বিশ্ববাজারে চাহিদা হ্রাস, উচ্চ সুদের হার এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো নানা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত (RMG sector) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে দেশের পোশাক রপ্তানি বেশ কিছু প্রধান ও বিকল্প বাজারে চমকপ্রদ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা বাজার বৈচিত্র্যকরণে বাংলাদেশের অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয়।
শক্ত অবস্থান প্রধান বাজারে
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (EPB) তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে এপ্রিল (২০২৪) সময়কালে বাংলাদেশ ৩ হাজার ২৬৪ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশি।
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU), কানাডা ও ভারতের বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় একক বাজার। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৬২২ কোটি ৯৯ লাখ ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫.৭৫% বেশি।
>> নিটওয়্যার খাতে প্রবৃদ্ধি: ১৭.১৫%
>> ওভেন পোশাকে প্রবৃদ্ধি: ১৫.৪%
বিশ্লেষণ: ডেনিম শিল্পোদ্যোক্তা মোস্তাফিজ উদ্দিনের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ভারতের মতো প্রতিযোগীদের থেকেও বেশি, যা এ দেশের উচ্চ প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতার প্রমাণ।
ইউরোপ এবং ছোট বাজারে রপ্তানির সাফল্য
ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি বেড়েছে ১০.৫৫%, যেখানে রপ্তানি আয় ছিল ১ হাজার ৬২৪ কোটি ৯১ লাখ ডলার। তবে আরও চমকপ্রদ তথ্য এসেছে কিছু ছোট বাজার থেকে:
>>লিথুয়ানিয়া: ৪০৭% প্রবৃদ্ধি
>> রোমানিয়া: ১০০%
>> অস্ট্রিয়া: ৬৩%
বিশ্লেষণ: বাজার বৈচিত্র্যকরণের সফল দৃষ্টান্ত হিসেবে এসব প্রবৃদ্ধিকে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
সিপিডি’র বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান মন্তব্য করেছেন, “ইইউতে শ্রম অধিকার ও টেকসই উৎপাদন গুরুত্ব পাচ্ছে, তাই নতুন নিয়মের সাথে খাপ খাওয়াতে প্রস্তুত থাকতে হবে।”
বিকল্প ও অপ্রচলিত বাজারে অগ্রগতি
বাংলাদেশ এখন শুধু প্রধান বাজারেই নয়, বরং বিভিন্ন উদীয়মান অর্থনীতিতে অবস্থান দৃঢ় করছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.২৫%।
>>ভারত: ১৮.৮৫%
>>তুরস্ক: ৩২%
>>ব্রাজিল: ২২.২৯%
> > জাপান: ১০%
বিশ্লেষণ: বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেলের মতে, বিশ্ববাণিজ্যে পরিবর্তনের এই সময়ে বাংলাদেশ নতুন করে কৌশলগত অবস্থান নিচ্ছে। রপ্তানি খাতকে পণ্য ও বাজার উভয় ক্ষেত্রেই বৈচিত্র্যময় করতে হবে।
কানাডা ও যুক্তরাজ্যে স্থিতিশীল প্রবণতা
>>কানাডা: রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৫ কোটি ডলার (১৩.৮৬% প্রবৃদ্ধি)
>>যুক্তরাজ্য: ৩.৪১% প্রবৃদ্ধি-যা স্থিতিশীলতার দিকেই ইঙ্গিত করে।
চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে
বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে শুধু বাজার নয়, পণ্য বৈচিত্র্য, শ্রম অধিকার রক্ষা এবং পরিবেশবান্ধব উৎপাদনেও জোর দিতে হবে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন ও ক্রেতাদের নতুন চাহিদার সাথে মানিয়ে নেওয়া অপরিহার্য।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপের মধ্যেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত আবারও প্রমাণ করছে তার স্থিতিস্থাপকতা ও প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা। বাজার ও পণ্যের বৈচিত্র্য, টেকসই উৎপাদন এবং শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে এই প্রবৃদ্ধি কেবল বজায়ই নয়, বরং আরও বেগবান হবে।