সাজেদুর রহমান। উদীয়মান ফটোগ্রাফার। বড় ফটোসাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছা মনে। বিশ্বের নামিদামি বার্তাসংস্থা যেমন, এপি, এফপি, রয়টার্স, আলজাজিরা, সিএনএন, সিনহুয়ায় কাজ করার ইচ্ছে তার। তাই শৈশব থেকেই বিভিন্ন বিষয়ের ছবি তুলতেন। সময়ের ব্যবধানে ছবি তোলাটাই তার হয়ে গেছে নেশা। এভাবেই ফটোগ্রাফিতে যাত্রা শুরু তার। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফি ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাজেদুর বর্তমানে এসআর ফটোগ্রাফির প্রধান ফটোগ্রাফা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রংপুরের কোতোয়ালি থানার মুন্সিপাড়ায় জন্ম সাজেদুর রহমানের। শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের দিনগুলি কেটেছে মুন্সিপাড়ায়। বাবা (মৃত) সোহরাব হোসেন। মাতা নাজমা বেগম। বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সেনাবাহিনীতে চাকুরি করতেন। মা গৃহিনী। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট তিনি। বড় ভাই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে সিনিয়র রসায়নবিদ এবং মেজো ভাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত । ২০১০ সালে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বর্তমানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়ালেখা করছেন সাজেদুর।
বিবার্তা’র আয়োজনে গত সপ্তাহে ৭১পিক্স 'ফটো অব দ্যা উইক' প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সেরা হয়েছেন সাজেদুর। তরুণ এই ফটোসাংবাদিক সম্প্রতি মুখোমুখি হন বিবার্তার। জানান নিজের ফটোগ্রাফি জীবনের গল্প। সেই গল্প পাঠকদের জানাচ্ছেন বিবার্তা২৪ডটনেটের নিজস্ব প্রতিবেদক উজ্জ্বল এ গমেজ।
বিবার্তা : বিবার্তা-৭১পিক্স ফটো অব দ্য উইক প্রতিযোগিতায় আপনি বিজয়ী হয়েছেন। আপনাকে অভিনন্দন।
সাজেদুর রহমান : ফটোগ্রাফি করা আমার শখ। সেই শখের ফটোগ্রাফির যে প্রাপ্তি তা সত্যিই অনেক ভালো লাগার। এই ভাললাগাটা শুধুই অনুভবের, এটা লিখে বা বলে প্রকাশ করার মতো উপযুক্ত শব্দও খুঁজে পাচ্ছি না। শুধু এইটুকুই বলতে চাই, এই স্বীকৃতি আমাকে আরো ভালো ছবি তোলার জন্য উৎসাহ যোগাবে।
বিবার্তা : আপনার নির্বাচিত ছবিটির পেছনের কথা জানতে চাই।
সাজেদুর : প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। বাসার বাইরে যেতে পারছিলাম না। সারাদিন রুমে শুয়ে-বসে থাকতে খুব বিরক্ত লাগছিলো। হঠাৎ আমার ছোট ভাতিজি ছাদে যাওয়ার জন্য খুব বায়না ধরলো। বৃষ্টি কিছুটা কমার পর তাকে নিয়ে ছাদে গেলাম। আর তার দুষ্টুমিগুলো ক্যামেরাবন্দী করতে থাকলাম। আর তখনই এই সুন্দর ছবিটি পেলাম। তাই তো বলতেই হয়, জলের কোলে ফুলের পরশ এই তো ছিল বেশ, পৃথিবী মাটির সুগন্ধ নিলেও সব হবে না শেষ...।
বিবার্তা : মনে হচ্ছে ছবি তোলার হবিটা আপনার আরো আগে থেকেই . . .
সাজেদুর : ২০০৪ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে থাকা অবস্থাতেই খুব ছবি তুলতাম। আমার প্রথম ক্যামেরাটি ছিল Yashica MS-2 super। বলতে গেলে ছবি তোলার শুরুটা এক প্রকার শখ থেকেই। আমার প্রথম ক্যামেরাটি ছিল আমার খালুর দেওয়া উপহার। সেই যন্ত্রটির ব্যাপারে কৌতূহল মেটাতে গিয়েই ছবি তোলাটা এক প্রকার শখে পরিণত হলো।
বিবার্তা : সেই শখটাই পরে আপনার জীবনের সঙ্গে মিশে গেলো?
সাজেদুর : ছোটবেলায় ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা ছিল। তবে মনে হচ্ছে কাজটি আমার দ্বারা সম্ভব হতো না। পেশার কথা বলতে হলে আমি বলবো, আসলে পেশা ও নেশা এই দুটি বিষয় একই। আর আমি ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে নেইনি এখনও, ফটোগ্রাফি আমার নেশা। তবে ভবিষ্যতে অনেক বড় ফটোজার্নালিস্ট হওয়ার ইচ্ছা আছে।
বিবার্তা : ভালো ফটোগ্রাফার হওয়ার জন্য আসলে কী দরকার- দামি ক্যামেরা নাকি অন্য কিছু?
সাজেদুর : কেউ যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা-গল্প-উপন্যাস পড়েন, তখন কেউ কি ভাবেন তিনি কত দামি কলম দিয়ে গল্পটি লিখেছেন! একইভাবে আমি বলতে চাই কত দামি ক্যামেরা বা লেন্স দিয়ে ছবি তুললেন সেটার চেয়ে বড় বিষয় হল আপনার ছবি কি কথা বলে, কি ম্যাসেজ দেয়। শুধু বড় লেন্স, দামি ক্যামেরা নিয়ে ঘুরলেই যে কেউ ফটোগ্রাফার হয়ে গেল, বিষয়টা এমন না। ভালো মানসম্পন্ন ছবি তুলতে হবে, ছবির বিষয়বস্তু হতে হবে অর্থপূর্ণ। আর ভালো ছবি তোলার জন্য সবসময় এক্সপেরিমেন্ট করা জরুরি। অনেক ছবি তুলতে হবে, ছবির ব্যাকরণ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। ভালো ফটোগ্রাফারদের প্রসিদ্ধ ছবিগুলো দেখতে হবে এবং ছবির কারিগরি ও শৈল্পিক কলাকৌশল বোঝার চেষ্টা করতে হবে। আসলে খুব সহজে একজন ভালো ফটোগ্রাফার হওয়া যায় না। ভালো ফটোগ্রাফার হওয়ার শর্টকাট কোনো রাস্তা নেই। ধৈর্য, আগ্রহ ও চেষ্টার সমন্বয়েই সম্ভব ভালো ছবি তোলা। ভালো ফটোগ্রাফার হতে সময় লাগে। একজন ভালো ফটোগ্রাফার হতে গেলে আগে তাকে ভাল মানুষ হতে হবে।
বিবার্তা : তাহলে একজন ফটোগ্রাফার হতে হলে কী কী বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হয়?
সাজেদুর : একজন ফটোগ্রাফাররকে ছবি তোলার আগে অনেক বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। যেমন, ফটোগ্রাফিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ‘আলো’। ফটোগ্রাফি মানেই আলোর খেলা। তাই ছবির দৃশ্যে প্রথমেই আলোর উৎস, পরিমাণ, প্রতিফলন ইত্যাদি নিয়ে ভাবতে হবে। Exposure সেটিং-এ ISO যত কম রাখা যায় ততই ভালো। বেশি ISO ছবিতে নয়েজ সৃষ্টি করে। ছবি তোলার আগে সাবজেক্ট, আলো, ব্যাকগ্রাউন্ড, ভিউ অফ অ্যাঙ্গেল, এক্সপোজার খেয়াল করতে হবে। সম্ভব হলে সময় নিয়ে দৃশ্য ও সাবজেক্টের অনুকূলে ক্যামেরার ফিচার ও কম্পোজার সেটিং করে নিতে হবে। সাবজেক্টের ব্যাকগ্রাউন্ড যতটুকু সম্ভব প্লেইন রাখার চেষ্টা করতে হবে। আর কালার সাবজেক্টের কালারের চেয়ে যেন উজ্জ্বল না হয়।
বিবার্তা : ফটোগ্রাফি করতে গিয়ে নিশ্চয়ই অনেক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন। তেমন মজার কোনো ঘটনার কথা কি বলবেন?
সাজেদুর : একবার ছবি তুলতে দূরে কোথাও গিয়েছিলাম। ছবি তুলতে গিয়ে দেখলাম, আমি ক্যামেরার ব্যাটারি নিয়ে বের হইনি। সেদিন বন্ধুরা আমাকে নিয়ে খুব হাসাহাসি করেছিল। আমি আর কি করবো, আমিও যোগ দিয়েছিলাম তাদের হাসিতে।
প্রতিবেদনটি বিবার্তায় প্রকাশ হয়েছে।