আইসিটি অলিম্পিয়াডে দ্বিতীয় অধ্যায়ে চমক

প্রকাশ: শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের দ্বিতীয় অধ্যায়ে চমক দেখিয়েছে ঢাকার দক্ষিণ খানের প্রেমবাগানে অবস্থিত একটি স্কুল। শ্রেণীভিত্তিক প্রতিযোগিতায় কে সি মডেল স্কুল নামের এই বিদ্যাপীঠ থেকে চূড়ান্ত পর্বে ডাক পাওয়া ছয় শিক্ষার্থীর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ সহ তিন জনই জিতেছেন পুরস্কার। তিন জনই স্কুলটির ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী।   

বিজয়ীদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র আয়মান রহমান চ্যাম্পিয়ন এবং তৃতীয় শ্রেণীর সৈয়দ আদিয়ান এহসান ও অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী খান জারিফ আল নাসিব নিজ নিজ শ্রেণীতে ফাস্ট রানার আপ হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের এই সফলতায় স্কুলের আইসিটি প্রভাষক আব্দুস সাত্তার পেয়েছেন সেরা গাইডেন্স সম্মাননা। 

চ্যাম্পিয়ন হয়ে আয়মান পেয়েছেন সার্টিফিকেট, ক্রেস্ট, মেডেল ও নগদ ১০ হাজার টাকার ডামি চেক, ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার স্বাস্থ্য বীমা এবং একটি ট্যাব। এখন এই ট্যাবে কোডিং শিখছে বলে জানালেন আয়মানের বাবা মো. গাজীউর রহমান। তিনি জানান, বিজয়ী হওয়ার পর দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে প্রথম (চ্যাম্পিয়ন) আয়মানের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে শতগুণ। সে এখন বড় হয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। 

এখন থেকেই ক্যারিয়ার সচেতন আয়মান বললেন, “স্কুল থেকেই আমি অলিম্পিয়াড সম্পর্কে জানতে পেড়েছি। স্যারের আমাদের এ জন্য বিশেষ ক্লাস নিয়েছেন। এ কারণেই আমি বিজয়ী হতে পেরেছি। এই বিজয়ে বাবা-মা এখন আমাকে আরো উৎসাহ দিচ্ছেন। প্রতিযোগিতায় এআই নিয়ে প্রশ্ন থাকায় এই শিশুটিকে যখন প্রশ্ন করা হলো তুমি কী ভাবো-যদি একদিন কম্পিউটার নিজেই খুব বুদ্ধিমান হয়ে যায়, এআই দিয়ে নিজে নিজে কাজ শিখে নেয়, তাহলে কি তখন মানুষকে আর আলাদা করে অ্যাপ বা সফটওয়্যার বানাতে হবে? আয়মানের উত্তর- এআই তো মানুষ বানায়, তাই মানুষ সবসময় দরকার হবে।”

কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিতে নজর কাড়া কে সি এই স্কুলের পক্ষে সম্মান বয়ে আনা অপর বিজয়ীদের মধ্যে আদিয়ান ও জারিফ প্রত্যেকেই পুরস্কারের সাত হাজার টাকার ডামি চেকের সঙ্গে যথারীতি অর্জন করেছেন একটি ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার স্বাস্থ্য বীমা।

যার দীক্ষায় আইসিটি অলিম্পিয়াডে স্কুলটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলো সেই পুরস্কৃত মেন্টর ও স্কুলটির আইসিটি প্রভাষক আব্দুস সাত্তার বললেন, “এটি আমার জীবনের সেরা স্বীকৃতি। শিক্ষার্থীদের আগ্রহই এই যাত্রার প্রেরণা। আমরা আগামী বছর আরও বড় পরিসরে অংশ নিতে প্রস্তুত করব।” 

সম্প্রতি রাজধানীর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয় আইসিটি অলিম্পিয়াডের চূড়ান্ত পর্ব। তবে এর আগে তিন ধাপে উত্তীর্ণ হতে হয়েছে বিজয়ীদের। অনলাইনে তিনটি পরীক্ষা দিতে হয়েছে আয়োজনকের সরবরাহ করা লিংকে। অ্যাডভান্স সিলেবাসের ওপর অংশ নিতে হয়েছে লিখিত পরীক্ষায়। দেশের ৬৪টি জেলা থেকে প্রাথমিক বাছাইয়ে অংশ নেওয়া ১০ হাজার শিক্ষার্থী থেকে সেমিফাইনালে প্রত্যেক শ্রেণী থেকে ২০ জন করে পেয়েছেন চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার টিকিট। এ ধাপ  নির্বাচিত হন ২৯০ জন প্রতিযোগী। এর মধ্যে প্রতিটি শ্রেণী থেকে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ মিলিয়ে পুরস্কৃত করা হয় ৩৯ জনকে। 

বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিইউবিটি অধ্যক্ষ্য ডক্টর এ বি এম শওকাত আলী। বিচারক প্যানেলের প্রধান ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস এর আইকিউএসি পরিচালক প্রকৌশলী সাফায়েত হোসেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্পেস ইনোভেশন ক্যাম্পের প্রেসিডেন্ট এবং নাসা স্পেস অ্যাপ চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের উপদেষ্টা আরিফুল হাসান অপু এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং চেয়ারম্যান মো. তাহজিবুল ইসলাম।    

প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ শেষে কে সি মডেল স্কুল থেকে ফাইনালের টিকিট পাওয়া ছয় জনকেই দেয়া হয় সংবর্ধনা। এসময় প্রতিষ্ঠানের এডভাইজর বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মুশফিকুর রহমান, অধ্যক্ষ অধ্যক্ষ আবদুল বাতেন, সিনিয়ির উইং এর ভিপি এমডি সারোয়ার আলম, সিনিয়র উইং এর ভিপি সালমা ফৌজিয়া নূর  প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

শিক্ষার্থীদের নিবিঢ় প্রশিক্ষণ ও গাইডেন্স দেয়ায় মেন্টর আব্দুস সাত্তার-কে ধন্যবাদ জানিয়ে অধ্যক্ষ বাতেন জানান, “আইসিটি অলিম্পিয়াডে এই সাফল্য প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। তারা ভবিষ্যতেও প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সকল সুযোগ দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। স্কুল পরিচালনা বোর্ড মনে করে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে কো-কারিকুলার কার্যক্রম অপরিহার্য।”

আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ শাহরিয়ার খান বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হল প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যৎ গড়তে আগামীর প্রজন্মকে তৈরি করা। এই অলিম্পিয়াড শুধু প্রতিযোগিতা নয়, বরং একটি প্ল্যাটফর্ম যা তরুণদের দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করে।” 

আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান নিপু বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে তারা দেশকে এগিয়ে নিতে পারে।” 

প্রোগ্রাম কো-কনভেনার গোলাম সারোয়ার বলেন,  “আইসিটি অলিম্পিয়াড কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয়, এটি একটি মিশন-যেখানে আমরা তরুণদের প্রযুক্তি-দক্ষতা, উদ্ভাবনী শক্তি এবং নেতৃত্বের গুণাবলি গড়ে তুলতে কাজ করছি। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়তে তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে, আর আমরা সেই পথ তৈরিতে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।” 
image

আপনার মতামত দিন