জীবন কাঁচা মাটির মতো: নোমান

প্রকাশ: শুক্রবার, ২৯ জুন, ২০১৮
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png উজ্জ্বল এ গমেজ
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
 আহসার উদ্দিন নোমানের বেড়ে উঠা লালমনিরহাটের হাতিবন্ধা উপজেলায় নিজ গ্র্রামে। শৈশব থেকেই ইচ্ছে ছিল সাইন্স নিয়ে লেখাপড়া করার। কিন্তু পারিবারিক আর্থিক সমস্যার কারণে ২০০৩ সালে মানবিক বিভাগে এসএসসি পাস করে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে থাকেন। ২০০৫ সালে এইচএসসি সমমান আলিম এবং রংপুরে কারমাইকেল কলেজ থেকে ২০১৩ সালে ইংরেজিতে অনার্স পাস করেন তিনি।
 
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আউটসোর্সিং করে নিজের জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি যারা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন তাদের উৎসাহ দিতে গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) পঞ্চমবারের মতো দিয়েছে ‘বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড ২০১৫’। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দেশ সেরা ৯৪ ফ্রিল্যান্সার ও আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়। জেলা পর্যায়ে যারা এ পুরস্কার পেয়েছেন আহসান নোমান তাদের মধ্যে একজন।
 
বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড পেয়ে আনন্দিত এ তরুণ ফ্রিল্যান্সার জানান তার সেরা হয়ে ওঠার গল্প। সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেছেন বিবার্তা২৪.নেটের নিজস্ব প্রতিবেদক- উজ্জ্বল গমেজ।
 
বিবার্তা২৪.নেট: আপনার সাফল্যের পিছনের গল্পটা জানতে চাই।
আহসান নোমান:
প্রথম অবস্থায় আমার কাছে কোন ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থা ছিল না। সাইবার ক্যাফেতে বসে আমি বিভিন্ন গ্রাফিক্স ডিজাইন ওয়েব সাইট দেখতাম, তারপর থেকে আমি ফটোশপের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হই এবং শিখতে  শুরু করলাম। এভাবে প্রায় ৬ মাস চর্চা করার পর একদিন পেপার থেকে আউটসোসিং সর্ম্পকে জানতে পারলাম। তখন থেকে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস সর্ম্পকে জানতে পারি। তারপর oDesk একটি Account খুলাম আর বিভিন্ন জনের প্রোফাইল থেকে ভিন্ন ভিন্ন Protfolio দেখে চর্চা করতাম এবং নিজের জন্য Protfolio বানাতাম। এভাবে আরো ৬ মাস আউটসোসিং এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন বিষয়ে একা একা চর্চা করি।
 
হঠাৎ একদিন oDesk এ বিট করলাম, তখন বিট করার পর একটি ৫ ডলারের কাজ পাই। আমি তাতেই অনেক খুশি। কারণ এটাই আমার প্রথম অনলাইনের কাজ। বায়ারের প্রথম কাজটি সঠিকভাবে করে দিলাম, বায়ার পেমেন্ট করল এবং খুশি হয়ে ফাইভ স্টার ফিডব্যাক দিল। আমি খুশিতে পুরো আত্মহারা হয়ে গেলাম। এর পর থেকে কাজের প্রতি আমার আগ্রহ অনেকগুণ বেড়ে গেল। তারপর থেকেই আমি প্রতিনিয়ত বিট করতে থাকি এবং বিভিন্ন বায়ারের কাজ করতে থাকি। পাশাপাশি পেমেন্টও বেশ ভালো পাই।
 
এরপর দিন দিন কাজের চাপ বেড়েই চলল, তখন আমাকে সহযোগিতা করার জন্য পরিচিত আরো দুইজনকে কাজটি শিখাই। আস্তে আস্তে কাজের চাপ আরো বেশি বেড়ে যাওয়ায় আমি একটি টিম বানাই। যার নাম ‘Quick Team’। আজ আমার টিমের সদস্য সংখ্যা ২শ’ এর বেশি। তাদের সকলেরই নিজেস্ব প্রোফাইল আছে এবং আমার কাজ করে। আমি কখনই ভেঙ্গে পড়িনি, এবং পিছু পা হইনি। তাই হয়ত আমি আজকে এই ভালো অবস্থানে।

বিবার্তা২৪.নেট: আপনি ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে কি ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন?
আহসান নোমান:
আমি যখন প্রথম ফ্রিল্যান্সিং শুরু করি তখন বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। মাস শেষে নেট নিতে হয়, বিড করতে বিভিন্ন ধরনের সম্যসা হতো। সঠিকভাবে বিড করতে পারতাম না। কপি করে কভার লেটার দিয়ে আমি দুইবার সাসপেন্ড হয়েছি। তৃতীয় বারের মত যখন আমাকে ODesk থেকে সতর্ক করা হয়। তখন খুব ভয়ের মধ্যে থাকতাম যে, কখন অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড হয়ে যায়। তার পর আবার নতুন অবস্থায় ২/৩ টা বায়ার টাকা না দিয়ে চলে যায়। তারপরেও কাজের হাল ছাড়ি নাই। হয়ত হাল না ছাড়ার কারণে আজকে আমার এই ভাল একটি অবস্থান। সত্যিই প্রথম অবস্থায় কিছু জিনিস না জানার ফলে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।
 
বিবার্তা২৪.নেট: স্বপ্ন আর স্বপ্নের বাস্তবতা নিয়ে কিছু বলুন।
আহসান নোমান:
আমি মনেকরি স্বপ্ন এমন একটি জিনিস যা কখনই ঘুমের মধ্যে দেখা যায় না। স্বপ্ন দেখতে হবে জেগে জেগে, যে স্বপ্ন আপনাকে ঘুমতে দিবে না এটাই একমাত্র আপনার সফলতার চাবিকাঠি। জেগে জেগে স্বপ্ন দেখাই বুদ্ধিমানের কাজ, তাহলে স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দেয়া যায়। এমন স্বপ্ন দেখতে হবে যা বাস্তবে রুপ দিতে পারবেন। আপনি  যে স্বপ্ন জেগে জেগে দেখেছেন সে স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য অনেক কষ্ট এবং সাধনা করতে হবে।
 
বিবার্তা২৪.নেট: জীবন, সাফল্য এবং ব্যর্থতা এই তিনটি বিষয় একই সূত্রে গাঁথা। আপনে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আহসান নোমান:
জীবন হলো এমন একটি জিনিস, যা কাঁচা মাটির মতো। কাঁচা অবস্থায় যেমন বানাবেন তেমনই হবে। আর পেকে বা শক্ত হয়ে গেলে তা দিয়ে যেমন খুশি তেমন বানানো যায় না। আসলে একটি মানুষ পুরো বেঁচে থাকার সময়টি জীবন, ব্যর্থতা এবং সাফল্য নিয়ে গঠিত।
 
সফলতাকে কেউ কখনো ঘরে এসে দিয়ে যাবে না, সফলতাকে কঠোর পরিশ্রম করে অর্জন করতে হবে। তবে সফল হতে হলে আপনাকে প্রতিবার সামনে পা ফেলানোর সময় ব্যর্থতা গ্রাস করবে। তবে এই গ্রাস করা ব্যর্থকে পিছনে ফেলে সফলতা অর্জনের জন্য সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে আপনি আপনার সফলতার সাথে আলিঙ্গন এবং স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন। আজ যারা এই পৃথিবীতে সফল হয়েছেন তাদের অধিকাংশই সময়ই ব্যর্থ হয়েছেন। ব্যর্থতাকে পিছনে ফেলে দিলেই সফলতা আপনার সামনে দাঁড়াবে। ইমপসিবল (Impossible) বলতে কোন শব্দ নেই। এই ইমপসিবলের সঠিক অর্থ যারা জানে তারাই সফল।
 
বিবার্তা২৪.নেট: শৈশবের কিছু মজার স্মৃতি যা এখনও অপনাকে তাড়া করে . . .
আহসান নোমান:
শৈশবে অনেক মজার স্মৃতি আছে, তার মধ্যে আমি এবং আমার চাচাতো ভাই মাছ ধরতে পানিতে নামি। আমি জোঁক নামক একটি পোকাকে খুব ভয় করতাম। কিন্তু আমার চাচাতো ভাই ভয় পেতো না। আমি ভয় পাই একথা কিভাবে যে জোঁক পোকাটি বুঝতে পারল, জোঁক পোকাটি আমাকেই ধরে বসল। আমার চাচাতো ভাই এত বেশি মজা করতেছিল এবং হাসতেছিলো যে, আজো আমাকে দেখলে ছোট বেলার জোঁক পোকা ধরার কথা বলে আর হাসে।
 
বিবার্তা২৪.নেট: ছোটবেলার দুষ্টুমি, বাবার শাসন, পারিবারিক স্মৃতি নিয়ে কিছু বলুন।
আহসান নোমান:
সত্যি বলতে, ছোটবেলা অসম্ভব দুষ্টু ছিলাম আমি। সারা দিনের কর্মফলের ফলাফল, সারাদিনের বিচার সন্ধ্যা বেলায় বাসায় ঢোকার সাথে সাথে বিচার বিভাগ বসে যেত বিচার করার জন্য। বিচারের রায়ে তো অবশ্যই চড় থাপ্পড় থেকে শুরু করে বেতের বারি পর্যন্ত ভাগ্যে থাকত। কিন্তু কি আর করার বিচারের রায় তো মেনে নিতেই হবে। ছোট বেলার বাবার চেয়ে মাকে বেশি ভয় পেতাম। বিচার বিভাগের সম্পূর্ণ দায়িত্ব ছিল আমার মায়ের হাতে। বাবা চাকরির জন্য বাহিরে থাকতেন।

বিবার্তা২৪.নেট: টেক জগতের বাইরে অবসর সময়টি কিভাবে উপভোগ করেন।
আহসান নোমান:
টেক জগতের বাইরের সময়টি সত্যিই অসাধারণভাবে উপভোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু টেক জগতের বাহিরে তো যেতেই পারি না। টেক জগতের বাহিরে যখন থাকি তখনও মোবাইল ফোনে মেইল/ স্কাইপি দুটোই খোলা রেখে বের হতে হয়। কারণ, বায়ার কখন নক করে বসে। আসলে আমি টেক জগতের বাইরে কতটুকু যেতে পারি, তা সামান্য উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবেন।
 
আমার শহরের বাসা থেকে গ্রামের বাসা মাত্র ৬৫ কিলোমিটার। অফিস এবং কাজের ব্যস্ততার কারণে আমি তিন বছর গ্রামের বাড়িতে যেতে পারি না। তাই টেক জগতের বাইরে সামান্য সময় আমার কাছে সোনার হরিণ।
 
বিবার্তা২৪.নেট: নতুনদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
আহসান নোমান:
নতুনদের উদ্দেশ্য আমি বলব কেউ কখনোই দুই নৌকায় ‘পা’ দিবেন না। আমি এ বিষয়টি বারবার বুঝানোর চেষ্টা করি। একটা নৌকায় উঠেন। দেখবেন কোন এক সময় অবশ্যই তীরে পৌঁছাতে পেরেছেন। আর যা কিছু করবেন নিজের আত্মবিশ্বাস থাকলেই করবেন। মানুষের ধার করা আত্মবিশ্বাস নিয়ে কোনদিন সফল হতে পারবেন না।
 
বিবার্তা২৪.নেট: আপনার প্রতিষ্ঠানের পরবর্তী পরিকল্পনা কি?
আহসান নোমান:
আমার প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেছিলাম মাত্র দুইজনকে নিয়ে। মাত্র এক বছরে আমার প্রতিষ্ঠানের সদস্য ২শ’ এর অধিক। যারা সকলেই বর্তমানে আমার  ‘Quick Team’ নামের এই প্রতিষ্ঠানের সাথে সক্রিয় রয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা নতুন বছরের জানুয়ারি মাসেই আরো ৩শ’ জনকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে পারব।
 
বিবার্তা২৪.নেট: অপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আহসান নোমান:
আমার গল্প আপনাদের নিউজপোর্টালে প্রকাশ করার জন্য আপনাদেরও সবাইকে অন্তরিক ধন্যবাদ।
 
নিউজটি বিবার্তায় প্রকাশ হয়েছে। মূল নিউজটি দেখতে ক্লিক করুন এ লিংকে
image

আপনার মতামত দিন