বিশ্বের প্রথম পোর্টেবল বিকিরণ শনাক্তকারী যন্ত্র ‘র‌্যাডসেফ’ 

প্রকাশ: সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png নিজস্ব প্রতিবেদক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

দেশের তরুণ উদ্ভাবকদের হাতে প্রযুক্তিনির্ভর নতুন নতুন উদ্যোগে যুক্ত হচ্ছে নানা সম্ভাবনা। সেই ধারায় এবার আলোচনায় এসেছে ‘র‌্যাডসেফ: আইওটি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর পারমাণবিক বিকিরণ সুরক্ষা ব্যবস্থা’। 

দেশের প্রথম স্থানীয়ভাবে তৈরি এই পারমাণবিক বিকিরণ শনাক্তকরণ ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা ইতোমধ্যে অর্জন করেছে জাতীয় স্বীকৃতি। সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ আইসিটি অ্যান্ড ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫’-এ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রকল্পটি দেশীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

র‌্যাডসেফ (RADSAFE) উদ্ভাবন করেছেন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (মিস্ট) নিউক্লিয়ার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মুবিন হোসেন অমিয়। এটি বিশ্বের প্রথম পোর্টেবল বিকিরণ শনাক্তকারী যন্ত্র, যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের মাধ্যমে জরুরি উদ্ধার পথ নির্ধারণের সুবিধা রয়েছে।

কীভাবে কাজ করে
হাতে ধরার মতো ছোট এই যন্ত্রটি প্রতি ১৫ সেকেন্ড পরপর রিয়েল-টাইমে বিকিরণের মাত্রা জানায়। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে জিপিএস ট্র্যাকিং, পরিবেশগত তথ্য পরিমাপ ও ক্লাউডভিত্তিক ডেটা সংরক্ষণ সুবিধা। জরুরি পরিস্থিতিতে যন্ত্রটি মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির মাধ্যমে বিকিরণজনিত অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করে এবং কম বিকিরণযুক্ত নিরাপদ পথ বিশ্লেষণ করে উদ্ধারকারী দল বা আটকে পড়া ব্যক্তিকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেয়।

কেন গুরুত্বপূর্ণ
বিশ্বজুড়ে প্রচলিত বিকিরণ পর্যবেক্ষণ যন্ত্রের দাম অনেক বেশি এবং বেশিরভাগই রিয়েল-টাইম তথ্য দেয় না। ফলে উন্নয়নশীল দেশে পূর্ণাঙ্গ বিকিরণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা কঠিন। র‌্যাডসেফ এই সীমাবদ্ধতা দূর করে বাংলাদেশে সাশ্রয়ী মূল্যে আধুনিক বিকিরণ নিরাপত্তা প্রযুক্তি এনে দিচ্ছে। এটি পারমাণবিক স্থাপনা, হাসপাতাল, সীমান্ত নিরাপত্তা, গবেষণা কেন্দ্র ও জরুরি উদ্ধার কার্যক্রমে ব্যবহারের উপযোগী।

মুবিন হোসেন অমিয়, ‘র‌্যাডসেফের মাধ্যমে আমরা এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করতে চেয়েছি, যা শুধু বিশেষজ্ঞ নয়, সাধারণ ব্যবহারকারীরও কাজে লাগবে। আমাদের লক্ষ্য ছিল বিকিরণ সুরক্ষাকে সহজ, কার্যকর ও সাশ্রয়ী করা।’

ব্যবহারের ক্ষেত্র
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সুরক্ষা, পারমাণবিক চিকিৎসা কেন্দ্র, সীমান্ত নিরাপত্তা (অবৈধ পারমাণবিক উপাদান পাচার রোধে), জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ সব ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যাবে র‌্যাডসেফ।

নবপ্রবর্তন ও মান
বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো যন্ত্রে আইওটি সেন্সর, জিপিএস ও মেশিন লার্নিং বিশ্লেষণ একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে। হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ডিভাইস। পেশাদার যন্ত্রের সঙ্গে ক্যালিব্রেট করা র‌্যাডসেফের নির্ভুলতা ±২ শতাংশ এবং এটি আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর মানদণ্ড অনুযায়ী তৈরি।

প্রভাব ও সম্ভাবনা
র‌্যাডসেফের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রযুক্তির ভোক্তা থেকে উদ্ভাবকের অবস্থানে পৌঁছাচ্ছে। এটি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ও স্মার্ট নিরাপত্তা কাঠামোর লক্ষ্য পূরণের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রযুক্তিবিদরা মনে করছেন, এই উদ্ভাবন ভবিষ্যতে দেশের পারমাণবিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ভূমিকা রাখবে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।

image

আপনার মতামত দিন