অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সরকারের নতুন নিষেধাজ্ঞা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে বুধবার থেকে। আর নিষেধাজ্ঞা চালুর প্রথম দিনেই ডিজিটাল জগতে শুরু হয়েছে এক নতুন লুকোচুরি খেলা। সরকার আইন প্রয়োগে ব্যস্ত, আর কিশোর ব্যবহারকারীরা আইন পাশ কাটিয়ে টিকে থাকার ‘বিজয়’ উদ্যাপনে মেতে উঠেছে।
এক ঝটকায় দুই লক্ষাধিক টিকটক অ্যাকাউন্ট বন্ধ
অস্ট্রেলিয়ার যোগাযোগ মন্ত্রী আনিকা ওয়েলস জানান, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুই লক্ষাধিক টিকটক অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। সংখ্যাটি আইনটির তাৎক্ষণিক প্রভাব স্পষ্ট করে দিলেও, এর বিপরীতে অনেক কিশোর এখনো প্ল্যাটফর্মে টিকে আছে এবং নিজেদের টিকে থাকার ঘটনা প্রচার করছে।
কিশোরদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বার্তায় সরগরম টিকটক
নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতেই টিকটকে দেখা গেছে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জিং বার্তা। কেউ সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে লিখেছে, “আমি আপনার নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে গেছি।” অনেকে আবার সময় উল্লেখ করে নিজেদের ‘টিকে থাকা’ ঘোষণা করছে। অসংখ্য কমেন্ট ভরে উঠেছে, “আমি এখনো এখানে!” “এটা কাজ করেনি, ভাই!”
ব্যাক-আপ অ্যাকাউন্টে পালিয়ে বাঁচছে কিশোররা
অনেক ব্যবহারকারী জানিয়েছে, তাদের মূল অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হলেও গোপন ব্যাক-আপ অ্যাকাউন্ট দিয়ে তারা সহজেই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে। কেউ স্ন্যাপচ্যাটে নিষিদ্ধ হচ্ছে, আবার টিকটকে সক্রিয়; কেউ ইনস্টাগ্রামে বাদ পড়লেও অন্য অ্যাপে ঠিকই ঘুরে বেড়াচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর টিকটকেই আইন নিয়ে ঠাট্টা
নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ঘোষণা করেন আইনটি ‘ইতিমধ্যেই সফল’। অথচ তার নিজের টিকটক অ্যাকাউন্টেই ব্যবহারকারীরা মন্তব্য করে আইনটির ব্যর্থতা তুলে ধরছে, “ভাই, আমি এখনো আছি।” “এটা ঠিকমতো কাজ করেনি।” এসব মন্তব্য দেখায় কিশোরদের হাস্যরসাত্মক প্রতিরোধ কতটা জোরালো।
বয়স যাচাইকরণ: প্রযুক্তির বড় চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো নির্ভুলভাবে ব্যবহারকারীর বয়স যাচাই করা। ই-সেফটি কমিশনার জুলি ইনম্যান গ্রান্ট কোনো নির্দিষ্ট প্রযুক্তির সুপারিশ করেননি; বরং আইডি আপলোডসহ নানা বিকল্প মিলিয়ে ‘ওয়াটারফল পদ্ধতি’ ব্যবহার করার কথা বলেছেন। কিন্তু ফেশিয়াল স্ক্যান প্রযুক্তির পক্ষপাত, ভুল শনাক্তকরণ এবং ভিপিএন ব্যবহার এই প্রক্রিয়াকে আরও দুরূহ করে তুলছে।
দায়িত্ব সম্পূর্ণ প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর
আইন অনুযায়ী কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক আইন এড়িয়ে গেলে ব্যবহারকারী বা অভিভাবকের ওপর দায় নেই। পুরো দায় টেক প্ল্যাটফর্মগুলোর। তাদেরই বয়স যাচাই করতে হবে এবং কম বয়সী ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে হবে। আইন লঙ্ঘন করলে দিতে হতে পারে সর্বোচ্চ ৪৯.৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা।
নতুন প্ল্যাটফর্মে নাবালকদের সরে যাওয়া
যেসব কিশোর তাদের প্রিয় অ্যাপ থেকে নিষিদ্ধ হয়েছে, তারা নতুন বিকল্প খুঁজছে। অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে আজকের শীর্ষ তিন জনপ্রিয় অ্যাপ, Lemon8, Yope, Coverstar এই অ্যাপগুলো এখনো নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেই, তাই কিশোরদের নতুন আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে।
নতুন অ্যাপগুলোকেও নিষিদ্ধ করা হতে পারে
মন্ত্রী ওয়েলস জানিয়েছেন, যদি দেখা যায় নাবালক ব্যবহারকারীরা নতুন প্ল্যাটফর্মগুলোতে ভিড় করছে এবং সেখানে ক্ষতিকর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, তবে এসব অ্যাপকেও নিষিদ্ধ তালিকায় যুক্ত করা হবে।
অস্ট্রেলিয়ার এই নিষেধাজ্ঞা ডিজিটাল নিরাপত্তার দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও বাস্তবে তা কার্যকর করা যে এত সহজ নয়—প্রথম দিনেই তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। কিশোরদের লুকোচুরি, প্রযুক্তির ফাঁকফোকর এবং প্ল্যাটফর্মের সীমাবদ্ধতা, সব মিলিয়ে এটি এখনো এক অসম্পূর্ণ লড়াই। সূত্র: রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, এবিসি নিউজ