লেখাটা এআই দিয়ে তৈরি কি না চিনবেন কীভাবে ?

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) শুধু কথোপকথনের সহকারী নয়, এটি এখন রীতিমতো একজন দক্ষ লেখক। প্রবন্ধ, ব্লগ পোস্ট, সংবাদ প্রতিবেদন এমনকি গবেষণাপত্রও লিখে ফেলছে এআই। লেখার ভঙ্গি এতটাই প্রাঞ্জল আর তথ্যসমৃদ্ধ যে বোঝা কঠিন হয়ে যায়, লেখাটি   কে লিখেছে, মানুষ নাকি একটি মেশিন।

তবে কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য খেয়াল করলে আপনি অনায়াসে এআই-লিখিত লেখা শনাক্ত করতে পারেন। এখন আমরা আলোচনা করবো পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণের পাশাপাশি বাস্তব উদাহরণ, যার মাধ্যমে আপনি নিজেই বিচার করতে পারবেন।

যান্ত্রিক ও পুনরাবৃত্ত শব্দচয়ন
এআই মডেল একই ধরনের শব্দ, বাক্য কাঠামো বা প্যাটার্ন বারবার ব্যবহার করে। এতে করে লেখায় একঘেয়েমি চলে আসে। ‍যেমন, সংযোগকারী শব্দ (“ফলস্বরূপ”, “অতএব”, “এ ছাড়া”) অত্যধিক পুনরাবৃত্ত হয়। কিছু বিশেষণ বারবার ফিরে আসে। যেমন, “সুন্দর”, “অসাধারণ”, “প্রশংসনীয়”, ইত্যাদি।

মানুষের লেখা কেমন?
মানুষ লেখার সময় সাধারণত ভাষায় বৈচিত্র্য আনে, শব্দচয়ন প্রসঙ্গ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। যেমন,  ‘এ ছাড়া দেশের পরিবেশও উন্নত হচ্ছে। অতএব আমরা আশাবাদী। ফলস্বরূপ উন্নয়নের ধারা বজায় থাকবে।’ এই তিনটি বাক্য তিন লাইনে তিনটি সংযোগকারী শব্দ ব্যবহার করেছে। এটি এআইয়ের লেখা হলে আশ্চর্য হতো না।

 লেখায় বেশি এম ড্যাশের  ব্যবহার
এম ড্যাশ হল এক ধরনের বিরামচিহ্ন, যা সাধারণত কথার মাঝে হালকা থেমে কিছু ব্যাখ্যা, সংযোজন বা আলাদা গুরুত্ব বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। লেখকের ভাষাশৈলীর অংশ হিসেবেই এটি আসে।

কেন এটা সন্দেহজনক?
বেশিরভাগ এআই মডেল প্রশিক্ষণের সময় প্রচুর বই, গবেষণাপত্র, সাহিত্য রচনার ওপর নির্ভর করে। এসব লেখায় এম ড্যাশ বেশি ব্যবহৃত হয়। ফলে এআই যখন লেখে, তখন এটি এম ড্যাশ অতিরিক্ত ব্যবহার করে ফেলতে পারে। যেমন, ‘বাংলাদেশ-এক অপার সম্ভাবনার দেশ।’ ‘পদ্মা সেতু-দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত।’
 
সাধারণ কথোপকথন বা দৈনন্দিন লেখায় যেখানে সাধারণ কমা বা কোলন যথেষ্ট হতো, সেখানে যদি অতিরিক্ত এম ড্যাশ থাকে, ধরে নিতে পারেন এটি হয়তো এআইয়ের কাজ।


 বিশ্লেষণের গভীরতার অভাব
এআই অনেক তথ্য একসঙ্গে জড়ো করে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারে। তবে এতে থাকে না ব্যক্তিগত ভাবনা, সৃজনশীল বিশ্লেষণ বা নতুন কোনো দৃষ্টিভঙ্গি। যেমন, তথ্য আছে, কিন্তু বক্তব্যে নিজস্ব মত নেই। বিশ্লেষণ নেই, শুধু সারসংক্ষেপ। যেমন, ‘বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। এখানে ধান, গম, পাট উৎপাদিত হয়। দেশের অর্থনীতি কৃষির ওপর নির্ভর করে।’ এই লেখা তথ্যবহুল, কিন্তু চিন্তার গভীরতা বা লেখকের কোনো নিজস্ব ব্যাখ্যা নেই। মানুষের লেখা হলে হয়তো এরকম কিছু যোগ হতো, ‘তবে সাম্প্রতিক সময়ে কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় এই নির্ভরশীলতা ভবিষ্যতে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।’

মানবিক অনুভূতির অনুপস্থিতি
এআই আবেগ বোঝে না। তাই লেখায় রসিকতা, দুঃখ, আনন্দ বা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা খুব একটা থাকে না। যেমন, লেখাটি নিখুঁত কিন্তু অনুভূতিশূন্য। কোনো ব্যক্তিগত গল্প বা উদাহরণ নেই। যেমন, এআই লেখা, ‘বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এটি মানুষের জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি করে। বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছর বন্যা হয়।’ অন্যদিকে মানুষের লেখা হলে হতে পারত, ‘শিশু অবস্থায় প্রথম বন্যার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আমাদের উঠোনে নৌকা ভেসে এসেছিল, সে এক ভয়ংকর কিন্তু কৌতূহল জাগানিয়া অভিজ্ঞতা।’

বাস্তবতাবিরুদ্ধ বা অদ্ভুত তথ্য
এআই অনেক সময় তথ্য মিলিয়ে লেখে, কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ না-ও হতে পারে। যেমন, লেখায় এমন তথ্য থাকে যা গুগলেও মিলছে না। অনেক সময় সত্যি কথা থাকলেও বাক্য রচনায় অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। যেমন,  ‘পদ্মা সেতু বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ভারতের দক্ষিণ অঞ্চলকে যুক্ত করেছে।’ এই তথ্য ভুল। তবে ভাষার দিক থেকে খুবই ঠিকঠাক। এটাই এআইয়ের বিশেষত্ব, ভুল তথ্য, নিখুঁত বাক্যে।

তাহলে আপনি চিনবেন কীভাবে?
লক্ষণগুলো শুধু সূত্র হিসেবে ধরবেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে লেখার প্রসঙ্গ, গঠন, ভাষার ভিন্নতা, আবেগ এবং বিশ্লেষণ, সবকিছু মিলিয়ে বিচার করুন। নিচে দুটি অনুচ্ছেদ দেওয়া হলো। একবার পড়ে বলুন তো কোনটি মানুষের লেখা, আর কোনটি এআইয়ের?

১. সুন্দরবনের শ্বাসমূল থেকে কক্সবাজারের বেলাভূমি, বাংলাদেশ এক বৈচিত্র্যময় দেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বিধৌত এই ব-দ্বীপ সুজলা-সুফলা। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মিশেলে এটি যেন এক জীবন্ত জাদুঘর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই ভূমি সত্যিই মন মুগ্ধ করে তোলে।

২. প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশ, যেখানে সবুজ গ্রাম আর নদীর ঢেউয়ে জীবন প্রবাহিত হয়। এখানকার মানুষের হৃদয়ে উষ্ণতা, আর সংস্কৃতিতে লুকিয়ে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য।

আপনার উত্তর  হতে পারে "ক" মানুষের লেখা, "খ" এআইয়ের? না কি উল্টো? সত্যিটা হলো, দুইটিই গুগলের জেমিনি এআই দিয়ে লেখা।
তাই বলে কি আপনি ভুল করলেন? মোটেও না। এই অনিশ্চয়তাই প্রমাণ করে, এআই এখন এমনভাবে লিখতে পারছে যে তা প্রায় মানুষের মতোই।

লেখা কার লেখা, মানুষ না মেশিন, তা বোঝা আজকের দিনে খুবই জরুরি। শুধু ভাষা নয়, লেখার আবেগ, বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্লেষণ, অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গিও খেয়াল করতে হবে। লেখকের চিন্তা কতটা স্বতঃস্ফূর্ত বা মৌলিক, সেটাও একটি বড় নির্দেশক। সূত্র: সেলজি ও ইস্ট সেন্ট্রাল কলেজ

image

আপনার মতামত দিন