বাংলাফ্যাক্টের অনলাইন যাত্রা শুরু

প্রকাশ: শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪ রিপোর্ট
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর ফ্যাক্ট চেকিং উদ্যোগ 'বাংলা ফ্যাক্ট'-এর একটি ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়েছে। 

ভুয়া সংবাদ প্রতিরোধ ও সত্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে শুরু হওয়া এই উদ্যোগটি এতোদিন কেবল সোশ্যাল মিডিয়াতেই সীমাবদ্ধ ছিলো।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর)  পিআইবির 'গণমাধ্যমে জুলাই ও তারপর' শীর্ষক প্রকাশনা উৎসব ও আলোচনা অনুষ্ঠানে বাংলাফ্যাক্টচেক এর এই নিজস্ব ঠিকানাটি (ওয়েবসাইট) উদ্বোধন করলেন তথ্য উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। উদ্বোধনের পর কোনো এই ঠিকানাটিতে গেলেই ভার্চুয়াল আতশবাজি ফুটিয়ে ভিজিটরকে স্বাগত জানানো হয়। ওয়েবসাইটটিতে ফ্যাক্টচেক এর পাশাপাশি রয়েছে এক্সপ্লেইনার, বিশ্লেষণ, অনুসন্ধান, মিডিয়া লিটারেসি ও ভিডিও ট্যাব। 

পিআইবির পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ফিরদৌস আজিমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ, লেখক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এবং লেখক ও গবেষক সাইমুম পারভেজ উপস্থিত ছিলেন। 

পিআইবির তথ্য ও গবেষণা কর্মকর্তা সহুল আহমেদ মুন্নার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ওয়েবসাইটের পাশাপাশি  জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে পিআইবির পাঁচটি প্রকাশনা ‘তারিখে জুলাই’, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবিতা’, ‘নিরীক্ষা: অভ্যুত্থান মিডিয়া বয়ান’, ‘যে সাংবাদিকদের হারিয়েছি’ এবং ‘ঘটনাপঞ্জি ২০২৪’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। পাঁচটি প্রকাশনার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন পিআইবির জ্যেষ্ঠ প্রশিক্ষক গোলাম মোর্শেদ।

সন্ধ্যায় ঢাকায় প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘আজকে টেলিভিশন অনুমোদন নিয়ে যে হাহাকার, এই হাহাকার হচ্ছে পুরাতন বন্দোবস্ত এবং যারা মনে করে যে নতুন কোনো মানুষ বা নতুন কোনো মুখ যাতে না আসে, তাদের হাহাকার। এগুলো আমরা বুঝি। এ জন্য আমি গতকাল স্পষ্ট বলেছি এবং আমি যদি এক দিনও থাকি সরকারে, আমি চেষ্টাটাই করব যে আমি নতুন মিডিয়া (গণমাধ্যম) দিয়ে দেব। আমরা যেহেতু ফ্যাসিবাদের মিডিয়া বন্ধ করিনি, আমরা নতুন মিডিয়া দেব।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘নতুন মিডিয়ার মাধ্যমে নতুন মুখ আসবে, নতুন ন্যারেটিভ আসবে, নতুন বক্তব্য আসবে এবং এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে বক্তব্যের লড়াই হবে। যেহেতু আমরা ভায়োলেন্সে (সহিংসতা) যাইনি, ফলে বক্তব্যের বিরুদ্ধে বক্তব্যের লড়াই ও চিন্তার বিরুদ্ধে চিন্তার লড়াইয়ে আমরা যাব। আমরা মনে করি, আমরা অবশ্যই জয়ী হব। এগুলো খুবই স্পষ্ট কথা। এখানে কোনো ধোঁয়াশা রাখার কিছু নেই।’

“মব ভায়োলেন্স” নিয়ে ন্যারেটিভ তৈরী করে কীভাবে এটিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ফলাফল হিসেবে গণমাধ্যমে দেখানো হচ্ছে, তা নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 


তিনি বলেন, “মব ভায়োলেন্স জিনিসটা এখন এক বছর পরে এসে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সাথে মেলানো হচ্ছে।রাজনৈতিক সভা-সমাবেশকেও মব বলা হয়েছে। বিশেষ করে একটি দলের প্রধান নূরুল হক নূরকে মারধরের ক্ষেত্রে।

তিনি বলেন, “এই মব ভায়োলেন্স থেকে আরও অনেকগুলি ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে। ঘুরেফিরে বয়ানটা এমন এক জায়গায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে, …আপনাদের মনে থাকবে, ৮ই আগস্টে, ৮ই আগস্টে বা ৬ আগস্ট হবে, সজীব ওয়াজেদ জয় কিন্তু একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন, ‘মবোক্রেসি বলে। আজকে বাংলাদেশকে ঘুরেফিরে ওই শব্দের ভিতর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা এখানে অনেক কিছু হয়তো সামাল দিতে পারি নাই।’

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ্ বলেন, মবেরও তো একটা সমাজতত্ত্ব আছে। মাও সেতুঙয়ের একটা কথা আছে, বিপ্লব কোন ডিনার পার্টি নয়। জুলাইয়ে সেরকম কিছুই হয়নি, অনেক কম হয়েছে। সামনের দিনে কেউ যদি আবারও ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠে আবারও গণঅভ্যুত্থান করতে হতে পারে।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চিন্তাবিদ ও লেখক সলিমুল্লাহ খান বলেন, সংবিধান তো বারবার সংশোধন হয়েছে, অনেকে নতুন একটা সংবিধান নিতে ভয় পাচ্ছেন। মনে হচ্ছে সংবিধান নতুন করে করলে দেশ বঙ্গোপসাগরে পড়ে যাবে।

সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘জুলাইয়ের ঘটনাকে একসময় মৌলবাদীদের বিপ্লব বলে প্রচার করা হবে। অনেকে তালেবানের বিপ্লব বলছেন জুলাইকে। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রসবোধ কম নয়।

 তিনি বলেছেন, আমার তো দাড়ি নেই তালেবানের সরকার কীভাবে হলাম। পৃথিবীর অন্যসব বিপ্লবের পর অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, আমাদের জুলাইয়ের পর তো তেমন করে ঘটেনি। মব মব বলে যারা চিৎকার করছেন তারা আবার আমাকে হত্যাকারীকে উৎসাহিত করছি বইলেন না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গবেষক ও লেখক সাইমুম পারভেজ বলেন, ‘শেখ হাসিনার শাসনামলে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক কর্মীরা, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন সংবাদকর্মীরা। সাংবাদিকরা ফ্যাসিস্টের পক্ষে লিখেছে বলেছে এমনটির সংখ্যা যেমন আছে, একটা বড় অংশ আছেন যারা তাদের পেশাগত দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেছেন। সেটি করতে গিয়ে হামলা ও হেনস্তার শিকার হয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর গণতান্ত্রিক জাগরণের আশাবাদ তৈরি হয়েছে৷ দলগুলো বিভেদে জড়াচ্ছে৷ তবে আলোচনা ও ঐক্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যাবে, সে রকম একটি দেশ দেখা যাচ্ছে৷ সামনের দিনে এটা বহাল থাকুক৷ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হোক পলিসির৷

স্বাগত বক্তব্যে পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান সমাজের ভেতরে বহুকাল প্রভাব ফেলে যাবে। অথচ এত বড় আত্মদান নিয়ে অনেক গণমাধ্যমের মধ্যে অস্বস্তি দেখা যায়। জুলাইয়ের ইতিহাস গণমাধ্যম পুরোপুরি ধারণ করেনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘সমাজে-রাজনীতিতে এখনো জুলাইয়ের আগুন থাকলেও সেটা সবচেয়ে অস্পষ্ট গণমাধ্যমে৷ গণহত্যার সমর্থকদের এখনো গণমাধ্যমে দেখা যায়।’ ফ্যাসিবাদের পক্ষের গণমাধ্যমের অনুতাপহীনতা তাদের প্রতি মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে রাখছে কি না, এই প্রশ্ন রাখেন ফারুক ওয়াসিফ।

image

আপনার মতামত দিন