দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও করণীয়

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বাংলাদেশ-এই দুটি শব্দ এক অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। বাংলাদেশ তার নিজস্ব ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশের দুর্যোগপ্রবণ হওয়ার মূল কারণসমূহ হলো এর নিম্নভূমি ও ডেল্টা অঞ্চল, বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী অবস্থান এবং শত শত নদীর উপস্থিতি।

এছাড়া মৌসুমী বায়ুপ্রবাহ, ট্রপিক্যাল সাইক্লোন, বন উজাড়, ভূমি অবক্ষয় ও জনবসতির ঘনত্ব ও ঝুঁকি বাড়ায়। এ কারণে দেশটি ভূমিকম্প, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতি সংবেদনশীল। 

প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলে প্রতিনিয়ত জলাবদ্ধতা, ভূমিধস, অগ্নিকাণ্ড, সড়ক দুর্ঘটনা ইত্যাদি মানবসৃষ্ট দুর্যোগ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি করছে। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেমন, ঘরবাড়ি, দালানকোঠা ইত্যাদি নির্মাণের ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে শক্তিশালী ও ভূমিকম্প সহনশীল ভবন নির্মাণ এখন সম্ভব হয়েছে। 

সিসিটিভি ও সেন্সর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আগুন বা গ্যাস লিকেজ শনাক্তকরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, নদীখনন ও পুনর্নির্মাণ, আধুনিক জলাবদ্ধতা ব্যবস্থাপনা এবং সড়ক ও স্থাপনার টেকসই নকশা এসকল প্রযুক্তিগুলো অবকাঠামোকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করছে। 

স্যাটেলাইট, রাডার ও জিপিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, টর্নেডো ও ভূমিকম্পের মতো প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর আগাম পূর্বাভাস দেয়া হয়। যা পরবর্তীতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা় থেকে নিরাপদে স্থানান্তর করে প্রাণহানির সংখ্যা কমাতে ও জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়ক। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থা যেমন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি ( সিপিপি) এবং আবহাওয়া অধিদপ্তর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

উন্নত যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভবপর হয়েছে। শুধু দুর্যোগকালীন সময়েই নয়, দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসনে ও প্রযুক্তি বরাবরই ভূমিকা পালন করে আসছে। মোবাইল ও ডিজিটাল প্লাটফর্ম এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের তথ্য সংগ্রহ, ত্রাণ বিতরণ ও আর্থিক সহায়তা অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসনে উন্নত কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ লবণাক্ত অঞ্চলের জন্য ধান যেমন, বিআরআরআই ধান ৬৭, বিনা ধান ১০ ইত্যাদি উদ্ভাবন করেছে। 

ভাসমান কৃষি প্রযুক্তি ও থ্রিডি মডেলিং প্রযুক্তি হাওর ও দক্ষিণাঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় নিরাপদ পানির অভাব মেটাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রযুক্তি (রেইন ওয়াটার হাভেস্টিং সিস্টেম) বিশেষ ভূমিকা রাখছে। উচু ঘর বা প্লাটফর্ম নির্মাণ প্লাবনপ্রবণ এলাকায় মানুষ ও পশুপাখি রক্ষায় আরেক সফল উদ্যোগ। 

বাংলাদেশ দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায়  বেশ কিছু অত্যাধুনিক ও ব্যয়বহুল প্রযুক্তির স্থাপনা জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশিক্ষিত জনবল ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মীর অভাবে বিভিন্ন প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রতিবন্ধকতায় আরেক মাত্র যোগ করেছে। এছাড়াও অবকাঠামোগত দুর্বলতা, দুর্নীতি ও প্রশাসনিক বিলম্ব দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রযুক্তির ব্যবহার ত্বরান্বিত হওয়ার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে কয়েকটি পদক্ষেপ অবশ্যই গ্রহণীয়। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- প্রযুক্তি সংক্রান্ত গবেষণা ও প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, স্থানীয় জনগণকে প্রশিক্ষণ ও সচেতন করা, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা যেমন, ব্র্যাক, সিসিডিবি ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ইত্যাদির মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো। এসকল পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে যেমন দুর্যোগের প্রভাব কমানো সম্ভব, তেমনি সমাজকে টেকসইভাবে দুর্যোগপ্রতিরোধী করতে সহায়ক। সর্বোপরি বাংলাদেশকে দুর্যোগ মোকাবিলায় শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। 

লেখক: মুসকান গৌড়ি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)
 

image

আপনার মতামত দিন