বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট সেবার কাজ শুরু হয়েছে

প্রকাশ: রবিবার, ০৯ মার্চ, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪ রিপোর্ট
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
 বাংলাদেশে গ্রাউন্ড আর্থ স্টেশন স্থাপনে সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের টেলিকম জায়ান্ট স্টারলিংকের অংশীদার হয়ে কাজ করছে কয়েকটি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান।

রবিবার (৯ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ‘দ্রুতগতির মানসম্পন্ন ও সহজলভ্য ইন্টারনেট প্রাপ্তিতে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ তথ্য নিশ্চিত করেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বর্তমানে স্টারলিংকের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে রয়েছে। এই সফরে বাংলাদেশে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা চালু করতে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস গত ১৯ ফেব্রুয়ারি স্টারলিংকের প্রতিষ্ঠাতা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ককে স্টারলিংক স্যাটেলাইট সেবা চালুর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমে অংশ নিতে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা মাস্ককে জানান, এই সফরে মাস্ক বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন, যারা এই প্রযুক্তির প্রধান সুবিধাভোগী হতে যাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা তার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমানকে স্পেসএক্স টিমের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সমন্বয় করে আগামী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে বাংলাদেশে স্টারলিংক চালুর জন্য প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ও ইলন মাস্কের মধ্যে দীর্ঘ টেলিফোন আলাপ হয়, যেখানে তারা ভবিষ্যৎ সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেন। সেই সঙ্গে স্টারলিংক সেবা বাংলাদেশে চালুর অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা করেন তারা।

তিনি বলেন, ভূমি বরাদ্দ, নির্মাণ সহায়তা ও অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের মতো কার্যক্রম পরিচালনায় এসব সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে। স্টারলিংক টিম এই কাজের জন্য কিছু নির্দিষ্ট স্থান চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব সম্পত্তি এবং কিছুক্ষেত্রে হাইটেক পার্কের জমি ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করছে স্টারলিংক।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আরও বলেন, প্রকল্পের স্থান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা চলছে। স্টারলিংক বাংলাদেশের শহরে কিংবা প্রান্তিক অঞ্চলে, উত্তর অঞ্চল কিংবা উপকূলে লোডশেডিং কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝামেলামুক্ত রিলায়েবল এবং হাইস্পিড ইন্টারনেটের নিশ্চয়তা দেবে। এটি নিরবচ্ছিন্ন সেবা এবং উচ্চমান কোয়ালিটি সার্ভিসের নিশ্চয়তা দিবে। যেহেতু বাংলাদেশে টেলিকম গ্রেড ফাইবার নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি সীমিত এবং প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে এখনো লোডশেডিংয়ের সমস্যা রয়েছে তাই স্টারলিংক আমাদের উদ্যোক্তা, ফ্রিল্যানসার, এনজিও এবং এসএমই ব্যবসায়ীদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড এবং ডিজিটাল ইকোনমিক ইনিশিয়েটিভগুলোকে বেগবান করবে। আমরা আগামী ৯০ দিনের মধ্যে স্টারলিংকের সাথে একটা বোধগম্য মডেল বাস্তবায়নের চেষ্টা অব্যাহত রাখব।

বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি'র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির বিশেষ সহকারী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ইন্টারনেট ও অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন বেসিক রাইট। এই অধিকার নিশ্চিত করতে বিএনপি সবসময় সরকারের পাশে থাকবে।

বিগত সরকার দেশের টেলিকম খাতকে দুর্নীতি ও কো-আর্সির মাধ্যম্যে গিলে ফেলেছিলো। তাই এখন পলিসি কাজ করছে না। এটা রিফর্ম করতে হবে। আমলারা এক্ষেত্রে বাধ সাধতে পারে।  তবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে। 

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকম বিশেষজ্ঞ মোস্তফা হুসাইন।

মোস্তফা হুসাইন বলেন, টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি সেবাখাতে সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেটের গতি হতে হবে সর্বনিম্ন ২০ এমবিপিএস। কোয়ালিটি বেঞ্চমার্ক নির্ধারণ করতে হবে। ভয়েস কল ও ইন্টারনেটের মূল্য কমিয়ে আনতে হবে। ডাটার কোন মেয়াদ থাকবে না। ইন্টারনেট যে কোন অজুহাতে বাজে কোন কারণে সরকার বন্ধ করবে না এই ঘোষণা অথবা এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। পাশাপাশি ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে।

টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি সেবাখাতের সংস্কারের জন্য তিনি কিছু সুপারিশ করেন। সুপারিশে তিনি বলেন, অবৈধ আইএসপি ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। সেই সাথে মোবাইল অপারেটরদের আইএসপি ব্যবসা থেকে বিরত রাখতে হবে। ওভারহেড ফাইবার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। ব্যান্ডউইথ ও এনটিটিএন এর দাম নির্ধারণ না করে বাজার প্রতিযোগিতায় ছেড়ে দিতে হবে। ইন্টারনেট এর ওপর কর কমিয়ে আনতে হবে। সহজ লভ্য হ্যান্ডসেট গ্রাহকদেরকে কিস্তির মাধ্যমে অপারেটরদেরকে বিক্রয়ের জন্য বাধ্য করতে হবে। তিনি আরও বলেন, মোবাইল অপারেটর যদি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায় আসে তাহলে আইএসপির ব্যবসা থাকবে।

 আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইমাদুর রহমান, বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খলিলুর রহমান, টেলি যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মাহতাব উদ্দিন, আইআইজিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম, বিডি জবসের সিইও ও বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর, আইএসপিএবি'র সভাপতি ইমদাদুল হক, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক, এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন, বেসিসের অ্যাসোসিয়েট কমিটির চেয়ারম্যান রাফেল কবির, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালেদ আবু নাসির, গ্রামীণফোন লিমিটেডের সিনিয়র ডাইরেক্টর কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত, বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, রবির রেগুলেশনের ডিরেক্টর শাহ মো. ফজলে খোদাসহ আইআইজিবি, আইএসপিএবি, মোবাইর অপারেটর প্রতিনিধি এবং টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা।
 
image

আপনার মতামত দিন