তথ্যপ্রযুক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বিদ্যমান সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিকে আরও জোরালো করতে আইসিটি শিল্পের প্রধান বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) ‘প্রকৃতিতে আনন্দে, প্রযুক্তিতে একসাথে’ শিরোনামে ‘বিসিএস কার্নিভাল ২০২৫’ উদযাপন করেছে। নানা আয়োজনে উৎসব মুখর ছিল অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ। দিনব্যাপী এই উৎসব হয়ে উঠে এক প্রাণবন্ত মিলনমেলা। যেখানে একসাথে ছিল আনন্দ আর ঐক্য।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) গাজিপুর কালিয়াকৈর সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে শালদহ ইকো রিসোর্টে দিনব্যাপী এই ‘বিসিএস কার্নিভাল ২০২৫’ উদযাপিত হয়।
আয়োজনে বিসিএস সভাপতি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিসিএস কার্নিভাল ২০২৫’ উদযাপন ও আনন্দ আয়োজনে এই সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল সদস্য, কার্যনির্বাহী কমিটি ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সকলকে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। বিসিএস তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নেতৃত্ব প্রদানকারী সংগঠন। এই সংগঠনের প্রতি মানুষের আশা ভরসা পূরণ করতে আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ বাস্তবায়নে বিসিএস সারাদেশে নিজস্ব কার্যক্রম পরিচালিত করে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিসিএস এমন একটি সংগঠনের নাম, যে সংগঠনটি সবসময় আইসিটি খাতকে সমৃদ্ধ করতে প্রাণান্তর চেষ্টা করে যাচ্ছে। সরকারের পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বাস্তবায়নে বিসিএস একনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘আপনার জেনে আনন্দিত হবেন যে, আমরা তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সহযোগিতায় আগামী নতুন বছরে ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো-২০২৬’ আয়োজন করতে যাচ্ছি। মেলার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৬ সালের ২৯ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। এই আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির হারানো জৌলুস ফিরিয়ে আনতে চাই।’
বিসিএস সভাপতি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের প্রযুক্তি বাজারের যে সাইজ রয়েছে সেটা কিভাবে তিনগুণ বাড়ানো যায় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এর জন্য প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা। তাই আগামী বাজেটে সরকার যেনো আমাদের প্রযুক্তি পণ্য খাতে ব্যবসায়ীদের জন্য সর্বোচ্চ বাজেট রাখে সে জন্য আমরা সরকারকে অনুরোধ করবো। আমরা চাই এ বিষয়ে সকালের সম্মিলিত আন্তরিক প্রচেষ্টা। সবাই একসঙ্গে কাজ করলে আশা করছি, আমরা এই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবো।’
বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের উল্লেখ করে বিসিএস সভাপতি বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে আমরা যদি বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের দিকে তাকাই, তাহলে দেখবো, সবার বাজেটের একটা বড় অংশ ১ থেকে ২ পার্সেন্ট, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আড়াই পার্সেন্ট পর্যন্ত আইসিটি ও সফটওয়্যার অটোমেশনের উপরে বাজেট তৈরি করা হয়। বাংলাদেশের মাত্র .৫ পার্সেন্টের নিচে আইসিটি খাতের বাজেট করা হয়। এটাকে আমাদের অবশ্যই ১ পার্সেন্টে উন্নীত করতে হবে। আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য আইসিটি উপরে ইনভেস্টমেন্ট করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। এখানে যারা আমাদের সন্তানরা আছে, তারাই আমাদের আগামী দিনের কর্ণধার ও সম্পদ। এই সম্পদকে কাজে লাগানোর জন্য এ মুহূর্তে আমাদের জন্য একটাই রাস্তা খোলা আছে। সেটা হলো সবাই যেনো আমরা আইসিটিতে দক্ষ হতে পারি।’
আয়োজনে পৃষ্ঠপোষক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের শুভকামনার পাশাপাশি তাদেরকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানান বিসিএস-এর কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যরা। অনুষ্ঠানে বিসিএস শাখা কার্যকরী কমিটি প্রতিনিধির হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন বিসিএস-এর সভাপতি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। এসময় সহ-সভাপতি মো. ওয়াহিদুল হাসান দিপু, মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব মো. আহসানুল ইসলাম নওশাদ, কোষাধ্যক্ষ আবুল হাসান, পরিচালকদ্বয় মো. নজরুল ইসলাম হাজারী ও মো. ইকবাল হোসাইনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক এবং বিসিএস মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কার্যনির্বাহী পরিষদের সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ও অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা এই আয়োজন সম্পন্ন করেছি। আপনাদের সকলের অংশগ্রহণ আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। সহযোগী প্রতিষ্ঠানসহ যারা এই অনুষ্ঠানকে সফল করতে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কাজ করে গিয়েছেন তাদের প্রতি আমরা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই অনুষ্ঠানের সফলতা আপনাদের।’
অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কোষাধ্যক্ষ আবুল হাসান বলেন, ‘আমরা সবসময় বিসিএস-এর সদস্য ও তাদের পরিবারের জন্য ভিন্ন কিছু আয়োজন করার চেষ্টা করি। তারই ধারাবাহিকতায় ‘বিসিএস কার্নিভাল ২০২৫’-এর আয়োজন। মেগা ইভেন্টের আয়োজনে ভুল ত্রুটিগুলোকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে প্রযুক্তি খাতে ‘বিসিএস কার্নিভাল ২০২৫’ উদযাপন স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলেই আমি কামনা করছি। সামনের দিনে সদস্য ও তার পরিবারের জন্য আরও নতুন কিছু করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে’।
আয়োজনে ছোটদের জন্য ছিল বিস্কুট ও ১০০ মিটার দৌড়, লুডু, দাবা, কবিতা আবৃত্তি, গান ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। পুরুষ সদস্যদের ফুটবল, ক্রিকেট, হাঁড়িভাঙা, রশি টানাটানি এবং নারীদের জন্য পিলোপাসিং প্রতিযোগিতা। পাশাপাশি আইসিটি খাতের নেতৃবৃন্দ, স্টেকহোল্ডার, উদ্যোক্তা এবং অংশীজনদের সঙ্গে পেশাগত মতবিনিময়, টিম বিল্ডিং কার্যক্রম। এছাড়াও অংশগ্রহণকারীরা ভেন্যু ভ্রমণ করার জন্য বৈদ্যুতিক গাড়িতে ভ্রমণ, ক্যাবলে চড়া, বোটিং, সুইমিং, ছোট শিশুরা বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় চমকপ্রদ সময় কাটিয়েছেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে ইনকিলাব মঞ্চের প্রধনা সমন্বয়ক ও ঘাতকের বুলেটে নিহত শহীদ শরিফ ওসমান হাদি’র রুহের মাগফেরাত কামনা করে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়।
দিনব্যাপী এই আয়োজনের সঞ্চালনায় ছিলেন বিসিএস পরিচালক মো. ইকবাল হোসাইন। অভ্যর্থনা এবং অতিথি ব্যবস্থাপনা পরিচালনায় ছিলেন বিসিএস মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান জনাব আবু তুহিন চৌধুরী। কো-কনভেনর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কোষাধ্যক্ষ আবুল হাসান। পরিবহন ব্যবস্থাপনায় ছিলেন পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম হাজারী। খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন সহ-সভাপতি মো. ওয়াহিদুল হাসান দিপু এবং যুগ্ম মহাসচিব মো. আহসানুল ইসলাম নওশাদ।
‘বিসিএস কার্নিভাল ২০২৫’ উদযাপন অনুষ্ঠানে বিসিএস-এর সাবেক মহাসচিব ও স্পিড টেকনোলজি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুমন, বিসিএস উপদেষ্টা, বিসিএস-এর প্রাক্তন সভাপতি, সহসভাপতিসহ প্রযুক্তি খাতের প্রখ্যাত ব্যক্তিদের পদচারণায় সারা দেশ থেকে বিসিএস সদস্যদের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠান মহামিলন মেলায় পরিণত হয়।
অনুষ্ঠানে সহযোগী প্রতিষ্ঠান ছিল আসুস, ব্রাদার, কিউডি, দাহুয়া, ডেল, ডিজিটালএক্স, ইপসন, লেনেভো (গ্লোবাল ব্র্যান্ড পিএলসি), জেস্কিল, হিকভিশন, এইচপি, এআইটিসি কিংসম্যান (মিজান ট্রেড), পেন্টাম, ডিভেজ্ঞার (ইউসিভি), রায়ান্স কম্পিউটারস, লেনেভো (স্মার্ট টেকনোলজিস লি.), স্টার-টেক ইঞ্জিনিয়ারিং লি., টেন্ডা (সাউথবাংলা কম্পিউটার), টোটোলিংক, টিপিলিংক, এক্সেল টেকনোলজিস লি., ট্রান্সসেন্ড, ইউসিসি, ইউনিভিউ, কম্পিউটার সিটি টেকনোলজিস লি., ডিসিসি (ঢাকা কম্পিউটার সিটি), ড্রিম টেক, এটুজেড, কিংস্টোন (মার্ভেলাস কম্পিউটার), হেন্স বাংলাদেশ।
সারাদেশ থেকে বিসিএস সদস্য, সদস্যদের পরিবার, প্রাক্তন এবং বর্তমান কমিটির পরিচালকবৃন্দসহ দেশের আইসিটি খাতের উচ্চ পদস্থ সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তারা ‘বিসিএস কার্নিভাল ২০২৫’-এ উপস্থিত ছিলেন।
শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র্যাফেল ড্রর মাধ্যমে দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।