নাজমুল হাসানের স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়ার

প্রকাশ: শুক্রবার, ০৯ মার্চ, ২০১৮
Image উজ্জ্বল এ গমেজ
news-banner
  ছবি: সংগৃহীত
মো. নাজমুল হাসান খান। উদীয়মান তরুণ ফটোগ্রাফার। বড় ভাইয়ের ফটোগ্রাফি দেখে শুরু তার ছবি তোলা। এক সময় তার ছবি স্থান পায় প্রদর্শনীতে। এরই মধ্যে সারা বাংলাদেশের ৩৭টি প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে তার তোলা ছবি। স্থানীয়ভাবে পেয়েছেন বেশ কিছু পুরস্কারও। তার স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়ার। চান আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে দেশের হয়ে স্বর্ণপদক জয় করতে৷
 
বিবার্তা’র আয়োজনে গত সপ্তাহে ৭১পিক্স 'ফটো অব দ্যা উইক' প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সেরা হয়েছেন মো. নাজমুল হাসান খান। এরপর তিনি মুখোমুখি হন বিবার্তার। জানান নিজের জীবনের গল্প। সেই গল্প পাঠকদের জানাচ্ছেন বিবার্তা২৪ডটনেটের নিজস্ব প্রতিবেদক উজ্জ্বল এ গমেজ। 
 
বিবার্তা : আপনার বেড়ে ওঠার গল্প বলুন। 
নাজমুল হাসান :  আমার জন্ম শেরপুরে। বাবা (মৃত) নূরুল ইসলাম খান, মা নার্গিস আরা খানম। বড় ভাই আলমগীর হোসেন, ভাবী এবং এক ভাতিজা নিয়ে আমাদের পরিবার। স্কুলজীবন শুরু শেরপুরেই। ভাইয়া যখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে তখন ঢাকায় এসে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হই। মাধ্যমিক শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজ থেকে এবং উচ্চ মাধ্যমিক মোহম্মদপুর প্রিপ্রারেটরি কলেজ থেকে।  বর্তমানে পড়ছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে।

বিবার্তা :  ফটোগ্রাফির শুরুটা কীভাবে?
নাজমুল হাসান : ছোটবেলা থেকেই সব কিছুতেই  ভাইয়াকে অনুকরণ করার চেষ্টা করি। আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন ভাইয়া ছবি তুলত। সেই থেকে আমার মধ্যে ছবি তোলার প্রবণতা কাজ করত। ভাইয়া ম্যানুয়াল অ্যাসএলআর দিয়ে ছবি তুলত। তাই আমাকে দিতে চাইত না। একদিন অনেক চাওয়ার পর ছবি তুলতে দিল এবং ছবিটা পরে দেখা গেল ভালই হয়েছে। তারপর থেকে মাঝেমধ্যেই ছবি তুলতে দিত এবং আমারও ভাল লাগতে লাগল। যখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি  তখন ভাইয়া এবং মার যৌথ চেষ্টায় আমাকে ক্যানন ১০০০ডি কিনে দেয়া হলো। তখন থেকেই আমার ছবি তোলার যাত্রা  শুরু। 
 
বিবার্তা : নির্বাচিত ছবিটি কোথয় এবং কেন তুলেছিলেন? 
নাজমুল হাসান :  আমি নিয়মিত ছবি তুলি না। হঠাৎ যখন কোনো বিষয় মাথায় আসে তখনই ছবি তুলতে বের হই। একদিন মাদ্রাসার ছবি তোলার ইচ্ছা হলো, কিন্তু ঢাকার কয়েকটা মাদ্রাসা  ঘুরেও ছবি খুঁজে পেলাম না। এরপরে গ্রামে গিয়ে খোঁজ নিয়ে খুব ভোরে একটা মাদ্রাসায় যাই। ঢোকার সাথে সাথেই এই দৃশ্যটা পাই। আর দেরি না করে দৃশ্যটা ক্যামেরাবন্দি করে ফেলি।
 
বিবার্তা : কোন কোন ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত আছেন? 
নাজমুল হাসান : আমি বর্তমানে Economics Photographic Society (EPS) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং Jahangirnagar Photographic Society (JPS) এর জয়েন্ট সেক্রেটারী হিসাবে কাজ করছি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা Photographic Society of America (PSA) এর সদস্য৷

বিবার্তা : একজন ফটোগ্রাফার হতে হলে কী কী বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হয়? 
নাজমুল হাসান : প্রথমেই জগতের বিখ্যাত ফটোগ্রাফার যারা আছেন তাদের কাজ দেখা এবং বুঝতে চেষ্টা করা৷ তারপর নিজের ছবিগুলোকে নিজেই বিচার করা ও পরবর্তীতে উন্নয়ন করা৷
 
বিবার্তা : কোথায় ফটোগ্রাফির প্রশিক্ষণ নিয়েছেন? 
নাজমুল হাসান : আমি মূলত ভাইয়ার কাছ থেকেই প্রাথমিক ধারণা নিয়ে শুরু করি এবং গুগলের সাহায্য নিয়ে আগাতে থাকি।  কিছুদিন পর মনে হল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে এবং সেইটা আমি Pathshala South Asian Media Institute থেকে সম্পন্ন করি৷
 
বিবার্তা : ফটোগ্রাফি করতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে কি? 
নাজমুল হাসান : ফটোগ্রাফি করতে অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। ছবি তোলা কাজটা হলো গুরুমুখী বিদ্যার মতো। এখানে অনেক কিছু শেখার আছে। সবাই ছবি তোলে। কিন্তু ছবির কারিগরি বিষয়ে জ্ঞান না থাকলে সঠিক ছবি তোলা সম্ভব না। অনেকেই ফটোগ্রাফি করতে চয়, কিন্তু তাদের  ফটোগ্রাফির ব্যাকরণ বিষয়ে জ্ঞান নাই। একটা অর্থপূর্ণ ছবি তুলতে হলে অবশ্যই ক্যামেরা চালানোর সাধারণ জ্ঞান দরকার। যেমন লাইট, ফোকাস, অ্যাপারচার, মুহূর্ত, কম্পোজিশন, পয়েন্ট অব ভিউ,  এসব কারিগরি বিষয় অন্তত জানার ও বোঝার জন্য ফটোগ্রাফির বেসিক প্রশিক্ষণটা নেয়া খুবই জরুরি। 

বিবার্তা : ফটোগ্রাফি করতে গিয়ে কোনো স্মরণীয় ঘটনার কথা কি মনে পড়ে? 
নাজমুল হাসান : প্রথম দিকে যখন ছবি তুলতাম, তখন গ্রামের এক বড় ভাইকে বলছিলাম গ্রামের সবচেয়ে গরিব বুড়ার কাছে নিয়ে যেতে৷ সে আমাকে একজনের বাড়িতে নিয়ে গেল। মডেলকে দেখে পছন্দ হল এবং ছবি তুলে ফেললাম। ফ্ল্যাশ লাইটের আলো তার চোখে পড়ামাত্রই তার পাশে জগভর্তি পানি আমার গায়ে ছুড়ে মারল। বকাবকি করে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিল৷ আমি বেশ অবাক হয়ে ক্যামেরা মুছতে মুছতে চলে এলাম৷ আজো ভুলতে পারি না এই ঘটনাটির কথা।
 
বিবার্তা : ফটোগ্রাফি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ ভাবনা কি?
নাজমুল হাসান : আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে দেশের হয়ে স্বর্ণপদক জয় করা৷ আমার ছবি প্রদর্শনীর সংখ্যা ৩৭ হল কয়েকদিন আগে, কিন্তু যার হাত ধরে শুরু করেছিলাম, যে আমার ফটোগ্রাফির অনুপ্রেরণার উৎস, আমার ভাইয়া, বিদেশ থাকার কারণে আমার একটা প্রদর্শনীও  দেখতে পারে নাই৷ এই আফসোসটা পূর্ণ করা৷
 
বিবার্তা : প্রদর্শনীগুলো কোথায় হয়েছে?
নাজমুল হাসান : ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর আমার প্রথম ছবি প্রদর্শনী হয়। আমার বেশিরভাগ প্রদর্শনী হয় ঢাকার দৃক গ্যালারীতে। তাছাড়া শিল্পকলা একাডেমী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আইইউটি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা, কুমিল্লা, কক্সবাজার, বগুড়া, বরিশালেও ছবি প্রদর্শিত হয়।

বিবার্তা : ফটোগ্রাফি জীবনে কোন পুরস্কার...
নাজমুল হাসান : ছোটখাট কয়েকটা পেয়েছি৷ প্রথম পুরস্কার ৭১পিক্স থেকে আয়োজিত একটি প্রতিযোগিতা থেকে ১ম হয়েছিলাম, তারপর ‘প্রজেক্ট বী’ কর্তৃক আয়োজিত একটি প্রদর্শনীতে প্রথম হই, ‘এক্সপ্লোর দ্যা ওয়াল্ড’ শিরোনামের একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অনারেবল ম্যানশন, ‘রুল দ্যা সাটার’ শিরোনামের একটি প্রদর্শনীতে ৩য়, আরএলসি কর্তৃক আয়োজিত একটি প্রদর্শনীতে প্রথম, ‘থার্ড আই’ কর্তৃক আয়োজিত ২টি প্রতিযোগিতা থেকে ২য় ও ৩য় হই৷ তাছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছি৷ 
 
বিবার্তা : জীবনে এমন কোন ছবি তুলেছেন যার জন্য অনেক  চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে? 
নাজমুল হাসান : ঈদের আগের রাতে এয়ারপোর্ট রেল স্টেশনে ছবি তুলতে গিয়েছিলাম৷ তুলতে তুলতে নির্জন একটা জায়গায় চলে গিয়েছিলাম, তখন কয়েকজন এসে ক্যামেরার দাম ও বিক্রি করে কত টাকা পাওয়া যাবে জিজ্ঞাসা করল৷ আমি তো ভয়ে শেষ, বুঝলাম আজকে আমার ক্যামেরা শেষ। ঠিক তখনই কয়েকজন পুলিশ হেঁটে যাচ্ছিল এবং আমি জোরে তাদেরকে ডাকলাম এবং সাথে সাথেই লোকগুলো দৌড়ে চলে গেল৷ কিন্তু সেখান থেকে ট্রেনের একটা পছন্দের ছবি তুলেছিলাম৷

প্রতিবেদনটি বিবার্তায় প্রকাশ হয়েছে।
 
 

Leave Your Comments