দেশে মোবাইলে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) মাধ্যমে জানুয়ারি মাসে এক মাসে ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। যা দৈনিক হিসাবে ৫ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। বিকাশ, নগদ ও রকেটের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) এসব লেনদেন হয়েছে।
মুঠোফোনে রিচার্জ; বিভিন্ন কেনাকাটা, হোটেল–রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়া ও পরিষেবার বিল পরিশোধ, টিকিট ক্রয় ইত্যাদি। পাশাপাশি এখন অর্থ স্থানান্তর, প্রবাসী আয় গ্রহণ, সরকারি ভাতা ও বৃত্তি বিতরণ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-বোনাস প্রদান এবং ব্যবসায়িক লেনদেনের বড় মাধ্যম হয়ে উঠছে এসব সেবা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত জানুয়ারিতে এসব সেবায় লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। এর আগের মাস ডিসেম্বরে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। এর আগে ২০২২ সালের এপ্রিলে এসব সেবায় প্রথমবারের মতো লেনদেন এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর ২০২৪ সালের মার্চে তা দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়ায়।
জানুয়ারিতে এমএফএস-সেবায় সব মিলিয়ে গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৯৩ লাখ ২৯৯। এর মধ্যে সক্রিয় হিসাব ৮ কোটি ৮৫ লাখ। একজন ব্যক্তি একাধিক সেবা ব্যবহার করতে পারেন, তাই প্রকৃত হিসাবধারী ঠিক কতজন, তা অবশ্য জানা যায়নি। গ্রাহকসেবা দিতে সারা দেশে এজেন্ট রয়েছে ১৮ লাখ ৪১ হাজার ৯৭৯টি।
জানুয়ারিতে লেনদেনের মধ্যে টাকা জমা হয়েছে ৪৮ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা এবং উত্তোলন হয়েছে ৫৫ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। গ্রাহকেরা একে অপরকে পাঠিয়েছেন ৪৪ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। কেনাকাটায় খরচ হয়েছে ৮ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা, সরকারি ভাতা দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ১৮ কোটি টাকা, বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া মুঠোফোনে রিচার্জ করা হয়েছে ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকা ও পরিষেবা বিল দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে এ সেবায় সব মিলিয়ে ৭২ কোটি ১৮ লাখ বার লেনদেন হয়েছে।
এমএফএস-সেবার শীর্ষে রয়েছে বিকাশ। তাদের নিবন্ধিত গ্রাহকসংখ্যা প্রায় আট কোটি। বিকাশে দিনে লেনদেন হয় প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। বিকাশের করপোরেট কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, দেশের মানুষের মধ্যে মুঠোফোনে লেনদেনে অভ্যস্ততা তৈরি হচ্ছে এবং আস্থা বাড়ছে। এখন সাধারণ গ্রাহকদের লেনদেনের পাশাপাশি প্রবাসী আয় গ্রহণ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হিসাবেও ভালো লেনদেন হচ্ছে। কার্যকর ইকোসিস্টেম তৈরির মাধ্যমে মুঠোফোনে লেনদেনের পরিসর আরও শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে বিকাশ।
এ সেবায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে নগদ। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দৈনিক লেনদেন ইতিমধ্যে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ সেবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে চালু হলেও এখন শহরে বসবাসকারী নাগরিকেরাও এর বড় ব্যবহারকারী। এ সেবা এখন শুধু টাকা পাঠানো ও গ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিল পরিশোধ, কেনাকাটা, মুঠোফোনে রিচার্জ, টাকা জমানো, ঋণ গ্রহণসহ নানা ধরনের লেনদেনে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে উৎসবে-পার্বণে এসব সেবার ব্যবহার ১৫–২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। ফলে রোজা ও ঈদ উপলক্ষে চলতি মাসে লেনদেনে বড় উল্লম্ফন ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আবার অনেক বড় শিল্পগোষ্ঠী তাদের শ্রমিকের বেতন দিচ্ছে এমএফএসের মাধ্যমে। শুধু তা-ই নয়, সরকারি ভাতা, বৃত্তি, কেনাকাটা, পরিষেবা বিল পরিশোধ সবই করা যাচ্ছে এমএফসের মাধ্যমে। আবার ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ ও আদায় এবং বিদেশি সংস্থার তহবিল বিতরণও হচ্ছে এসব সেবার মাধ্যমে।
বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত ও ডাক বিভাগের সেবা নগদসহ দেশে এখন এমএফএস প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৩টি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়, এমক্যাশ, মাইক্যাশ, ট্যাপ প্রভৃতি।