যেসব ব্যাংকে করা যাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম  

প্রকাশ: শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png নিজস্ব প্রতিবেদক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

দুই বছর আগে সরকার চালু করে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। এর লক্ষ্য হলো সব শ্রেণির মানুষের জন্য অবসর জীবনে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই স্কিমটি ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। কর্মজীবনের আয় থেকে একটি ক্ষুদ্র অংশ নিয়মিত সঞ্চয় করলেই অবসরের পর নিশ্চিত আয় পাওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে।

বর্তমানে ২৪টি ব্যাংকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম করা যায়। শিগগিরই আরও ১৭টি ব্যাংকে এই পেনশন স্কিম করার সুযোগ আসছে।

সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিন মাসের ব্যবধানে আরও ১৭টি ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত ১৫ মে এমওইউ করা হয়েছিল ১২টি ব্যাংকের ব্যাংকে। এ নিয়ে এমওইউ করা মোট ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়াল ৪১-এ। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গতকাল পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৬ হাজার গ্রাহক হয়েছে বলে জানান তিনি।

কোন কোন ব্যাংকে স্কিম করা যাবে
বর্তমানে ২৪ ব্যাংকে গিয়ে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি করা যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আইএফআইসি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক।

এসব ব্যাংক সর্বজনীন পেনশনের সব কর্মসূচির নিবন্ধনকাজে সহায়তা করবে এবং চাঁদাও গ্রহণ করবে। ব্যাংকগুলোর শাখা ব্যবস্থাপকেরা এ কাজে সহায়তা করবেন। ব্যাংকের নির্ধারিত অ্যাপ ব্যবহার করেও গ্রাহকেরা নিবন্ধনের পাশাপাশি অনলাইনে চাঁদা জমা দিতে পারবেন।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘৪১টির সঙ্গে এমওইউ হলেও কিছু ব্যাংক সেবা চালু করার জন্য সময় চেয়েছে। প্রক্রিয়া চলছে।’

পেনশন স্কিম তিনটি
বর্তমানে চালু থাকা সর্বজনীন পেনশন স্কিমগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাস। এর মাধ্যমে কর্মজীবী, অনিয়মিত আয়ের মানুষ ও প্রবাসীরা পেনশন সুবিধার আওতায় আসার সুযোগ পাচ্ছেন। দেশের চার শ্রেণির প্রায় ১০ কোটি মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে চালু করা হয় সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা।

কীভাবে নিবন্ধন করবেন
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে গেলে ইউপেনশন ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। তবে ভুল তথ্য দিয়ে আবেদন করলে তা বাতিল হবে। নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রথমেই একটি প্রত্যয়ন পাতা আসবে, যেখানে লেখা থাকবে, ‘এই মর্মে প্রত্যয়ন করছি যে আমি সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নই। সর্বজনীন পেনশন স্কিম-বহির্ভূত কোনো ধরনের সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধা গ্রহণ করি না। আমি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় কোনো ধরনের ভাতা গ্রহণ করি না।’

এ পাতার নিচে ‘আমি সম্মত আছি’ অংশে ক্লিক করলে দ্বিতীয় পাতায় গিয়ে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। এখানে আবেদনকারীকে প্রবাস, সমতা, সুরক্ষা বা প্রগতি, এই চার স্কিমের মধ্যে একটিকে বাছাই করতে হবে। একই সঙ্গে ১০, ১৩ বা ১৭ সংখ্যার এনআইডি নম্বর, জন্মতারিখ, মুঠোফোন নম্বর, ই-মেইল আইডি লিখে দিতে হবে। এরপর পাতার নিচের দিকে থাকা ক্যাপচা লিখে পরের পাতায় যেতে হবে।

ক্যাপচা দেওয়ার পরে আবেদনকারীর মুঠোফোন নম্বর ও ই-মেইলে একটি ওটিপি বা একবার ব্যবহারযোগ্য গোপন নম্বর আসবে, যা ফরমে দিয়ে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে।

নিবন্ধনপ্রক্রিয়ার পরের ধাপে আসবে ব্যক্তিগত তথ্যের পাতা। এ পাতায় এলে ব্যক্তির এনআইডি অনুযায়ী এনআইডি নম্বর, ছবি, আবেদনকারীর বাংলা ও ইংরেজি নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে (যেহেতু আগের পাতায় এনআইডি নম্বরের মাধ্যমে এ তথ্যগুলো দেওয়া হয়েছে)।

তবে এখানে আবেদনকারীর বার্ষিক আয় লিখতে হবে এবং পেশা, নিজ বিভাগ, জেলা ও উপজেলার নাম নির্বাচন করতে হবে। পেশা বাছাইয়ের ঘরে শিক্ষক, বেসরকারি চাকরিজীবী, ছোট ব্যবসায়ী, ব্যবসা, দিনমজুর, আইনজীবী, সাংবাদিক ইত্যাদি পেশার উল্লেখ আছে। সেখান থেকে নিজের পেশা নির্বাচন করতে হবে। সব লেখা সম্পন্ন হলে পরের ‘স্কিম তথ্য’-এর পাতায় যেতে হবে।

স্কিম তথ্যের পাতা এলে সেখান থেকে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ও চাঁদা পরিশোধের ধরন বাছাই করতে হবে। চাঁদা পরিশোধের ধরনের মধ্যে মাসিক, ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক-এ তিন অপশন রয়েছে। এরপর ব্যাংক তথ্যের ধাপে যেতে হবে।

ব্যাংক তথ্যের পাতায় আবেদনকারীর ব্যাংক হিসাবের নাম ও নম্বর, হিসাবের ধরন (সঞ্চয়ী অথবা চলতি), রাউটিং নম্বর, ব্যাংকের নাম (বাংলায়) ও ব্যাংকের শাখার নাম (ইংরেজিতে) লিখতে হবে। এরপর পরবর্তী নমিনি তথ্যের পাতায় যেতে হবে।

নমিনি তথ্যের পাতায় গিয়ে নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে নমিনিকে যুক্ত করতে হবে। এখানে একাধিক নমিনিও যুক্ত করা যাবে। এ সময় নমিনির মুঠোফোন নম্বর, নমিনির সঙ্গে সম্পর্ক, নমিনির প্রাপ্যতার হারের (একাধিক নমিনি হলে) তথ্য দিয়ে সর্বশেষ ‘সম্পূর্ণ ফরম’ ধাপে যেতে হবে। এটিই নিবন্ধনের শেষ ধাপ। এ ধাপে আগে পূরণ করা ব্যক্তিগত তথ্য, স্কিম তথ্য, ব্যাংক তথ্য ও নমিনি তথ্য দেখানো হবে। সেখানে কোনো ভুল থাকলে আবার শুরুতে গিয়ে তথ্যের প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে। আর সব তথ্য ঠিক থাকলে তাতে সম্মতি দিয়ে আবেদনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
 

image

আপনার মতামত দিন