সর্বকালের সেরা ১০ ফুটবলার: আইএফএফএইচএসের বিতর্কিত তালিকা

প্রকাশ: সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
 ফুটবলের ইতিহাসে ‘সর্বকালের সেরা ফুটবলার’ কে? এই প্রশ্নের নির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই। যুগে যুগে পেলে, ম্যারাডোনা, মেসি, রোনালদো-প্রত্যেকে কখনো না কখনো এই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উঠে এসেছেন। কিন্তু একজনকেই সেরা বলা কঠিন, কারণ প্রতিটি প্রজন্মের রয়েছে নিজস্ব ফুটবল-সংস্কৃতি, পরিসংখ্যান ও আবেগ।

তবে সম্প্রতি ফুটবল ইতিহাস সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের জন্য স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফুটবল হিস্টরি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকস (আইএফএফএইচএস) তাদের নিজস্ব বিচারে প্রকাশ করেছে সর্বকালের সেরা ১০ ফুটবলারের তালিকা। এতে শীর্ষে আছেন লিওনেল মেসি। তালিকা ঘিরে শুরু হয়েছে তর্ক-বিতর্ক, প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন পেলে, ম্যারাডোনা বা রোনালদোর ভক্তরা।
 
আইএফএফএইচএস কে?

আইএফএফএইচএস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৪ সালে, জার্মানির কেমিস্ট ও ক্রীড়া-ইতিহাসবিদ আলফ্রেড পোগে–এর উদ্যোগে। বিশ্বজুড়ে ২১১টি ফুটবল খেলা দেশের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে সংস্থাটিতে। যদিও এটি ফিফার অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে ফিফা মাঝে মধ্যেই আইএফএফএইচএসের দেওয়া রেকর্ড ও পুরস্কারকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে।

প্রতিবছর এই সংস্থা সেরা খেলোয়াড়, কোচ, রেফারি, গোলকিপারসহ বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার দিয়ে থাকে। এবার তারা প্রথমবারের মতো তৈরি করেছে সর্বকালের সেরা ১০ ফুটবলারের তালিকা, যেখানে দলীয় ও ব্যক্তিগত পরিসংখ্যান ছিল মূল বিবেচ্য।

আইএফএফএইচএস কীভাবে সর্বকালের সেরা ১০ ফুটবলার বেছে নিয়েছে, সেটা অবশ্য ব্যাখ্যা করেনি। তবে যেহেতু পরিসংখ্যান নিয়েই মূলত তাদের কাজকারবার, ধারণা করা যায়, পরিসংখ্যানই এখানে প্রধান বিবেচ্য ছিল। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কাও জানিয়েছে, আইএফএফএইচএস সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের এই তালিকা প্রস্তুত করেছে খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত ও দলীয় পরিসংখ্যান ও অর্জনের নিরিখে।

শীর্ষে থাকা মেসির দলগত শিরোপা ৪৬টি। বার্সেলোনার হয়ে জিতেছেন ৩৫টি, পিএসজির হয়ে তিনটি, ইন্টার মায়ামির হয়ে দুটি ও ছয়টি শিরোপা জিতেছেন আর্জেন্টিনার হয়ে। এর বাইরে আছে আটটি ব্যালন ডি’অর, ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু, ফিফা বিশ্বকাপ গোল্ডেন বল, কোপা আমেরিকা গোল্ডেন বল...। দলীয় ও ব্যক্তিগত ট্রফি বিচারে মেসিই ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল।

দ্বিতীয় পেলের শিরোপাসংখ্যা মেসির তুলনায় বেশ কম। মার্কা ২০২২ সালে পেলের মৃত্যুর পর প্রকাশ করা প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ক্যারিয়ারে ২৯টি শিরোপা জিতেছেন পেলে। তবে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তির চেয়ে বেশি বিশ্বকাপ (তিনটি) কেউ জিততে পারেনি। পেলে যখন খেলতেন তখন ব্যালন ডি’অর শুধু ইউরোপিয়ানদের দেওয়া হতো। তবে ব্যালন ডি’অর যারা দেয়, সেই ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকী ২০১৫ তাদের এক বিশেষ সংস্করনে জানিয়েছিল, পেলে তাঁর ক্যারিয়ারে সাতবার ব্যালন ডি’অর পেতে পারতেন।

আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ও ’৮৬ বিশ্বকাপের মহানায়ক ডিয়েগো ম্যারাডোনা তালিকায় তৃতীয়। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ১১টি শিরোপা জিতেছেন কিংবদন্তি। শিরোপাসংখ্যায় পিছিয়ে থেকেও তৃতীয় স্থানে ম্যারাডোনাকে বেছে নেওয়ার কারণ সম্ভবত খেলাটিতে তাঁর প্রভাব। প্রায় একাই দেশকে বিশ্বকাপ জেতানো, একাই নাপোলির মতো ক্লাবকে বিশ্বসেরাদের কাতারে তুলে আনা-এসব অবদানের জন্যও ম্যারাডোনা অবিস্মরণীয়।

মার্কা জানিয়েছে, রোনালদোর চতুর্থ স্থান নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। কারণ, ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে রোনালদোই ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা (৯৩৫)। দলগতভাবে শিরোপাও জিতেছেন ৩৫টি। এর ব্যাখ্যায় সম্ভবত উঠে আসবে বিশ্বকাপ জিততে না পারা। সর্বকালের সেরায় শীর্ষ তিনজনই বিশ্বকাপ জিতেছেন নিজ নিজ দেশের হয়ে, যেটা রোনালদো এখনো পারেননি। তবে পর্তুগালকে ইউরো জিতিয়ে ইউরোপসেরা হয়েছেন রোনালদো।

পাঁচে থাকা ইয়োহান ক্রুইফের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে তবে উল্টোভাবে। ‘টোটাল ফুটবল’ এর প্রতিভূ ডাচদের বিশ্বকাপ জেতাতে পারেননি কিন্তু আন্তর্জাতিক ও ক্লাব ফুটবলে তাঁর প্রভাব ও অবদান অসামান্য। সত্তর দশকে আয়াক্সকে টানা তিনবার ইউরোপসেরা বানানো এবং ক্লাবটিকে বিশ্বসেরাদের কাতারে তুলে আনার পাশাপাশি ফুটবলের কৌশলেও অবিস্মরণীয় অবদান ’৭৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা ক্রুইফের। ছয়ে থাকা রোনালদো নাজারিও ব্রাজিলের হয়ে দুবার বিশ্বকাপ জিতলেও চ্যাম্পিয়নস লিগের পদক নেই তাঁর।

সপ্তম জিদান অবশ্য ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি চ্যাম্পিয়নস লিগও জিতেছেন রিয়ালের হয়ে। আটে থাকা ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, নবম আলফ্রেড ডি স্টেফানো ও দশম রোনালদিনিওর সাফল্যের চেয়ে প্রভাবটা বেশি বিবেচনা করা হয়েছে সম্ভবত। ‘কাইজার’খ্যাত বেকেনবাওয়ার তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন। বায়ার্ন মিউনিখকেও এনে দিয়েছেন টানা তিনবার ইউরোসেরার মুকুট। তবে এসব সাফল্যের পাশাপাশি ফুটবলের রক্ষণভাগে ‘লিবেরো’ পজিশনে তাঁর বিপ্লব ঘটানোও সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া ও স্পেনের হয়ে খেলা ডি স্টেফানোর আন্তর্জাতিক শিরোপা বলতে শুধু ১৯৪৭ কোপা আমেরিকা জয়। রিয়ালের হয়ে জিতেছেন টানা পাঁচবার ইউরোপিয়ান কাপ।

ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ ও বার্সেলোনার হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী রোনালদিনিওর চেয়েও শিরোপা জয়ের সংখ্যায় এগিয়ে থাকা ফুটবলার আছেন। কিন্তু পরিসংখ্যানের একটি পাতায় রোনালদিনিও অনন্য। একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছেন বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা, কনফেডারেশনস কাপ, চ্যাম্পিয়নস লিগ ও কোপা লিবার্তোদোরেস ও ব্যালন ডি’অর। মানে দেশের হয়ে বিশ্ব জয়ের মুকুটের পাশাপাশি মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা, আন্তমহাদেশীয় শিরোপা, ক্লাব ফুটবলে দুই মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা এবং ব্যক্তিগত সেরার শিরোপা জিতেছেন। এর বাইরে তাঁর আরেকটি প্রভাবও অনন্য। মাঠে রোনালদিনিও যে আনন্দ নিয়ে খেলেছেন এবং দর্শকদের যেভাবে আনন্দ দিয়েছেন সেটা অবিস্মরণীয়। বল পায়ে মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন ‘গাউচো’।

আইএফএফএইচএসের সর্বকালের সেরার এই তালিকায় আর্জেন্টাইন ও ব্রাজিলিয়ান তিনজন করে। জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও পর্তুগাল থেকে একজন করে ঠাঁই পেয়েছেন। বিশ্বকাপজয়ী আছেন সাতজন।

image

আপনার মতামত দিন