শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব: নতুন গবেষণায় উদ্বেগজনক ইঙ্গিত

প্রকাশ: শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png নিজস্ব প্রতিবেদক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

সোশ্যাল মিডিয়া শিশু ও কিশোরদের জীবনে দিন দিন বড় জায়গা দখল করছে। তবে এই ব্যবহার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষজ্ঞ ও অভিভাবক মহলে উদ্বেগ রয়েছে। নতুন এক গবেষণা সেই উদ্বেগকে আরও জোরালো করেছে।

 নতুন গবেষণার সতর্কবার্তা
গবেষণায় বলা হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়া অতিরিক্ত ব্যবহার করলে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

কারা পরিচালনা করেছে গবেষণাটি
এই গবেষণাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছে সুইডেনের কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি। কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের হাজার হাজার শিশুর ডিজিটাল আচরণ পর্যবেক্ষণ করেছেন গবেষকরা।

শিশুদের দৈনন্দিন স্ক্রিন ব্যবহারের চিত্র
গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা প্রতিদিন গড়ে আড়াই ঘণ্টা টেলিভিশন বা অনলাইন ভিডিও দেখে। একই সঙ্গে দেড় ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে এবং দেড় ঘণ্টা ভিডিও গেম খেলে।

সব স্ক্রিন টাইম কি সমান ক্ষতিকর?
তবে এসব স্ক্রিন কার্যক্রমের মধ্যে একটি বড় পার্থক্য লক্ষ্য করেছেন গবেষকরা। টেলিভিশন দেখা বা ভিডিও গেম খেলার সঙ্গে শিশুদের মনোযোগ কমে যাওয়ার সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।

সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রেই ঝুঁকি বেশি
বরং গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সঙ্গেই মনোযোগ সমস্যার স্পষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ সব ধরনের স্ক্রিন টাইম একইভাবে ক্ষতিকর নয়।

এডিএইচডির মতো লক্ষণ বাড়ার আশঙ্কা
গবেষকেরা আরও দেখেছেন, ঘন ঘন স্ক্রল করা, বারবার নোটিফিকেশন দেখা এবং নতুন আপডেটের অপেক্ষায় থাকা শিশুদের মধ্যে এডিএইচডির মতো লক্ষণ বাড়ানোর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

এডিএইচডি কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ
এডিএইচডি বা অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার হলো মস্তিষ্কের বিকাশজনিত একটি সমস্যা। এর ফলে মনোযোগের ঘাটতি দেখা দেয় এবং অতিরিক্ত চঞ্চলতার প্রবণতা তৈরি হয়।

গবেষকের ব্যাখ্যা: কেন সোশ্যাল মিডিয়া আলাদা
কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক অধ্যাপক টরকেল ক্লিংবার্গ বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়া শিশুদের জন্য অন্য ডিজিটাল মাধ্যমের তুলনায় আলাদা ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

নোটিফিকেশন ও ‘প্রত্যাশার’ প্রভাব
তার মতে, নোটিফিকেশন, মেসেজ এবং নতুন আপডেটের ধারাবাহিক প্রবাহ শিশুদের বিকাশমান মস্তিষ্ককে বারবার ব্যাহত করে। এমনকি কোনো মেসেজ আসার ‘প্রত্যাশা’ই মনোযোগ নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।

পড়াশোনায় মনোযোগ হারানোর ঝুঁকি
এর ফলে পড়াশোনা, বই পড়া বা অন্য কোনো কাজে দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখা শিশুদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।

ব্যক্তিগত নয়, সামগ্রিক প্রভাবই বড়
গবেষকেরা বলছেন, এককভাবে কোনো শিশুর ওপর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব খুব বেশি নাও দেখা যেতে পারে। কিন্তু যখন অনেক শিশু একইভাবে নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে, তখন সামগ্রিকভাবে এর প্রভাব গুরুতর হয়ে ওঠে।

অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই গবেষণার ফল প্রকাশের আগেই বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ১৬ বছরের নিচের শিশুদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

এখনই সচেতন হওয়ার সময়
নতুন এই গবেষণা শিশুদের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের ক্ষেত্রে শুধু স্ক্রিন টাইম কমানো নয়, বরং সোশ্যাল মিডিয়ার ধরন ও ব্যবহার পদ্ধতির দিকেও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান ও ইন্ডিয়া টুডে।

 

image

আপনার মতামত দিন