বর্তমান ডিজিটাল যুগে তথ্যই হয়ে উঠেছে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আর সেই তথ্য সুরক্ষিত রাখা আজকের সময়ের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। একবিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধ কেবল অস্ত্র বা গোলাবারুদ দিয়ে হয় না।এখন যুদ্ধ চলে তথ্য, কোড এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে। ক্লাউড-নেটিভ অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার যেভাবে দ্রুত বাড়ছে, সেই সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে সাইবার হুমকির ধরনও। ফলে তথ্যযুদ্ধের এই যুগে আমাদের নিরাপত্তার নতুন ফ্রন্টলাইনে দাঁড়িয়ে মোকাবিলা করতে হচ্ছে আরও জটিল ও স্মার্ট সাইবার আক্রমণ। আর সেটিই হলো, ক্লাউড-নেটিভ অ্যাপ্লিকেশন সিকিউরিটি।
ক্লাউড-নেটিভ অ্যাপ মানে এমন সফটওয়্যার যেগুলো ক্লাউডে তৈরি হয়, পরিচালিত হয় এবং স্কেল করে। এতে থাকে কনটেইনার, মাইক্রোসার্ভিস, সিআই/সিডি পাইপলাইন। সব কিছুই অটোমেটেড, দ্রুত ও নমনীয়। কিন্তু নিরাপত্তা না থাকলে এই প্রযুক্তিই হয়ে উঠতে পারে সবচেয়ে বড় হুমকি।
বাস্তব চিত্র দেখলে আতঙ্কিত হতে হয়। ভুল কনফিগারড কনটেইনার থেকে ফাঁস হচ্ছে গ্রাহকের আর্থিক তথ্য। এপিআই নিরাপত্তার অভাবে হাজার হাজার ব্যবহারকারীর তথ্য চুরি হচ্ছে। সঠিক রোল-ভিত্তিক এক্সেস কন্ট্রোল ছাড়া কুনেটস কুবেরনেটিস ক্লাস্টার হ্যাক হচ্ছে। বাংলাদেশে সরকারি সেবা, মোবাইল ব্যাংকিং, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে দ্রুত ক্লাউড-নির্ভরতা বাড়ছে। কিন্তু প্রশ্ন একটাই আমরা কি এই দ্রুতগতির সফটওয়্যার বিপ্লবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি?
এখন কী করণীয়?
> সুরক্ষা-বান্ধব ডেভঅপস সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
> এপিআই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
> সিআই/সিডি পাইপলাইনে সিকিউরিটি স্ক্যানিং বাধ্যতামূলক করতে হবে।
> ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যাজ কোড (আইএসি) এর নিরাপত্তা যাচাই করতে হবে।
> জাতীয় পর্যায়ে ক্লাউড সিকিউরিটি পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করতে হবে।

ভবিষ্যতের পথে সুরক্ষিত বাংলাদেশ
সরকার চাইলে প্রাইভেট ক্লাউড ইনিশিয়েটিভ চালু করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেশের ভেতরে সংরক্ষণ করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়, আইটি কোম্পানি এবং স্টার্টআপদের নিয়ে ট্যালেন্ট ডেভেলপমেন্ট, হ্যাকাথন, বাগ বাউন্টি, ক্লাউড সিকিউরিটি ল্যাব,এসব উদ্যোগ নিতে হবে এখনই।
গার্টনারের মতে, ২০২৫ সালের মধ্যে ৯০% নতুন সফটওয়্যার হবে ক্লাউড-নেটিভ। বাংলাদেশ যদি প্রস্তুত না থাকে, তবে নিরাপত্তাহীন প্রযুক্তিই হতে পারে উন্নয়নের বড় বাধা।
সময় এখনই নিরাপদ ক্লাউড নিশ্চিত করার
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে নিরাপদ ক্লাউড হতে হবে ভিত্তি। তথ্য যেখানে নিরাপদ নয়, সেখানে ডিজিটাল উন্নয়ন টেকসই হতে পারে না। আসুন, আমরা সবাই মিলে তৈরি করি এক নিরাপদ, আত্মনির্ভর, প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ।
লেখক: শরীফ আহসান, প্রশিক্ষক ও গবেষক, নেটওয়ার্ক, সার্ভার অ্যান্ড সিকিউরিটি, হেড অব ডিপার্টমেন্ট ট্রেনিং অ্যান্ড সল্যুশনস টেক এলিভেট, আর্থ কমিউনিকেশন লিমেটেড, রেইস অনলাইন লিমিটেড এবং ঢাকা কোলো।