সবচেয়ে বেশি তোলা হয় লাইফস্টাইল ক্যাটাগরির ছবি। লাইফস্টাইলে মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটে  ওঠে। এখানে সৃজনশীলতা প্রকাশের অবারিত  সুযোগ রয়েছে। এই ছবিগুলো যেন বেশি জীবন্ত মনে হয়।

প্রাত্যহিক জীবনে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোই আমার ফটোগ্রাফির বিষয়। যেমন, আবহমান গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি, পাহাড়-সমুদ্র, নদী-নালা, খাল-বিল, চাঁদ, সূর্যাস্ত, মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ইত্যাদি। তবে ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয় হাসিমাখা পোট্রেট, স্ট্রিট পোর্ট্রেট। এসব ছবি আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করে। মনে শক্তি জোগায়। আবার প্রকৃতির টানে ল্যান্ডস্ক্যাপ তোলা হয়। অধিকাংশ ল্যান্ডস্ক্যাপই সিলেট, সুনামগঞ্জ, কক্সবাজারে তোলা। ছবি ভিন্ন ভিন্ন মানসিক অভিব্যক্তি ও ভিন্ন ভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে। রাস্তায় বের হলে পোর্ট্রেট ছবি তুলতে বেশি পছন্দ করি।
 
দামি ক্যামেরা, বড় লেন্স থাকলেই কী ফটোগ্রাফার হওয়া যায়? মম বলেন, দেখুন ক্যামেরা নিজে ছবি তোলে না। ক্যামেরা তো শুধু একটা যন্ত্র। এটাকে দিয়ে ছবি তোলাতে হয়। আমার দৃষ্টিতে ফটোগ্রাফার হতে দামি ক্যামেরা লাগে না, দরকার দেখার মতো তৃতীয় চোখ। আপনি আশপাশের পৃথিবীকে কিভাবে দেখছেন, একটু অন্যভাবে শৈল্পিক দৃষ্টিতে দেখা বা নিজের মতো করে দেখা। এই বিষয়গুলো একজন ফটোগ্রাফারের মধ্যে থাকা জরুরি। সাধারণ মানুষ যেভাবে একটা বিষয়কে দেখেন, একজন ফটোগ্রাফার দেখেন একটু ভিন্ন অ্যাঙ্গেলে। এই ভিন্নভাবে দেখার তৃতীয় চোখই ফটোগ্রাফার হওয়ার জন্য বেশি দরকার।
 
সবাই মোবাইলে ছবি তুলতে পছন্দ করেন। ছবি তুলে নিজের ফেসবুকে দেন। একজন সাধারণ মানুষ আর ফটোগ্রাফারের মধ্যে কী পার্থক্য, জানতে চাইলে এই ফটোগ্রাফার বলেন, একজন সাধারণ মানুষই তার ইচ্ছেশক্তি ও কাজের মাধ্যমে ফটোগ্রাফার হয়ে ওঠেন। তবে হ্যাঁ, একজন ফটোগ্রাফারের চোখ যা দেখে ও মন যা ভাবে, তা একজন সাধারণ মানুষের চোখ তা দেখেও না, ভাবেও না। একজন ফটোগ্রাফারের থাকে সব কিছুকে অন্যভাবে দেখার মতো তৃতীয় নয়ন। সাধারণ মানুষ আশপাশের পৃথিবীকে যেভাবে দেখেন, ফটোগ্রাফার কিন্তু দেখেন একটু অন্যভাবে, ভিন্ন আঙ্গিকে, শিল্পিক দৃষ্টিতে। এখানেই ফটোগ্রাফার আর একজন সাধারণ মানুষের মধ্যে পার্থক্যটা।
 
ছবি তোলাকে সহজ ভাবলেও আসলে বিষয়টি অতটা সোজা নয়। পছন্দসই দৃশ্যকে ফ্রেমবন্দি করতে প্রয়োজন যথেষ্ট ধৈর্য্য ও সাধনা। সেসাথে প্রয়োজন টেকনিক্যাল জ্ঞান। মমর মতে, একটি অর্থপূর্ণ ছবি তুলতে  প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা। সেসাথে  কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য, অধ্যবসায় ও নিরলস সাধনা। কেননা একটা ছবিতে বেশ কিছু উপাদান থাকে। যেমন, লাইট, কম্পোজিশন, পয়েন্ট অব ভিউ, মোমেন্ট, ছবির প্রকারভেদে, ফ্রেমিং এসব  গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। রুলস অব থার্ড, লিডিং লাইনস এসব বিষয় একটা ছবিকে অর্থপূর্ণ ও চমকপ্রদ করে তোলে।
 
মডেল ফটোগ্রাফি হোক বা বিয়ের ফটোশুট, কোনোদিকেই কম যান না মম। তবে বেশি ভালোবাসেন ভ্রমণের সময় ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে। এখন পর্যন্ত ৫৮টা জেলায় ভ্রমণ করেছেন। তার মধ্যে কিছু কিছু জেলায় একাধিকবার গেছেন। যেমন কক্সবাজারে কম করে ৩০ বার যাওয়া হয়েছে তার। যেখানে কখনো পা পড়েনি শহুরে ভ্রমণপিয়াসীদের, সেখানেও ছুটে যান মম। ঘুরে আসেন একা একাই। তুলে আনেন এমন কিছু, যা আগে দেখেনি কেউ। সারাদেশে ঘুরে ঘুরে ছবি তুলে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিতে করেছেন মমস ট্রাভেল লগ।
 
মম বলেন, আমাদের সমাজে এখনও মেয়েদের একা কোথাও ঘুরতে বা ভ্রমণ করতে যেতে দেয়া হয় না। পরিবার থেকে অনুমতি দেয়া হয় না বা নিজে যেতে সাহস পায় না। তাই আমাকে দেখে, আমার ফটোগ্রাফির কাজ, ঘোরাঘুরি দেখে যদি একজন মেয়েও মনে করেন যে, মম আপু পারলে আমি পারবো না কেন? মেয়েরা যাতে দেশ ভ্রমণে অনুপ্রাণিত হয় তাই এই ট্রাভেল লগ করা।
 
প্রকৃতির অগণিত অপার সৌন্দর্য্য ফ্রেমবন্দি করেছেন মম। ২০১০ সালে ছবি তুলতে যান নরসিংদীতে। টার্গেট খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষের ছবি তোলা। পথে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ে একটা ইট ভাটায় মা ও তার বাচ্চা মাথায় করে ইট নিয়ে যাচ্ছেন। কোনো আগপিছ চিন্তা না করেই ফ্রেমবন্দি করে ফেলেন দৃশ্যটা।  মম বলেন, আমার জীবনে তোলা সেরা দশটা ছবির  মধ্যে এটা অন্যতম। কেন এটা বিশেষ, তার কারণ হলো, একজন মা যখন তার সন্তানের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন তখন সাধারণত দেখা যায় গালে চুমো দিচ্ছেন, আদর করছেন এমন দৃশ্য। এই ছবিটাতে মা অভাবের তাড়নায় তার বাচ্চার মাথায় ইট তুলে দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু সন্তানের প্রতি মায়ের যে গভীর স্নেহ-মমতা রয়েছে, সেকারণে সন্তানকে তিনি হাত দিয়ে ধরে রেখেছেন। যাতে বাচ্চাটা ঠিক মতো হাঁটতে পারে। হোঁচট খেয়ে পড়ে না যায়। এই ছবিটি আমার কাছে খুবই আবেগী ও অসাধারণ একটা ছবি।
 
ফটোগ্রাফি করে অর্জনের ঝুলিতে যোগ হয়েছে তার বেশ কিছু পুরস্কার। বাংলাদেশের সংস্কৃতির উপর ছবি তুলে পেয়েছেন বিপিএসের প্রথম পুরস্কার। অ্যাওয়ার্ড বিপিএস চ্যাম্পিয়ন, হিপা অ্যাওয়ার্ড ২০১৫, গ্লোস্টার অ্যাওয়ার্ড ২০১৬ এবং আরো বেশ কিছু অ্যাওয়ার্ড।
 
আমাদের প্রতিদিনকার জীবনের সামান্য দৃশ্যই তার দেখার চোখে অনন্য হয়ে ক্যামেরাবন্দি হচ্ছে । এক যুগের ফটোগ্রাফির ক্যারিয়ারে বেশ ক’টি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে তার তোলা ছবি। ৪০টিরও বেশি প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়েছে তার আলোকচিত্র। বিভিন্ন ছবি প্রতিযোগিতা ও ছবি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণও করেছেন তিনি।  বর্তমানে সারাদেশের স্টক ইমেজ ও ভিডিও ফুটেজের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে মমর।

 লাইফ স্টাইল ফটোগ্রাফিতেই আগ্রহ বেশি তার। তবে এখন ম্যাজিক ইমেজ-এর সাথে বিভিন্ন এনজিও ও প্রতিষ্ঠানের ভিডিও ডকুমেন্টরি তৈরির কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানের দেয়া থিম বা বিষয়বস্তুকে নিয়ে এসব ডকুমেন্টরি বা  পাবলিকেশন করছেন। এ পর্যন্ত ৬০টিরও বেশি ডকুমেন্টরি তৈরি করেছেন। বেশ কিছু কাজের পাবলিকেশন থাকলেও এই বছর নিজের বই প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে তার।
 
অবসরে ইন্টারনেটে বড় বড় ফটোগ্রাফারদের তোলা ছবিগুলো দেখতে ভীষণ পছন্দ করেন মম। আর সময়-সুযোগ হলেই ক্যামেরাটা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ছবি তোলার জন্যে। এখন নিজের মমস লগে ভিডিও বানাতেও  সময় দিচ্ছেন।
 
ফটোগ্রাফির শুরুতে ইচ্ছে ছিল সারাদেশের ৬৪টি জেলা ঘুরে দেখার। ইতোমধ্যেই ৫৮টি জেলা দেখা হয়ে গেছে মমর। ফটোগ্রাফিকে নিয়ে তার ভবিষ্যৎপরিকল্পনা হলো সেরা ছবিগুলো নিয়ে একটানপ্রদর্শনী করার। মম বলেন,  ফটোগ্রাফিটা এখন আমার ভালোবাসা। ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা। সেই টানেই বিভিন্ন ডকুমেন্টরি নির্মাণ করেছি। এখনও করে যাচ্ছি। যতদিন ভালোলাগা কাজ করবে, ততদিনই আমি ফটোগ্রাফি করে যেতে চাই। সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী কাজের মাধ্যমে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।

image

আপনার মতামত দিন