আসন্ন ঈদুল আজহার কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে দেশের ৬টি মহাসড়কের ১১৮ স্থানে যানজটের আশঙ্কা করছে পুলিশ। এই ৬ মহাসড়কের পাশেই বসছে ২৩০টি পশুর হাট। এসব হাটকে কেন্দ্র করে পশুবাহী ট্রাকের যাতায়াত, সড়কে দাঁড়িয়ে পশু নামানো-ওঠানো ইত্যাদির কারণে ব্যাপক যানজটের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশ ও পরিবহনের মালিকেরা।
তাঁরা বলেছেন, পশুবাহী ট্রাক ও আশপাশের হাটের কারণে মহাসড়কে গাড়ির গতি কম থাকবে।
রাজধানী ঢাকা থেকে দুই ঈদের ছুটিতে লাখো মানুষ গ্রামের বাড়ি যায়। অন্যান্য বড় শহর থেকেও মানুষ অন্যত্র যাতায়াত করে। ঈদুল আজহায় সড়কে যাত্রীবাহী যানের সঙ্গে যুক্ত হয় পশুবাহী গাড়ির চাপ। মহাসড়ক ঘেঁষে বা তার আশপাশে পশুর হাট বসে।
সবচেয়ে বেশি যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। এই মহাসড়কের ৩৯ স্থানে ঈদের যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়তে পারেন। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পয়েন্ট হচ্ছে-সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ড, শিমরাইল বাসস্ট্যান্ড, আদমজী রোড ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড ও নিমসার বাজার। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৩৬টি স্থানে যানজটের কথা বলছে হাইওয়ে পুলিশ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মাধবদী বাসস্ট্যান্ড, শেখেরচর, পাঁচদোনা মোড়, ভোলানগর, ইটাখোলা মোড়, শাহবাজপুর, মাধবপুর বাজার, অলিপুর বাজার ও গোয়ালাবাজার।
ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কা ৩৫টি স্পট নিয়ে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চন্দ্রা মোড়, নতুন ও পুরোনো ইপিজেড, ভূঞাপুর লিংক রোড থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু, ঢোলমাইল বাজার, ধনকুন্ডি ও ছোনকা বাজার উল্লেখযোগ্য।
এ ছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাঁচটি এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের তিন স্থানে যানজট হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে হাইওয়ে পুলিশের প্রতিবেদনে। তবে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের নির্দিষ্ট কোথাও এবার যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে না।
দেশের ৩৭টি জেলার ওপর দিয়ে গেছে এই ছয় মহাসড়ক। হাটগুলোর মধ্যে কুমিল্লা ও কক্সবাজারে পড়েছে ২৩টি করে, চট্টগ্রাম জেলায় ২২ ও ঢাকা জেলায় ৪টি।
পশুর হাটকে কেন্দ্র করে দুর্ভোগ যাতে কম হয়, সে জন্য হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় থানা-পুলিশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা।
পশুর গাড়ি পাবে পুলিশি এসকর্ট দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখী পশুবাহী ট্রাক চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, নওগাঁ, বগুড়া, লালমনিরহাটসহ যেসব জেলা থেকে রাজধানীতে গরু বেশি আসে; সেসব এলাকার গরুর ফড়িয়াদের একটি তথ্যভান্ডার তৈরি করা হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এসব জেলার ফড়িয়াদের সঙ্গে সম্প্রতি একাধিক বৈঠক করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও হাট ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সভা হয়েছে। জেলা ও হাটভিত্তিক আলাদা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় ও দিনে একসঙ্গে কয়েকটি ট্রাককে একই গন্তব্যে পাঠানো হবে। এটি মহাসড়কে চাঁদাবাজি বা ডাকাতির মতো অপরাধমূলক ঘটনা রোধে সহায়তা করবে বলে আশা করছে পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ৮ থেকে ১০টি পশুবাহী ট্রাকের একেকটি বহর গঠন করা হবে। প্রতিটি বহরে একজন করে পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ সদস্যরা পথে ঘটা যেকোনো ধরনের সহিংসতা বা হয়রানি রোধে সহায়তা করবেন।
পুলিশ বলছে, পশুবাহী ট্রাক এককভাবে চলাচল করায় অনেক সময় চাঁদাবাজি বা ছিনতাইয়ের শিকার হয়। এবার খামারি ও ফড়িয়ারা দলবেঁধে কয়েকটি ট্রাক নিয়ে চলাচল করলে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব হতে পারে।
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা আরও বলেন, পশুবাহী ট্রাকে জিপিএসযুক্ত ড্যাশক্যাম (ড্যাশবোর্ডে যুক্ত খুদে ক্যামেরা) বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে, যা কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করা হবে। এতে ডাকাতি বা কোনো বিপত্তির ঘটনা ও চালকের আচরণ নজরদারিতে রাখা সম্ভব হবে। সূত্র: আজকের পত্রিকা