বিশ্বের সেরা উদ্ভাবনের তালিকায় আইসিডিআর,বি’র স্বাস্থ্যকর খাবার

প্রকাশ: শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png নিজস্ব প্রতিবেদক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

ছোলা, সয়াবিন, চিনাবাদাম ও কাঁচা কলার গুঁড়োর বিশেষ মিশ্রণে শিশুদের জন্য একটি বিশেষ সুষম খাবার উদ্ভাবন করেছে আইসিডিডিআর,বি। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথ গবেষণায় উদ্ভাবিত হয় এই মাইক্রোবায়োটা ডিরেক্টেড কমপ্লিমেন্টারি ফুড (এমডিসিএফ)। 

এই খাবারটি অন্ত্রের উপকারী জীবাণুগুলো পুষ্টির যোগান দিয়ে শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, স্নায়বিক বিকাশ ও স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বজুড়ে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের সুস্থ বিকাশে সহায়তা করছে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃত্যুর প্রায় অর্ধেকের জন্য যে অপুষ্টি দায়ী করা হচ্ছিলো এবং যুদ্ধ, বাস্তুচ্যুতি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছিলো; ফলে কোটি কোটি শিশু খর্বতা ও কৃশতার ঝুঁকিতে পড়েছিলো তা মোকাবেলায় নতুন আশা জুগিয়েছে। 

এমন উদ্ভাবনী উদ্যোগের কারণে আইসিডিডিআর,বি’র অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারকারী বিশেষ সম্পূরক খাবার এমডিসিএফ-২ ‘টাইম শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবন ২০২৫’ তালিকায় ‘সামাজিক প্রভাব’ বিভাগে মলাটবদ্ধ করেছে সুপরিচিত মার্কিন সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন টাইম সাময়িকী। 

১০ অক্টোবর, শুক্রবার আইসিডিডিআরবি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে জানানো হয়, এই উদ্ভাবনের সূচনা হয় আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ এবং ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অন্ত্র-জীবাণু গবেষক ড. জেফরি গর্ডন-এর মধ্যে এক অনানুষ্ঠানিক আলোচনার মাধ্যমে। ড. তাহমিদ শিশুদের অপুষ্টি নিয়ে কয়েক দশক ধরে কাজ করছেন, আর ড. গর্ডন মূলত স্থূলতা নিয়ে গবেষণা করলেও অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম বিষয়ে পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত।

ড. গর্ডন বলেন, “আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের পুষ্টি ও বৃদ্ধি নির্ভর করে অন্ত্রের জীবাণুর ওপর। আমরা যে উপকারী জীবাণুগুলো চিহ্নিত করেছি, তারা এমন খাদ্য উপাদান প্রক্রিয়াজাত করতে পারে, যা শরীর নিজে থেকে করতে পারে না। বাংলাদেশি শিশুদের নিয়ে পরিচালিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, এমডিসিএফ-২ অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম পুনর্গঠনে সক্ষম এবং এর প্রভাব অন্ত্রের বাইরেও বিস্তৃত।”

ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, “এই স্বীকৃতি আমাদের জন্য গভীর অনুপ্রেরণার উৎস। এটি প্রমাণ করে, বিজ্ঞান ও মানবিক সহমর্মিতা একত্রিত হলে বিশ্বের জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান সম্ভব। স্থানীয়ভাবে তৈরি, সাশ্রয়ী এই সমাধান কোটি কোটি অপুষ্টিগ্রস্ত শিশুকে শুধু বাঁচিয়ে রাখতেই নয়, বরং পূর্ণ বিকাশের সুযোগ দিতে পারে।”

বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান, মালি এবং তানজানিয়া-তে এই খাবার নিয়ে বৃহৎ পরিসরে গবেষণা চলছে। এমডিসিএফ-২ পুষ্টি কর্মসূচিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে বিশ্বজুড়ে অপুষ্টিরোধ ও চিকিৎসার পদ্ধতিকে আমূল বদলে দেওয়ার সম্ভাবনা রাখে।

প্রসঙ্গত, অন্ত্র হলো মানুষের পরিপাকতন্ত্রের একটি দীর্ঘ, পেঁচানো নল, যা খাদ্য হজম এবং পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে। এটি শরীরের 'দ্বিতীয় মস্তিষ্ক' হিসেবেও পরিচিত, কারণ এর নিজস্ব স্নায়ুতন্ত্র রয়েছে এবং এটি আবেগ, অভ্যাস ও জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে। অন্ত্রে লাখ লাখ উপকারী অণুজীব বাস করে, যা হজমে সহায়তা করে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

image

আপনার মতামত দিন