বিশ্ব প্রযুক্তি জগতে নীরব বিপ্লব ঘটে চলেছে। গুগল ক্রোম, দীর্ঘদিনের আধিপত্য বিস্তারকারী ওয়েব ব্রাউজার, এবার এক শক্তিশালী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।
সূত্র বলছে, চ্যাটজিপিটির নির্মাতা ওপেনএআই শিগগিরই তাদের নিজস্ব এআইচালিত ওয়েব ব্রাউজার বাজারে আনতে যাচ্ছে-যা শুধু ওয়েব ব্রাউজিংয়ের অভ্যাসই পাল্টে দেবে না, বরং গুগলের আয়ের অন্যতম প্রধান ভিত্তিও নড়বড়ে করে দিতে পারে।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
গুগল ক্রোম বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ব্রাউজার। বৈশ্বিক ব্রাউজার বাজারের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি এর দখলে রয়েছে এবং এর মাধ্যমে গুগল ব্যবহারকারীর ডেটা সংগ্রহ করে বিজ্ঞাপনকে আরও কার্যকর করে তোলে। গুগলের মোট আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ আসে এই বিজ্ঞাপন থেকেই। কিন্তু ওপেনএআইয়ের নতুন উদ্যোগ এই খাতে বড় ধরণের পরিবর্তন এনে দিতে পারে।
ওপেনএআইয়ের নতুন ব্রাউজার কীভাবে আলাদা হবে?
সূত্র অনুযায়ী, ওপেনএআইয়ের ব্রাউজারটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সমন্বিতভাবে তৈরি হচ্ছে। এতে থাকবে:
>> চ্যাটজিপিটি-ধর্মী ইন্টারফেস: অনেক কাজ সরাসরি ওয়েবসাইটে ঢুকে না গিয়ে চ্যাটবক্সে বলা মাত্রই সম্পন্ন হবে।
>> এআই এজেন্ট ইন্টিগ্রেশন: রেস্তোরাঁ বুকিং, ফর্ম পূরণ, তথ্য অনুসন্ধানসহ নানা কাজ ব্যবহারকারীর হয়ে ব্রাউজার নিজেই করতে পারবে।
>> প্রসঙ্গভিত্তিক সহায়তা: ব্যবহারকারীর প্রেক্ষিত অনুযায়ী তথ্য সাজিয়ে দেবে, ফলে ব্রাউজিং হবে আরও প্রাসঙ্গিক ও দ্রুতগতির।
>> এই ফিচারগুলো কেবল সময় বাঁচাবে না, বরং কাজের ধরনই পাল্টে দেবে। মনে করুন, আপনাকে আর "শ্রেষ্ঠ রেস্টুরেন্ট" সার্চ করতে হবে না-আপনার প্রয়োজন বললেই ব্রাউজার নিজেই আপনার জন্য টেবিল রিজার্ভ করে ফেলবে।
চ্যাটজিপিটির বিশাল ব্যবহারকারীর ভিত্তি ওপেনএআইয়ের শক্তি
বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করছেন ৫০ কোটির বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারী এবং পেইড বিজনেস গ্রাহকের সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এই বিশাল ইউজারবেস যদি ওপেনএআইয়ের ব্রাউজারের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তাহলে গুগলের বিজ্ঞাপন-নির্ভর ব্যবসায়িক মডেল বড় ধাক্কা খেতে পারে।
গুগলের জন্য কি সত্যিই হুমকি?
গুগল নিঃসন্দেহে এখনো শীর্ষে-তাদের ওয়েব ব্রাউজিং ইকোসিস্টেম, অ্যাড নেটওয়ার্ক এবং সার্চ ইঞ্জিন একে অপরকে শক্তিশালী করে তুলেছে। ওপেনএআইয়ের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ:
>> বাজারে প্রবেশ ও ব্যবহারকারীর অভ্যস্ততা ভাঙা।
>> গোপনীয়তা ও ডেটা ব্যবস্থাপনা নীতিমালা।
>> বিশ্বস্ততা গড়ে তোলা-বিশেষত যারা ব্রাউজারে নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেয়।
তবে ওপেনএআইয়ের গতিপথ যদি ঠিক থাকে এবং তারা যদি একযোগে তাদের ব্রাউজার ও এআই এজেন্ট পণ্যকে দক্ষভাবে সমন্বয় করতে পারে, তাহলে এটি প্রযুক্তি খাতের অন্যতম স্মরণীয় প্রতিযোগিতা হয়ে উঠতে পারে।
বৃহত্তর কৌশলের অংশ: হার্ডওয়্যারেও নজর
এই ব্রাউজার প্রজেক্ট ওপেনএআইয়ের বৃহত্তর কৌশলের অংশ। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি হার্ডওয়্যার খাতে প্রবেশ করেছে-এজন্য তারা অ্যাপলের সাবেক ডিজাইন প্রধান জনি আইভ-এর প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি ‘আইও’ অধিগ্রহণ করেছে ৬৫০ কোটি ডলারে। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, ওপেনএআই এখন শুধু সফটওয়্যারে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না, বরং ব্যক্তি ও পেশাগত জীবনের অভিজ্ঞতাকে রূপান্তরিত করতে চায় সার্বিকভাবে।
একটি সম্ভাব্য পরিবর্তনের সূচনা?
ওপেনএআইয়ের ব্রাউজার বাজারে এলে এটি প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। এটা কেবল আরেকটি ব্রাউজার হবে না, বরং এআই-সমৃদ্ধ একটি ডিজিটাল সহচর হিসেবে কাজ করবে-যা আপনার হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে, কাজ সম্পন্ন করতে এবং আপনাকে আরও কার্যকরভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারে সহায়তা করবে। সূত্র: রয়টার্স