সমুদ্রসৈকতে লাইফগার্ড সেবা আপাতত বন্ধ হচ্ছে না। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পর্যটকের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আপাতত লাইফগার্ড সেবা চালু রাখা হবে। এতে পর্যটকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। মঙ্গলবার থেকে লাইফগার্ড সেবা বন্ধ হওয়ার কথা ছিল।
২০১২ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক সংস্থা রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউটের (আরএনএলআই) অর্থায়নে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সি-সেফ লাইফগার্ড কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। এই সময়ে অন্তত ৮১৭ জন পর্যটককে তাঁরা সাগর থেকে জীবিত উদ্ধার করেছেন। এ ছাড়া স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া অন্তত ৬৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেন লাইফগার্ড সদস্যরা।
তহবিল সংকট ও প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আজ থেকে কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও জেলা প্রশাসকের অনুরোধে তা তিন মাস চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সি-সেফ কর্তৃপক্ষ। এ সময় দুর্গাপূজা, প্রতিমা বিসর্জন উৎসব এবং থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে সৈকতে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে।
সি-সেফ লাইফগার্ডের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘তহবিল সংকটে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তবে জেলা প্রশাসকের অনুরোধে অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে সেবা চালু থাকবে।’
তিনি জানান, বর্তমানে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ছোট-বড় অন্তত ১০-১২টি গুপ্তখাল রয়েছে। এর মধ্যে সিগাল ও লাবণী পয়েন্টে বেশি ঝুঁকি। গত দুই দিনে স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া ১৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
নবাগত জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘লাইফগার্ড না থাকলে পর্যটকদের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে। এ কারণে সেবা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আরএনএলআইকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সাড়া না মিললে স্থানীয়ভাবে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
সি-সেফের হিসাবে, প্রতিষ্ঠানে ২৭ জন লাইফগার্ডসহ মোট ৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বাবদ মাসে লাগে ১৪ লাখ টাকা, বছরে দেড় কোটি টাকা।
হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ‘হোটেলমালিকদের ওপর লাইফগার্ড সেবার দায়িত্ব চাপানো হয়েছে। কিন্তু তাঁদের অভিজ্ঞতা নেই, আর মাসে ১৪-১৫ লাখ টাকা বহন করাও সম্ভব নয়। এটি সরকারের উদ্যোগেই পরিচালনা করা উচিত।’
সুগন্ধা পয়েন্টে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ এক কিলোমিটার সৈকতজুড়ে ভিড় করেছেন। কলাতলী থেকে লাবণী পর্যন্ত চার-পাঁচ কিলোমিটারে আরও ৪০-৫০ হাজার পর্যটক ছিলেন। সি-সেফের অন্তত ১৫ জন লাইফগার্ড নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন।
ঢাকার উত্তরার ব্যবসায়ী জিয়াবুল হাসান বলেন, ‘লাইফগার্ড না থাকলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। শুনলাম সেবা চালু থাকছে, এতে ভরসা পেলাম। কক্সবাজারে গোসল বন্ধ হলে কেউ আর এখানে আসবে না।’
হোটেলমালিকদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ পর্যটক কক্সবাজার সৈকতে ঘুরতে আসেন। হোটেল-রেস্তোরাঁসহ ১৭টি খাতে ব্যবসা হয় হাজার কোটি টাকার। তবে এত দিনেও সৈকতে সরকারিভাবে একজন ডুবুরি কিংবা জরুরি চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।