তথ্যপ্রযুক্তিখাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে অধ্যায়নে নারীদের উৎসাহিত করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
শনিবার বেসিস উইমেন্স ফোরামের আয়োজনে বেসিস সভাকক্ষে ‘বর্তমান বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
চারটি পর্বে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বেসিস-এর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও বেসিস উইমেন্স ফোরামের আহ্বায়ক সামিরা জুবেরী হিমিকা।
গোলটেবিল বৈঠকে মূলত, বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তিখাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে বেসিসের উইমেন্স ফোরামের কার্যক্রম, সাইবার অপরাধ ও সাইবার নিরাপত্তা, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয় অধ্যায়নে নারীদের অংশগ্রহণ, এ বিষয়ে তাদের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সম্ভাবনা ও সমস্যা, তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক পেশা, ব্যবসায় নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীর সফলতার গল্পগুলোকে কিভাবে অন্যদের অনুপ্রাণিত করার জন্য সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া যায় ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।
গোলটেবিল বৈঠকটির চারটি পর্বের সঞ্চালনায় ছিলেন ফোরামের অন্যতম সদস্য রেজওয়ানা খান এবং আছিয়া খালেদা নীলা।
শুরুর পর্বে বেসিস-এর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও বেসিস উইমেন্স ফোরামের আহ্বায়ক সামিরা জুবেরী হিমিকা বেসিস উইমেন্স ফোরামের বিভিন্ন কার্যক্রম বর্ণনা করে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি নারীর জন্য সম্ভাবনাময় একটি খাত। কিন্তু এক্ষেত্রে নারী অংশগ্রহণ এখনো অনেক কম। এখাতেই নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এর জন্য আমাদেরকে স্কুল পর্যায় হতেই কাজ শুরু করতে হবে। বিশ্বে নারীর সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিতে আমাদের মনোযোগী হতে হবে। সেসাথে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এরজন্য প্রয়োজন তথ্যপ্রযুক্তিতে নারী দক্ষতা উন্নয়ন, সামাজিক অবস্থার উন্নয়নসহ কর্মেক্ষত্রে বৈষম্যহীনতা দূরীকরণ। এছাড়া প্রয়োজন সরকারীভাবে নিয়মনীতির পরিবর্তন পরিমার্জন এবং সংযোজন। এই সমস্যাগুলো সমাধানে সরকারসহ অন্যান্য ফোরাম এবং স্টেকহোল্ডারদের সাথে একসাথে কাজ করবে বেসিস উইমেন্স ফোরাম।
দ্বিতীয় পর্বে বিভিন্ন আইন বা সাইবার অপরাধ থেকে নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চ্যালেঞ্জ এবং নারীদের বিভিন্ন মনোরোগ ও ভোগান্তির বর্তমান অবস্থা নিয়ে এ আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ পুলিশ-এর ডিআইজি (প্রোটেকশন অ্যান্ড প্রটোকল) আমেনা বেগম, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট-এর ব্যারিস্টার নাজমুস সালিহিন এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট-এর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মেখলা সরকার। উক্ত পর্ব সঞ্চালনা করেন ফোরামের অন্যতম সদস্য রেজওয়ানা খান।
তৃতীয় পর্বে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য জাতীয় পাঠ্যক্রমে বিষয় সংযুক্ত ও সচেতনতার বর্তমান অবস্থা, এডটেক প্ল্যাটফর্ম-এর সুবিধা, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে মেয়েদের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য প্রযুক্তিতে সংযুক্তি ও বিভিন্ন প্রকল্পে সেতুবন্ধন করা এবং বিভিন্ন এমএনসি, প্রাইভেট সেক্টরের টেকনোলজি টিমের শীর্ষ ব্যবস্থাপনায় নারীর উপস্থিতি বিষয়গুলো উঠে আসে।
এ পর্বে অংশগ্রহণ করেন, বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা, বিডব্লিউআইটি-এর পরিচালক প্রফেসর নোভা আহমেদ, পিএইচডি, গ্রামীণফোনের উপ-পরিচালক শায়লা রাহমান এবং ক্লাসটিউন-এর ব্যবস্থাপক জান্নাতুল ফেরদৌস। তৃতীয় পর্বের সঞ্চালনা করেন ফোরামের আহ্বায়ক সামিরা জুবেরি হিমিকা।
চতুর্থ বা শেষ পর্বে প্রযুক্তিতে নারীদের জন্য সরকারের উদ্যোগ এবং প্রকল্পগুলোয় বেসিস উইমেন্স ফোরামের উপস্থিতি নিশ্চিত করে প্রকৃত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা, টেক কোম্পানির নেতৃস্থানীয় নারী উদ্যোক্তা, টেক কোম্পানিতে শীর্ষ ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তিতে প্রতিভাবান নারীদের গল্প বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার করা বিষয়গুলো উঠে আসে।
উক্ত পর্বে অংশগ্রহণ করেন, এটুআইয়ের পরামর্শক ভাস্কর ভট্টাচার্যি ও ন্যাশনাল কনসালটেন্ট নাহিদ শারমিন, বাংলানিউজ২৪.কমের সহ সম্পাদক শারমিন ইসলাম এবং টেকওয়ার্ল্ড বিডি-এর সম্পাদক ও প্রকাশক নাজনিন নাহার। পর্বটি সঞ্চালনা করেন ফোরামের অন্যতম সদস্য আছিয়া খালেদা নীলা।
এছাড়াও গোলটেবিল বৈঠকের উপস্থিত ছিলেন ফোরামের অন্যতম সদস্য নাজনিন কামাল, ফুডপান্ডার সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও আম্বারিন রেজা ও বেসিস উইমেন্স ফোরামের সদস্য সাবিলা ইনুন। বেসিস সচিবালয়ের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য সচিব হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজন্য মুগ্ধা।