মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাওয়ার প্ল্যান্টের পাশে শক্তি-গ্রহণকারী ডাটা সেন্টার নির্মাণ এবং এটির খরচ ও বিশ্বাসযোগ্যতার বিভিন্ন দিক নিয়ে শুক্রবার (১ নভেম্বর) ফেডারেল এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের আয়োজনে একটি প্রযুক্তি-বিষয়ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার (২ নভেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, জেনারেটিভ আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তির জন্য ডাটা সেন্টার নির্মাণে তৎপর থাকায়, এই সেন্টারগুলোর জন্য দ্রুত বিশাল পরিমাণ বিদ্যুৎ সংগ্রহ করা এখন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
ডাটা সেন্টারগুলোকে পাওয়ার প্ল্যান্টের সাথে সরাসরি সংযুক্ত করার পদ্ধতিটি, যা ‘কো-লোকেশন’ নামে পরিচিত, দ্রুত বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়ার একটি কার্যকরী উপায় হিসেবে কাজ করছে। এর ফলে, দীর্ঘ সময় ধরে গ্রিডের সাথে যুক্ত হতে অপেক্ষা করার পরিবর্তে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
‘আমি মনে করি ফেডারেল সরকারসহ এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি, তাদের বিকাশকে উৎসাহিত এবং সমর্থন দেওয়ার জন্য সর্বোত্তম চেষ্টা করা উচিত।’- বলেছেন ফার্কের চেয়ারম্যান উইলি ফিলিপস।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সেন্টারগুলোকে জাতীয় নিরাপত্তা ও মার্কিন অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত অপরিহার্য মনে করেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর অ্যামাজন একটি ডাটা সেন্টার স্থাপন করেছে, যা ট্যালেন এনার্জির মালিকানাধীন পেনসিলভেনিয়ার একটি পারমাণবিক প্ল্যান্ট থেকে সরাসরি শক্তি পায়। এই বছর কনস্টেলেশন ও ভিসট্রাসহ অন্যান্য প্রধান স্বাধীন পারমাণবিক অপারেটরের শেয়ারগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আংশিকভাবে একই ধরনের চুক্তি করার সম্ভাবনার উপর নির্ভর করছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘কো-লোকেটেড ডাটা সেন্টারে’র সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা সাধারণ গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুৎ বিল বাড়ার প্রশ্ন তুলেছে, কারণ এই সেন্টারগুলো গ্রিডের অবকাঠামো এবং জনসাধারণের খরচে পাওয়া সেবাগুলো ব্যবহার করবে।
‘সাধারণ জনগণকে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী পাওয়ার প্ল্যান্টের সাথে ডাটা সেন্টারগুলো সরাসরি সংযুক্ত করার ফলে নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কারণ এটি গ্রিডের থেকে স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে।’
‘‘কো-লোকেটেড সেন্টারগুলো’ কি গ্রিডকে ব্যাকআপ পাওয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে? আর যদি পার্শ্ববর্তী পাওয়ার প্ল্যান্ট অপ্রত্যাশিতভাবে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে পরিস্থিতি কী হবে।’- প্রশ্ন ফেডারেল এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের।
‘গ্রাহক কি এখনও গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নিতে পারবে? যদি তাই হয়, তবে এর প্রভাব অনেক বেশি হবে।’- বলেছেন কমিশনার মার্ক ক্রিস্টি।
এই প্রযুক্তি-বিষয়ক সম্মেলন নতুন ‘কো-লোকেটেড ডেটা সেন্টার’ নির্দেশিকা তৈরি করতে পারে, যা ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন আপগ্রেডের খরচের দায়িত্ব এবং সেন্টারগুলোর চুক্তি পরিচালনার প্রক্রিয়া নির্ধারণ করবে।
ফেডারেল এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন এখন ট্যালেন এনার্জির সাথে আমাজনের ‘কো-লোকেটেড ডেটা সেন্টার’ চুক্তি সম্পর্কে বৈদ্যুতিক ইউটিলিটিগুলোর মধ্যে চলমান নিয়ন্ত্রক বিরোধের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে।
ডাটা সেন্টারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ গ্রিড। এটি প্রায় ১০ লাখ আমেরিকান বাড়ির বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সক্ষম। এখান থেকে ৯৬০ মেগাওয়াট পারমাণবিক শক্তি গ্রহণ করবে সাধারণ জনগণ।
পারমাণবিক প্ল্যান্টের কাছে আরও ‘কো-লোকেটেড ডেটা সেন্টার’ স্থাপন হলে অঞ্চলের সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে অমিল বাড়বে। শুক্রবারে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে উল্লেখ করেন ইলেকট্রিসিটি মার্কেটের কার্যক্রমের নজরদারি করা আঞ্চলিক ট্রান্সমিশন সংগঠন পিজেএম-এর জোসেফ বাউরিং
‘এটি কোনো সমস্যার সমাধান নয়, বরং আসলে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলবে।’- বলেছেন বাউরিং। তিনি সুপারিশ করেন যে, ডাটা সেন্টার নির্মাতাদের উচিত আরও বিদ্যুৎ সংযোগে সহায়তা করা।
গুগলের গ্লোবাল এনার্জি মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ও পলিসির প্রধান ব্রায়ান জর্জ বলেছেন, কো-লোকেটেড উন্নয়নের প্রতি গুগলের আগ্রহ মূলত বিদ্যুৎ প্রাপ্তির প্রয়োজন থেকে তৈরি হয়েছে। এটি সংশ্লিষ্ট খরচ এড়ানোর জন্য নয়।
‘আমরা ওই খরচের আমাদের ন্যায্য অংশের জন্য পেমেন্ট করব’- বলেন জর্জ। সূত্র: রয়টার্স