ভোরের প্রথম আলোয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ যেন মুসল্লিদের ঢল নামে। রেওয়াজ মেনে বন্দুকের ফাঁকা গুলির শব্দে ধ্বনিত হয় ১৯৮তম ঈদুল আজহার জামাতের সূচনা। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ধারণ করে মাঠজুড়ে গড়ে ওঠে ঈদের মিলনমেলা। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি প্রবেশপথে ছিল কড়া নজরদারি ও দেহ তল্লাশি।
শোলাকিয়ায় এবার অনুষ্ঠিত হলো ঈদুল আজহার ১৯৮তম জামাত। শোলাকিয়া মাঠের রেওয়াজ অনুযায়ী বন্দুকের ফাঁকা গুলির মাধ্যমে সকাল ৯টায় জামাত শুরু হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুসল্লিদের এ জামাতে ইমামতি করেন মুফতি মাওলানা আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ।
ঈদে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত মুসল্লিদের নিয়ে সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এ সময় আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখর হয়ে যায় ঈদগাহ ময়দান।
২০১৬ সালের ৭ জুলাইয়ের ভয়াবহ জঙ্গি হামলার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সকাল থেকেই ঈদগাহ ময়দানে বিজিবি সদস্যসহ র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, সাদাপোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ ও বোমা ডিসপোজাল টিমের সদস্যদের তৎপরতা ছিল। ওয়াচ টাওয়ারসহ পুরো ঈদগাহ ময়দান সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় ছিল। ছিল ফায়ার ব্রিগেড, অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিজাবে রহমত নামাজ আদায় শেষে বলেন, মুসল্লিরা শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় করেছেন। দূরদূরান্তের মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা ছিল। তা ছাড়া নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করে মুসল্লিরা ঘরে ফেরায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
জনশ্রুতি আছে, ১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে ঈদগাহটি একসময় ‘সোয়া লাখিয়া’ থেকে ‘শোলাকিয়া’ ঈদগাহ মাঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তবে এ বিষয়ে অনেক ইতিহাসবিদের দ্বিমত আছে। আরেকটি মতে, মোগল আমলে এখানকার পরগনার রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল শ লাখ মানে এক কোটি টাকা। কালের বিবর্তনে ‘শ লাখ’ থেকে বর্তমান ‘শোলাকিয়া’ হয়েছে।