বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ এবং কোরিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদারকরণ, ব্যবসা সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ব্যবসায়িক সহযোগিতা জোরদার করতে বেসিস কোরিয়া ডেস্ক গঠন করেছে। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার বেসিস অডিটোরিয়ামে বেসিস কোরিয়া ডেস্কের উদ্বোধন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
দক্ষিণ কোরিয়া একটি অত্যন্ত উদ্ভাবনমুখী ও প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি, যেখানে বাংলাদেশের আইসিটি খাতের জন্য রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। এই নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশি আইসিটি প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে কার্যকর অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে পারবে। বেসিস কোরিয়া ডেস্ক হবে একটি কৌশলগত প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে জ্ঞান বিনিময় এবং যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ সহজতর হবে এবং বাজার সম্প্রসারণের দ্বার উন্মোচন করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, এনডিসি। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং সিক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের যুগ্মসচিব (আইসিটি প্রমোশন ও গবেষণা অনুবিভাগ, অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. তৈয়বুর রহমান, কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (কোইকা) কান্ট্রি ডিরেক্টর কিম তায়ইয়োং, কোরিয়ান কমিউনিটি ইন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ইউ ইয়ং ওহ, বাংলাদেশ-কোরিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (কেবিসিসিআই) সভাপতি শাহাব উদ্দিন খান, বেসিস কোরিয়া ডেস্কের চেয়ারম্যান এডওয়ার্ড কিম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বেসিস সহায়ক কমিটির সদস্য (প্রশাসন) মো. ইমরুল কায়েস পরাগ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেসিস সহায়ক কমিটির সদস্যবৃন্দ, বেসিস সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বেসিস সহায়ক কমিটির সদস্য (অর্থ) ফৌজিয়া নিগার সুলতানা। তিনি বলেন “বেসিস কোরিয়া ডেস্ক-এর সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে “কোরিয়া ডে” পালন, কোরিয়ান বাজারে প্রবেশে নীতিগত সহায়তা, কোরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে সেমিনার, প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা আয়োজন এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যৌথ উদ্যোগ বা ফ্র্যাঞ্চাইজিংয়ের সুযোগ। এছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্রাপ্ত ব্যবসায়িক অনুসন্ধান বা লিড সদস্যদের মধ্যে শেয়ার করা হবে, কোরিয়া ভিত্তিক বিভিন্ন আইসিটি ইভেন্টে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে, এবং কোরিয়ান কোম্পানিগুলোর সঙ্গে নেটওয়ার্কিং ও বিটুবি সেশনের আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি, বাংলাদেশে অবস্থিত দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাসের সঙ্গে প্রকল্প গ্রহণ ও কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কয়কা), কোরিয়া ট্রেড-ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন এজেন্সি (কট্রা)-এর মতো কোরিয়ান উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত ও নীতিগত সহায়তা প্রদান করা হবে।”
বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং সিক উভয় দেশের জন্য এর পারস্পরিক সুবিধাগুলি তুলে ধরে এই উদ্যোগের প্রতি তার উচ্ছাস প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “বেসিস কোরিয়া ডেস্ক আইসিটি সেক্টরে বাংলাদেশ ও কোরিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান সমন্বয়ের একটি মাইলফলক। আমি আশা করি বেসিস- কোরিয়া ডেস্ক কোরিয়ার রফতানি বাজারকে আরো সমৃদ্ধ করবে। আমি আত্মবিশ্বাসী যে এই উদ্যোগ দুই দেশের তথ্যপ্রযুক্তি এবং সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদারকরণ ও ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং ব্যবসায়িক সহযোগিতা জোরদার করতে অত্যন্ত কার্যকারী ভূমিকা রাখবে।”
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের যুগ্মসচিব (আইসিটি প্রমোশন ও গবেষণা অনুবিভাগ, অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো: তৈয়বুর রহমান বলেন, “বেসিস কোরিয়া ডেস্ক শুধু একটি প্ল্যাটফর্ম নয় বরং এর মাধ্যমে বেসিস সদস্যদের জন্য তথা বাংলাদেশী তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে বলে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বেসিস কোরিয়া ডেস্কের এই উদ্যোগ বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী আইটি হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করবে।”
বেসিস কোরিয়া ডেস্কের চেয়ারম্যান এডওয়ার্ড কিম বলেন "বেসিস কোরিয়া ডেস্ক বাংলাদেশী এবং কোরিয়ান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির মধ্যে কৌশলগত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করবে। বেসিস কোরিয়া ডেস্কের যাত্রা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে শক্তিশালী করতে এবং বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশকে তথ্যপ্রযুক্তির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে, বাংলাদেশ এবং কোরিয়া উভয় দেশের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে একটি পারস্পরিক ব্যবসায়িক শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরি করতে সক্ষম হবে।"
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, এনডিসি বলেন, "দক্ষিণ কোরিয়ার ট্রিলিয়ন-ডলারের প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি ও শক্তিশালী ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার (ডিপিআই) কৌশলগত সহযোগিতার জন্য একটি আদর্শ মডেল তৈরি করেছে। বাংলাদেশ তার দৃঢ়, প্রাণবন্ত তরুণ জনগোষ্ঠী এবং সংস্কারভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্ভাবনী প্রবৃদ্ধির সাথে সমানতালে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বেসিস কোরিয়া ডেস্কের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে উভয় দেশ একসঙ্গে ডিজিটাল অর্থনীতির বিশাল সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে, যা পারস্পরিক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।"
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বেসিস সহায়ক কমিটির চেয়ারম্যান রাফেল কবির। তিনি বলেন, “বেসিস কোরিয়া ডেস্ক প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে কোরিয়ার বিশাল বাজারের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করা। এ উদ্যোগের মাধ্যমে প্রযুক্তি ও জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা আমাদের আইটি পেশাজীবীদের দক্ষতা উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একইসঙ্গে, কৌশলগত সহযোগিতার ভিত্তিতে একটি টেকসই অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব হবে, যা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে একটি শক্তিশালী আইটি হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে।”
বেসিস দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, এই উদ্যোগ বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য একটি মাইলফলক হবে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে। বেসিস কোরিয়া ডেস্কের মাধ্যমে উভয় দেশের আইসিটি খাতে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।