দেশের অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে যে ক’জন সফল ব্যক্তিত্ব আছেন, আরিফুল ইসলাম পলাশ তাদের অন্যতম। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। টুকটাক লেখালেখির পাশাপাশি বই পড়া, নতুন জিনিস জানার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে তার। ভবিষ্যতে দেশের অন্যতম একজন ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান নিজেকে।
তিনি বলেন, শৈশবে অন্য সবার মতোই একজন ডাক্তার হতে চাইতাম। বাবা-মা’র ইচ্ছাও ছিল আমাকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বানানোর। ধীরে ধীরে ক্রিকেট খেলার প্রতি আগ্রহ এতো বাড়লো যে শেষমেশ ক্রিকেটার হওয়ার চিন্তাই মাথায় স্থায়ী হয়ে বসলো।
পলাশ বলেন, আমার মনে আছে সপ্তম শ্রেণিতে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে ভাইভায় আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘বড় হয়ে কি হতে চাও?’। আমি উত্তর দিয়েছিলাম, ক্রিকেটার। এ নিয়ে কতো যে বকাঝকা খেয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। আর এখন বড় ব্যবসায়ী হওয়াটাই আমার মূল লক্ষ্য। সেটাকে সামনে রেখেই এগিয়ে যেতে চাই।
সম্প্রতি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেন বিবার্তার সঙ্গে। একান্ত আলাপে জানালেন তার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হয়ে উঠার গল্প। সেই গল্প বিবার্তার পাঠকদের জানাচ্ছেন উজ্জ্বল এ গমেজ।
ঢাকাতেই জন্ম আরিফুল ইসলাম পলাশের। এখানেই তার বেড়ে উঠা। শৈশব, কৈশোর এখানেই কেটেছে তার। এই শহরকে ঘিরেই তার সব স্বপ্ন, ভালো লাগা।
জীবনের সেরা সময় স্কুলজীবন কেটেছে নারিন্দা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ও উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে। এরপর ঢাকা সিটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।
অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরুর গল্প জানতে চাইলে পলাশ জানালেন, স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ ছিল আমার। কিন্তু এ বিষয়ে তেমন স্পষ্ট ধারণা ছিল না। সহপাঠী অনেকে এ ব্যাপারে বেশ ভালো জানত। ওরা কম্পিউটার, ইন্টারনেট, অনলাইনের বিভিন্ন কাজ নিয়ে আলোচনা করত। কিন্তু না জানার কারণে ওদের সঙ্গে সেভাবে মিশতে পারতাম না, নিজের মধ্যে হীনমন্যতা কাজ করতো। তখন মনে একটা জেদ চেপে বসলো যে আমি ওদের থেকেও ভালোভাবে জানব ও শিখব। এরপরে এক বন্ধুর সহায়তায় সাইবার ক্যাফেতে যাওয়া এবং প্রযুক্তি-বিষয়ক বই, ম্যাগাজিন পড়া শুরু করি।
এক সময় পলাশের প্রচণ্ড আগ্রহ দেখে বাবা তাকে একটি কম্পিউটার কিনে দিলেন। ঘাটাঘাটি করতে করতে একসময় তার ভালো ধারণা হয়ে গেল এবং জানতে পারলেন যে অনলাইনে কাজ করে ঘরে বসেই ইনকাম করা যায়। অনলাইন গুরু জন চো, ইয়ারো স্টারাক, অমিত আগারওয়ালকে তিনি সব সময় ফলো করতেন। প্রথমে ফ্রিল্যান্স রাইটার হিসেবে মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করেন। সেখানে বেশ সফলতা ছিল তার। এরপর অ্যাডসেন্স নিয়ে কাজ করেন। পলাশ ক্লাস নাইনে পড়ার সময় প্রথম অ্যাডসেন্সের চেক হাতে পান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করেন।
অনলাইনে আয়ের এতো মাধ্যম থাকতে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হলেন কেন - এমন প্রশ্নের জবাবে পলাশ জানালেন, আর্টিকেল রাইটার হিসেবে আমার ফ্রিল্যান্স কাজের শুরু। অনলাইনে কাজের সাথে জড়িত থাকার সুবাদে এখানে আয় করার যতোরকম উপায় রয়েছে তার সবগুলোর সাথেই কম-বেশি পরিচয় হয়। কাজ না করলেও সবগুলো সম্পর্কেই জেনেছি, জানার চেষ্টাও করেছি। আর্টিকেল রাইটার থেকে পরবর্তীতে এসইওর কাজ শুরু করি। সেটা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হওয়ার পথ আরও সুগম করে দেয়। ইতোপূর্বে আর্টিকেল রাইটার এবং এসইও হিসেবে কাজ করাই মূলত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হতে হলে যা যা জানা প্রয়োজন সব খুঁটিনাটি বিষয় জানা থাকায় এটাকেই বেছে নিয়েছি। আর সবচেয়ে বড় আগ্রহ তৈরি করেছে প্যাসিভ ইনকাম।
উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য পলাশকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছেন স্টিভ জবস। পলাশের দৃষ্টিতে জবস স্রোতের বিপরীতে চলা একজন মানুষ, যিনি জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিকগুলো ফেস করছেন। কিন্তু সফল হওয়ার জন্য প্রচণ্ড জেদ তাকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে গেছে। তাঁর কাজের ধরণও সবার থেকে আলাদা। সফল হওয়ার জন্য তার প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তির ব্যাপারটা তাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে।
পলাশ বলেন, সত্যি বলতে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরুতে তেমন কোন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হইনি আমি। আম্মু আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। শুরু থেকেই আমার সাথে পরামর্শক হিসেবে আছেন। আমার কাজের সকল ব্যাপারে আমি আম্মুর সাথে আলোচনা করি। অনলাইন মার্কেটিংয়ের সাথে যারা জড়িত তাদের মধ্যে খুব কম মানুষই পাওয়া যাবে যে কিনা তার কাছের মানুষদের কাছে অনলাইন জগতে তার পাওয়া না পাওয়ার কথা জানায়। নিজের কাছেই রেখে দেয়, অথবা একই প্রফেশনের কোন বন্ধু বা ভাইকে জানায়। নিজের পরিবার, নিজের কাছের লোকজন জানেই না। শুধু জানে, ছেলে/মেয়ে অনলাইনে কাজ করে। কি করে সেটা হয়তো কেউ কেউ জানে কেউ জানে না। যারা জানে, তারাও কিন্তু বিস্তারিত জানে না। পরিবারের কাউকে না জানানোর মূল কারণ- তারা বুঝবে না। আসলেই তারা বুঝে না। তবে বুঝালে তারা যে বুঝবে না এমনটা না। আপনিও এক সময় বুঝতেন না। আজ বুঝেন। তারা পুরোপুরি না বুঝুক কিছুটা হলেও বুঝবে। কারও কাছে যখন সব শেয়ার করার সুযোগ থাকে তখন নিজেকে অনেক হাল্কা লাগে। অনলাইনে পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে বলার মতো পরিবারের কেউ থাকলে তার জন্য অনেক ভালো হয়।
পলাশের কাজের প্রতিটা পদক্ষেপ তার আম্মু জানেন। আজকে কি করলেন, কতোগুলো প্রডাক্ট সেল হলো, কতো ডলার আর্ন হলো, কতো ইনভেস্ট করলেন সব। আম্মুর কাছে প্রতিদিনের সব খুঁটিনাটি কাজের আপডেট দেন তিনি। এর ফলে একটা দায়বদ্ধতা থাকে তার কাছে, যেটা তার কাজের গতিকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। আম্মু এখন পলাশের সবচেয়ে বড় কনসালটেন্ট। যেকোনো সমস্যায় আম্মুকে গিয়ে জানান, দারুণ একটা সমাধান সাথে সাথে পেয়ে যান, যেটা তিনি কখনও ভাবেননি।
পলাশ বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এখন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারের সংখ্যা একটু বেড়েছে। আগের তুলনায় কাজও অনেক বেশি হচ্ছে। কম্পিটিশন বাড়ছে। যারা অল্প বাজেটে এই মার্কেটে আসবে তাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। তবে সুযোগ একেবারে থাকছে না, এমনটা না। এখনও এমন অনেক জিনিস পড়ে আছে যেগুলো নিয়ে খুব বেশি মানুষ কাজ করেনি। আর আশা করা যায়, এই মার্কেটারদের কাজের গতি বাড়াতে অ্যামাজনও যুগোপযোগী উদ্যোগ নিবে, কারণ তাদের সেলের সিংহভাগ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের কল্যাণেই হচ্ছে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের পাশাপাশি ভবিষ্যতে সফল উদ্যোক্তা হতে চান এই তরুণ ই-কমার্স ব্যবসায়ী। নিজেকে একজন প্রথম সারির ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। পড়াশোনার পাশাপাশি আরও বড় পরিসরে কাজ করতে চান। তার মূল লক্ষ্য প্রতি মাসে এখান থেকেই ২০ হাজার ডলার আয় করা। পলাশ বর্তমানে যেভাবে কাজ করছেন সেভাবে করতে থাকলে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে এটা তার পক্ষে সম্ভব বলে জানান তিনি।
পলাশ বলেন, আমার এই লক্ষ্যটা খুব বেশি দূরে না।