‘S-Town’ একটি অনুসন্ধানমূলক পডকাস্ট

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২০
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
‘S-Town’ একটি অনুসন্ধানমূলক পডকাস্ট। ব্রায়ান রিড এবং জুলী সিন্ডার এর পরিচালনায়, ব্রায়ান রিড এর কণ্ঠ দেন। ৭টি পর্ব। ৪দিনে ডাউনলোড হয়েছিল ১০ মিলিয়ন বার। এই পর্যন্ত মোট ৪০ মিলিয়নের বেশি বার ডাউনলোড করা হয়েছে। এখনও শ্রোতারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী বার বারশোনেন।

কি আছে এই পডকাস্টে?
আছে, রহস্য, অনেক উত্তেজনা এবং সুন্দর উপস্থাপনা। একবার শোনার পর রহস্যের আমেজ শেষ হয়ে গেলেও বার বার সবাই শোনেন শুধু এর উপস্থাপনা শিল্পের জন্য। যতবার কেউ এটি শোনেন,পডকাস্টের যিনি প্রধান চরিত্র জন বি মেকলেমোর এরজন্য খারাপ লাগে। তাই আবার শোনেন।

আমি আপনাদের গত পর্বে জানিয়েছিলাম জন একজন ঘড়ি মেরামতকারী ছিলেন। সে ব্রায়ানকে ই-মেইলের মাধ্যমে জানিয়েছিলেন তার ছোট শহরে অনেক আগে একটি খুন হয়েছিল, তারা যেন এসে এই ব্যাপারটি নিয়ে অনুসন্ধানমূলক পডকাস্ট করেন এবং শহরের অবস্থা সবার কাছে তুলে ধরতে তাকে সাহায্য করেন।

সে আরো জানিয়েছিলেন যে, যেখানে তাকে মেরে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে, সে সেই জায়গা চিনে, তারা গেলে সে তা খনন করে তাদের দেখাতে পারবেন।

এক বছরের ই-মেইল আদান-প্রদান, তারপর ৬ মাসের টেলিযোগাযোগের পর ব্রায়ান এবং তার টিম তার শহর, উডস্টোক, আলাবামাতে যান। তারা পুরো প্রস্তুতি নিয়ে যান তার কথা রেকর্ড করার জন্য। গিয়ে তারা কাজ শুরু করে দেন।

ব্রায়ান আস্তে আস্তে জন কে বুঝতে শুরু করেন, তার দোকানে গিয়ে তার সাথে সামনা সামনি কথা বলে, সে বুঝতে পারেন যে, সে অসম্ভব জ্ঞানী একজন মানুষ।

জন পুরানো দিনের ঘড়ি ঠিক করতেন। এখানে সূর্য ঘড়ির কথা বলা হয়েছে। ব্রায়ান এর মতে এই ঘড়িগুলো বানাতে এবং ঠিক করতে যথেষ্ট পরিমাণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা থাকার দরকার আছে। পরে সে জানতেও পারেন যে, সে অনেক উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন। তার অসুস্থ মাকে দেখাশোনা করার জন্য সে ওখানে তার পূর্বপুরুষের সম্পত্তিতে থাকতেন। আর এটা নিয়ে তার মনে ক্ষোভও ছিল।

যাই হোক, ব্রায়ান তাকে মানুষ হিসেবে পছন্দ করে ফেলেছিলেন এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সূর্যঘড়ি নিয়েও সে একটি পডকাস্ট সিরিজ বানাবেন। তার সাথে কথা বলতে বলতে সে পডকাস্টের কাজ শুরু করেন। জুলী স্ত্রিপ্ট লেখা শুরু করেন। রেকর্ডিং শুরু হয়ে যায়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তারা সেই জায়গাটি খনন করেন এবং দেখতে পান সেখানে কোন মৃতদেহ নেই। ব্রায়ান খুবই হতাশ হয়ে পড়েন। কারণ ততদিনে তারা দুটোর মতো পর্ব প্রস্তুত করে ফেলেছেন। যেহেতু ইনভেস্ট হয়ে গিয়েছিল, তারা কাজ থামিয়ে না দিয়ে, তখন জন এর ব্যবসা, তার জীবন, আর ওই শহরের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তথ্য নিয়ে কাজ চালিয়ে যান।

শহরটি অনেক সুন্দর ছিল। তার সেখানে বেশ কিছুদিন থাকতে হয়েছিল। ফলে জনকে তারা আরও কাছের থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন।

এভাবে ‘S-Town’ এর যখন ২টি পর্বের কাজ শেষ, তখন একদিন হঠাৎ করেই ব্রায়ান, জন এর মৃত্যূ সংবাদ পায়। সে বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছিল। কেন, কিসের জন্য তার কিছুই ব্রায়ান জানতে পারেননি।

এই পুরো ঘটনা ব্রায়ান ‘S-Town’ এ তুলে ধরেছিলেন তার অনুভূতি দিয়ে। শ্রোতামনে জন ঘর করে নেয়। ‘S-Town’ এর একটি ফ্যানপেজ আছে। সেখানে বিভিন্ন শ্রোতার একটিই মন্তব্য ছিল, কেন জন এভাবে চলে গেলেন। সে বেঁচে থাকলে আজ আমাদের সবার প্রিয় পাত্র হতেন।

এখানেই শেষ নয়। এই পুরো ঘটনা অনেক সমস্যার ভিতর দিয়ে শ্রোতার কাছে আনার পর ‘S-Town’ টিমকে মামলার আসামী হতে হয়েছিল। বেশ কয়েক মাস ব্রায়ান এবং জূলি, প্রধান ক্রিপট রাইটার আদালতে গিয়ে নিজেদের পক্ষ সমর্থন করেছেন, জনের মা এর অভিযোগের বিরুদ্ধে। তার অভিযোগ ছিল, জন তাদের কারণে আত্মহত্যা করেছেন। সে হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন, নিজেকে প্রমাণ করতে না পেরে। আরো একটি অভিযোগ ছিল যে, ‘S-Town’ টিম তার ছেলের ব্যক্তিগত জীবন এবং মৃত্যু নিয়ে সমবেদনার ব্যবসা করছেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্য ‘S-Town’ টিম এর কাছে যুক্তি ছিল যে, তারা জন এর কাছে যাননি। জনই তাদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। আর প্রমাণ ছিল পডকাস্টের রেকর্ডিং।

পডকাস্ট আমার খুব ভালো লাগে। আর এমন রহস্য উপন্যাসের মতো পডকাস্ট কার না ভালো লাগবে? এটিই হচ্ছে এই পডকাস্ট শ্রেষ্ঠ হওয়ার মূল কারণ। ‘S-Town’ কে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে, মানুষ তার সাথে মিশে গিয়েছে।

আমাদের দেশে অনেক মানুষ আছে যারা সাহিত্য লিখেন। তারা ভেবে দেখতে পারেন। প্রকাশনা সংস্থা না হয়ে পডকাস্ট হলে কেমন হয়? যারা আজ আমার এই পোস্টটি পড়বেন, তারাও জানাবেন অবশ্যই গল্প নিয়ে পডকাস্ট করলে কেমন হয়? সূত্র: উইকিপিডিয়া, S-Town এর নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজ।

লেখক : সোনিয়া সোহানা সিমি, উদ্যোক্তা, কন্টেন্ট রাইটার, ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ গ্রুপ

image

আপনার মতামত দিন