প্রযুক্তি, কন্টেন্ট, বাজার উন্নয়ন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে গণমাধ্যমগুলোকে বিনিয়োগ বাড়ানোসহ আইওটি ব্যবহার করে টিআরপির ডিজিটাল রূপান্তর ও উন্মুক্ত করা এবং টেকসই গণমাধ্যম ব্যবসায় মডেল তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বক্তারা। তবে সব ছাপিয়ে ‘ওটিটি খসড়া আইন ২০২১’ নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে টানাটানির অবসান করে অবিলম্বে এই মাধ্যমটিকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দিয়ে গণমানুষের মুখপাত্র হয়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। তাই প্রযুক্তির এই অভ্যুত্থানে বাংলাদেশকে আর পিছিয়ে রাখা উচিত নয় বলে জানান তারা।
শনিবার রাজধানীর পান্থপথে পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত ‘মানুষের পক্ষে ব্রডকাস্ট মিডিয়া: মিডিয়া সংস্কার’ আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন খাত সংশ্লিষ্টরা বক্তারা।
বৈঠকে টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব, ওটিটি এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মসহ বাংলাদেশের সম্প্রচার ও ভিজ্যুয়াল মিডিয়া সেক্টরে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর দৃষ্টি আরোপ করেন অ্যাকাডেমিক বিশেষজ্ঞ, অ্যাকটিভিস্ট, মিডিয়া সাংবাদিক এবং প্রযোজক, বিজ্ঞাপনদাতা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সার, এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এদের মধ্যে পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ খ ম হারুন, চ্যানেল ২৪ এর নির্বাহী সম্পাদক তালাত মামুন, প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ফাহিম মাশরুর, দৈনিক প্রথম আলো’র ডিজিটাল বিজনেস হেড জাবেদ সুলতান পিয়াস, ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের হেড অব মার্কেটিং তাজদীন হাসান; বঙ্গবিডি ওটিট’র হেড অব কন্টেন্ট মো. আলী হায়দার, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আাব্দুর নূর তুষার, সিনিয়র সাংবাদিক আশরাফ কায়সার; এটেক অস্ট্রেলিয়া কান্ট্রি ডিরেক্টর শুভাশীষ ভৌমিক, রিসার্চ অ্যান্ড ক্লায়েন্ট সার্ভিসেস ডিরেক্টর শাহরিয়ার নাসির খান, সোমরা-এম বি এল লিমিটেড, মুনাফ মজিব চৌধুরী, অধ্যাপক এম রাশেদ চৌধুরী, সমাজ বিজ্ঞানী সামিনা লুৎফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সালমা ফেরদৌস, ইউল্যাব শিক্ষক সৈয়দা সাহদীয়া মেহজাবীন, মার্ভেল কো-ফাউণ্ডার, বৃতি সাবরিন প্রমুখ আলোচনায় বক্তব্য দেন।
প্রযুক্তি, কন্টেন্ট, বাজার উন্নয়ন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে গণমাধ্যমগুলোকে বিনিয়োগ বাড়ানোসহ আইওটি ব্যবহার করে টিআরপির ডিজিটাল রূপান্তর ও উন্মুক্ত করা এবং টেকসই গণমাধ্যম ব্যবসায় মডেল তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বক্তারা। তবে সব ছাপিয়ে ‘ওটিটি খসড়া আইন ২০২১’ নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে টানাটানির অবসান করে অবিলম্বে এই মাধ্যমটিকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দিয়ে গণমানুষের মুখপাত্র হয়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। তাই প্রযুক্তির এই অভ্যুত্থানে বাংলাদেশকে আর পিছিয়ে রাখা উচিত নয় বলে জানান তারা।
বক্তারা জানান, দেশে সোয়া কোটি ক্যাবল সাবসক্রিপশন আছে। গড়ে ৪০০ টাকা হিসেবে দেশে সম্প্রচারে থাকা ৪০টি চ্যানেলের মধ্যে প্রতিটির গড়ে এক টাকা করে পেলেও মাসে একেকটি চ্যানেলের আয় হওয়ার কথা সোয়া কোটি টাকা। এই টাকা দিয়ে অর্ধেক চ্যানেলের খরচ উঠিয়ে নেয়া সম্ভব হলেও ক্যাবল অপারেটররা চর দখলের মতো পট পরিবর্তনের সঙ্গে এই ব্যবসায় দখল করেন। ফলে ডিজিটাল সংযোগ বা টাপ বক্স স্থাপনে ২০১৯ সালে উদ্যোগ নেয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। সব মিলিয়ে প্রভাবশালীরাই দেশে পে চ্যানেল চান না। সঙ্গত কারণেই দেশে কোনো ক্লাসিক বিজনেস মডেল নেই। ফলে এখানে মধ্যসত্বভোগীরাই খেলা করছে। বিজ্ঞাপনী সংস্থা-চ্যানেল মালিকদের মধ্যে অদৃশ্য জোট তৈরি সঙ্গে সরকারি হস্তক্ষেপে প্রভাশালীরাই এখানে রোল পে করেন। চারটি চ্যানেলই এই খাতের আয়ের ৫০ শতাংশ নিয়ে নেয়।
বক্তারা আরও জানান, দেশের অর্ধ বিলিয়ন ডলারের বিজ্ঞাপনের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা। এই সংস্থাটির সঙ্গে রয়েছে দেশের তিনটি মোবাইল অপারেটর এবং ১০ বহুজাতিক কোম্পানি। এরাই গণমাধ্যমের মাফিয়া। সুশীল হিসেবে পরিচিতদের এই কাণ্ডে টেলিভিশন চ্যানেল কোনো দিন লাভের মুখ দেখবে না। তারা অনলাইন থেকে নিউজ নামিয়ে ফেলে। সম্পাদকীয় নীতিতে বাধা সৃষ্টি করে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নষ্ট ফল বিক্রির রেওয়াজ শুরু হয়েছে ইউটিউব, ফেসবুক ও অনলাইনের ভিউ বা ক্লিকবেটের খপ্পড়। ফলে কন্টেন্টের মান বাড়ছে না। নতজানু থাকছে। এই খাতের ব্যবসায় বিকশিত হচ্ছে না। এই স্থান থেকে বেরিয়ে আসতে গণমাধ্যমগুলোকে চাপ সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সম্প্রচার কমিশন করে একাধিক রেটিং ব্যবস্থাপনা এবং বিজ্ঞাপন প্রদান নীতিমালা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে হায়দারাবাদ বা দিল্লীর দারস্থ হওয়া বন্ধ করে প্রযুক্তি ব্যবহারের অধিকার উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
বাংলাদেশ নেক্সট সমন্বয়ক জীশান কিংশুক হকের সংঞ্চালনায় সভায় গণমাধ্যম বনাম প্রচার মাধ্যম নিয়ে একটি কি-নোট উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম। উপস্থাপনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সংবাদ মাধ্যমগুলো ওয়াচ ডকের জায়গা থেকে কীভাবে করপোরেট প্রচারমাধ্যম হয়ে ওঠে তা তুলে ধরেন তিনি।
এতে দেখানো হয়, মিডিয়া সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব এবং ওটিটি কীভাবে টেলিভিশনকে পেছনে ফেলেছে। পুঁজি, প্রযুক্তি এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর আলোকপাত করে ‘প্রজিউমাররাই’ এখন নিউ মিডিয়া পরিচালনা করছে। বিগত সময়ে প্রেসকনফারেন্স কীভাবে প্রেইজ কনফারেন্সে পরিণত হয়। এমন নানা বাস্তব সমস্য ও সমাধানের রূপরেখাও উঠে আসে এই উপস্থাপনায়।