দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের আশার আলো দিবে সামিউল ইসলামের এআই-ভিত্তিক অ্যাপ ‘দূরবিন’

প্রকাশ: মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪ রিপোর্ট
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

‘দূরবিন’ বাংলাদেশের তৈরি একটি এআই-ভিত্তিক ইমেজ ও ভিডিও প্রসেসিং অ্যাপ। এটি বিশেষভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও অল্পদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য সহায়ক হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। অ্যাপটি তাদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা, পরিবেশ বুঝতে পারা ও দৈনন্দিন কাজ সহজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে স্বাধীন চলাচলের সুযোগ করে দিয়ে তাদের দৈনন্দিন কাজে ভরসাযোগ্য ডিজিটাল সহায়তা তৈরি করা এবং সমাজে অন্তর্ভুক্তি ও মর্যাদা নিশ্চিত করাই এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য। এই উদ্যোগটি  কেবল প্রযুক্তিনির্ভর একটি অ্যাপ নয়, এটি একটি সামাজিক প্রভাব বিস্তারকারী উদ্যোগ। এটি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষদের জীবনের মানোন্নয়ন ও স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্র (আইআইসি)-এর তত্ত্বাবধানে, আইসিটি ডিভিশনের ইডিজিই  প্রকল্পের অধীনে উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করেছেন আইসিটি বিভাগের আওতাধীন আইডিয়া প্রকল্পের পোর্টফোলিও স্টার্টআপ জেটটেক-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম। বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছে আইসিটি বিভাগের অধীনস্থ বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)।

মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম জানিয়েছেন ‘দূরবিন’ উদ্যোগটির তৈরির কার্যক্রম শেষ হয়েছে। দেশজুড়ে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়নি।

বাংলাদেশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর সহায়ক হাতিয়ার ‘দূরবিন’
দূরবিন হলো একটি এআই-ভিত্তিক ইমেজ প্রসেসিং অ্যাপ। এটি রিয়েল-টাইমে চারপাশের চিত্র ব্যাখ্যা করতে পারে, যা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও অল্পদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যবহারকারীদের স্বাধীন ও নিরাপদভাবে চলাফেরায় সহায়তা করতে সক্ষম।

দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি  ‘দূরবিন’ অ্যাপের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
এআই-চালিত বর্ণনামূলক ভয়েস  
ব্যবহারকারীর চারপাশে যা ঘটছে বা যা দৃশ্যমান, তা অ্যাপটি ক্যামেরার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শব্দের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। যেমন, সামনে চেয়ার বা গাছ রয়েছে, আশপাশে লোকজন আছে কি না, কোনো রাস্তা, দেয়াল বা রাস্তায় চলন্ত যানবাহন ও এটি রিয়েল-টাইম ভিজ্যুয়াল ইন্টারপ্রিটেশন প্রদান করে।

মুদ্রা শনাক্তকরণ  
বাংলাদেশি টাকার বিভিন্ন নোট এবং কয়েন শনাক্ত করে তা শব্দে জানায়, যাতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি আর্থিক লেনদেনের সময় স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন।

ছাপা লেখা ও টেক্সট পড়া
অ্র্যাপটি ওসিআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছবি বা কাগজে থাকা লেখাকে স্ক্যান করে পড়ে শোনায়। এতে ওষুধের মোড়ক, রেসিপি, ইনস্ট্রাকশন বুক ইত্যাদি পড়তে পারা যায়। বিদ্যালয়ে বা অফিসে নথিপত্র ব্যবহারে সহায়তা পাওয়া যায়।

বস্তু ও প্রতিবন্ধকতা শনাক্তকরণ  
কোনো জিনিস সামনে আছে কি না, যেমন, চেয়ার, দেয়াল, ব্যাগ, গর্ত তা শনাক্ত করে ব্যবহারকারীকে শব্দের মাধ্যমে সাবধান করে।

রিয়েল-টাইম গাইডেন্স (এই উপকরণটি/ম্যাপিং প্রক্রিয়াধীন আছে)  
‘দূরবিন’ ব্যবহারকারীকে চলার পথে গাইড করতে পারে।যেমন, বাঁদিকে ঘুরতে বলবে, সামনে বাধা আছে বলে সতর্ক করবে। 

‘দূরবিন’ এর রয়েছে আরও বহুমাত্রিক ব্যবহার। এটি কেবল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য নয়। এটি বিভিন্ন সরকারি ও নাগরিক সেবায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। যেমন-

>> আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য: ফেসিয়াল রিকগনিশন ও নজরদারি বিশ্লেষণ করতে সক্ষম।

>> ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে: নম্বর প্লেট শনাক্তকরণ ও দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করতে পারে।

>> ইমিগ্রেশন ও সীমান্ত নিরাপত্তায়: স্মার্ট আইডি যাচাইয়ের কাজ করতে পারে।

>> ব্যাংকিং অ্যাক্সেসিবিলিটি: ভয়েস-গাইডেড লেনদেনে সাহায্য করতে পারে।

>> কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষা: চিত্রভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (ভিজ্যুয়াল এআই) সেবা দিতে পারে।

গত ২৩ জুলাই তরুণ উদ্ভাবকদের উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে টেলিকম ও ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা ২০২৫। মেলায় দেশের বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, উদ্ভাবক দল, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের উদ্ভাবনী ধারণা, প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান ও গবেষণালব্ধ ৩২টি আইডিয়া তুলে ধরে। দেশের শীর্ষ ২০ উদ্ভাবনের মধ্যে একটি স্থান লাভ করে ‘দূরবিন’।

তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম বলেন, ‘দূরবিন’ শুধু একটি উদ্যোগ নয়, এটি বাংলাদেশের তৈরি একটি প্রযুক্তি-উদ্ভাবন। বাংলাদেশের নাগরিক উদ্ভাবন খাতে এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এটি বাংলাদেশের সমন্বিত ও বুদ্ধিদীপ্ত ডিজিটাল রূপান্তর লক্ষ্য পূরণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।এর লক্ষ্য প্রযুক্তিকে সহায়ক, কার্যকর এবং সমাজের প্রয়োজনের সঙ্গে মানানসই করে গড়ে তোলা। এই উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে বৈষম্য কমানো এবং সবার জন্য উপযোগী পরিকাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে সময়োপযোগী এই উদ্ভাবন করতে পেরে ভাল লাগছে। দেশে অসংখ্য দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ভাই-বোনরা আছেন, যারা টাকার অভাবে সুন্দর ভাবে জীবনযাপন করেত পারছেন না, তাই এই অ্যাপ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামুল্লে সরবরাহ করাহবে। তাদের জীবনের মৌলিক প্রয়োজনগুলো এই অ্যাপ মেটাতে সক্ষম হবে বলে আমার বিশ্বাস। তাদের প্রতিদিনকার জীবনের চলার পথে সমস্যাগুলো সমাধান করলে আমাদের এই উদ্যোগ স্বার্থক হবে।

image

আপনার মতামত দিন