কাঙ্ক্ষিত ফ্ল্যাট বা জমি কেনা, সেটা হস্তান্তর এবং রেজিস্ট্রেশনের সময় বেশ কিছু বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। পাশাপাশি দলিলবিষয়ক কিছু পরিভাষাও জানা থাকা দরকার। সামগ্রিক বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আগে আপনাকে দেখতে হবে যে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ফ্ল্যাট কিনতে চাচ্ছেন, সেটি আইনানুগ নিবন্ধিত কি না এবং কাজের ক্ষেত্রে তাদের কোনো নেতিবাচক রেকর্ড আছে কি না। একটি ভালো ডেভেলপার কোম্পানির কাছ থেকে ফ্ল্যাট কেনা মানে ঝামেলা থেকে অনেকাংশে রেহাই পাওয়া।’
তানজিম আল ইসলামের মতে, প্লট ও ফ্ল্যাট কেনাবেচাবিষয়ক চুক্তির আগে কিছু করণীয় রয়েছে-
ফ্ল্যাট কেনার চুক্তির আগে
১. জমি/ফ্ল্যাটের মালিকানা প্রতিষ্ঠান নাকি ব্যক্তির নামে আছে, সেটা জানুন।
২. নামজারি ঠিকভাবে আছে কি না, খোঁজ নিন।
৩. সিএস, এসএ, আরএস, বিএসসহ পরচাগুলোতে মালিকানার ক্রম ঠিকঠাক আছে কি না, জানতে হবে।
৪. সাবরেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে খোঁজ নিন, ওই ফ্ল্যাট অন্য কারও নামে আছে কি না।
৫. সম্পত্তিটি বন্ধকে রয়েছে কি না, জানতে হবে। বর্তমানে অনলাইনে এটি দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে মূল দলিল যাচাই করতে হবে। কারণ, বন্ধকের ক্ষেত্রে ব্যাংক মূল দলিল নিজেদের কাছে রেখে দেয়।
৬. পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামায় উল্লিখিত শর্তগুলো ভালোভাবে দেখে নিতে হবে।
৭. সরেজমিনে জমি/ফ্ল্যাটটি দেখে নিন।
এ ছাড়া রাজউকের অনুমোদনপত্রসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র একজন আইনজীবীর মাধ্যমে ভালোভাবে যাচাই করে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
হস্তান্তর হওয়ার পর
ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এবং হ্যান্ডওভার সার্টিফিকেট বুঝে নিতে হবে। তারপর ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রির সময় রসিদটি বুঝে নিতে হবে। কারণ, এই রসিদ মূল দলিল ওঠানোর সময় দেখাতে হয়। দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার পরপরই নকল তুলতে হবে এবং কোনো ভুলভ্রান্তি আছে কি না, ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
দলিল সম্পর্কিত কিছু শব্দ জানা দরকার
দলিল কিংবা চুক্তিপত্রে অনেক বাংলা শব্দ আছে, যেগুলো সংক্ষিপ্ত রূপে ব্যবহার করা হয়। তাই কিছু দালিলিক শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ এবং তার অর্থ ব্যাখ্যা করেছেন তানজিম আল ইসলাম।
‘গং’ বলতে বোঝায় অন্যরা, সমূহ। যেমন আবদুল হালিম গং মানে আবদুল হালিমের সঙ্গে আরও অনেকেই আছেন।
‘মিউটেশন’, আইনের ভাষায় শব্দটির অর্থ হলো নামজারি। নামজারি বা নাম খারিজ বলতে পুরোনো মালিকের নাম পরিবর্তন করে নতুন মালিকের নামে জমি রেকর্ড করা বোঝায়।
খাজনা অর্থাৎ জমি ব্যবহারকারী একটি নির্দিষ্ট সময়ান্তে চুক্তি অনুযায়ী জমির মালিককে মোট যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করেন, তাকে মোট খাজনা বা চুক্তিবদ্ধ খাজনা বলে।
‘জমা’ বলতে বোঝায় ভূমি আইন ও দলিলে খাজনা। আবার ‘জমা ওয়াশিল’-এর অর্থ আয়-ব্যয়ের হিসাব। ‘জমা ওয়াশিল বাকি’ মানে ‘দেয় খাজনা’র কত আদায় বা ‘লভ্য খাজনা’র কত আদায় হয়েছে এবং কত বাকি আছে তার হিসাব। ‘জমা খারিজ’ অর্থ যৌথ খতিয়ানের জমা থেকে কোনো সহমালিক বা অংশীদারের আবেদনক্রমে তাঁর অংশ আলাদা করে যে নতুন জমা ও খতিয়ান সৃষ্টি করা হয়।
এ ছাড়া ‘তমঃ’ মানে আরবি শব্দজাত তমসুক। যার অর্থ দলিল, ঋণ-স্বীকারপত্র বা খত।
‘ভূমি জরিপ’ বলতে বোঝায় মৌজাভিত্তিক নকশা প্রণয়ন ও ভূমির মালিকানা-সম্পর্কিত ভূমি খতিয়ান প্রস্তুত কার্যপ্রণালিকে বোঝায়।
‘সাং’ মানে সাকিন, সাকিম অর্থ ঠিকানা, বাসস্থান।
‘মোং’ মানে মোকাম। এর অর্থ আবাস হলেও মূলত বাণিজ্য-স্থান বা বিক্রয়কেন্দ্র বোঝাতেই ব্যবহৃত হয়।
‘কিঃ’ মানে দফা, বার, ক্ষেপ।
‘এজমালি/ইজমালি’ মানে যৌথ। এজমালি সম্পত্তি বলতে যৌথ মালিকানাধীন সম্পত্তিকে বোঝায়।
কিত্তা/ কিতা মানে আরবি ‘ক্বত্বহ’ শব্দজাত। অর্থ অংশ, জমির ভাগ, পদ্ধতি।
‘ছানি’ আরবি শব্দ, অর্থ দ্বিতীয়বার। পুনর্বিবেচনার প্রার্থনা।
‘ছোলেনামা’ মানে আপস-মীমাংসাপত্র।
‘নিম’ ফারসি শব্দ। এর অর্থ অল্প, অর্ধেক, অধস্তন বা অধীন।
‘মুসাবিদা’ মানে খসড়া তৈরি করা। মুসাবিদাকারক মানে যিনি দলিল লেখেন।
‘হিঃ’ হচ্ছে হিসাব শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ।
‘চৌঃ’ মানে চৌহদ্দি। অর্থ চারধারের সীমানা।
‘তঃ/তপঃ’ মানে তফসিল, তহশিল।
‘মাং/ মাঃ’ মানে মারফত। অর্থাৎ যাঁর হাত দিয়ে বা মাধ্যমে আদান-প্রদান করা হয়।
‘সুদিখত’ মানে একশ্রেণির বন্ধকি দলিল।
‘হলফ’ মানে সত্য বলার জন্য যে শপথ করা হয়। হলফকারী মানে যিনি সত্যায়ন করেন।