দেশীয় উদ্ভাবনী প্রযুক্তি নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ‘বিয়ার সম্মেলন ও ন্যাশনাল সেমিকন্ডাক্টর সিম্পোজিয়াম’। মাছ চাষ, রোবট প্রযুক্তি, আইওটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সেমিকন্ডাক্টর-ভিত্তিক নানা সমাধান প্রদর্শনের পাশাপাশি ভবিষ্যতে প্রযুক্তিখাতে বাংলাদেশের স্বকীয়তা গড়ে তোলার রূপরেখাও আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে।
ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় চলছে বায়োটেকনোলজি, ইলেকট্রনিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং রোবটিক্স ও সেমিকন্ডাক্টরে উদ্ভাবনী প্রজন্ম গড়ে তোলার এই আয়োজন।
বিশ্বের বিভন্ন প্রান্ত থেকে এই খাতের শীর্ষ ৯ জন বিশেষজ্ঞ, দেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক গোষ্ঠী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিসি, গবেষক, উদ্ভাবক, শিক্ষার্থী ও রাজনীতিকরা এই আয়োজনে অংশ নিচ্ছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, এজ প্রকল্প, বিশ্বব্যাংক এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) যৌথ প্রযোজনায় বাংলাদেশ অ্যজ আ ন্যাশন অব ইনোভেশন প্রতিপাদ্য ১৬ জুলাই, বুধবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে এই আয়োজনের উদ্বোধন করা হয়।
সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বড় ধরণের বিনিয়োগের কথা জানিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি ও টেলিকম বিষয় বিশেষ সহকারি ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আরও বলেন, পাসপোর্ট, এনআইডি, সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারে সকল সেবা সরাসরি 'নাগরিক সেবা' থেকেই দেয়ার ব্যবস্থা করবে সরকার।
নাগরিকদের ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষা ও ক্লাউড পলিসির কথা তুলে ধরে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেছেন, পুরো বিশ্ব এখন ক্লাউডের দিকে ঝুঁকছে। এজন্য আমরা জাতীয় তথ্যভান্ডারের সক্ষমতা বাড়াতে অন্তত ৫টি কমপোনেন্টের উন্নয়নের কাজ করছে বিসিসি ও বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার। একই সঙ্গে ডিসি এবং ডিআর'র সক্ষমতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা চলছে। নেটিভ ক্যাপাসিটি বৃদ্ধিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সহায়তা করা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, সরকারের এই স্বল্প মেয়াদে নীতিগত সহায়তায় একটা দৃঢ় অবস্থান স্থাপনে সক্ষম হবো। তিনি আরো বলেন, আমরা যদি চাকরির কি করতে চাই দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। এর মাধ্যমে আমরা শিল্প বিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগাতে পারবো। বিয়ার সামিট স্কুল ট্রানসফরমেশনে ব্যাপকভাবে অবদান রাখবে বলে আমি মনে করি।
ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব আরো বলেন, আমরা আইসিটি খাতের সংস্কারের চেষ্টা করছি। সরকারি সেবাগুলোকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আনা হচ্ছে। অন্তত যেন সিটি কর্পোরেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, ট্রেড লাইসেন্স এসবের ফ্রন্ট ডেস্কের কাজটা অনলাইন প্লাটফর্মে করা যায়। এই খাতের প্রয়োজনীয় আইনগত কাঠামোতেও সংস্কার আনা হচ্ছে। বাংলা ভাষায় এআই কার্যকর করার জন্য এসময় বাংলা বইয়ের ওসিআর টেক্সট ফরমেটে ভান্ডার তৈরির কথা বলেন ফয়েজ আহমদ।
আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, বিগত আমলে এই খাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হলেও তেমন সুফল পাওয়া যায়নি। এবার আমরা নতুন নেতৃত্বে সব রিসেট করছি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই আয়োজনের আহ্বায়ক যুক্তরাষ্ট্রের পাড্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোস্তফা হোসাইন বলেন, এই সম্মেলনের লক্ষ্য হলো বায়োটেকনোলজি, ইলেকট্রনিক্স, এআই এবং রোবটিক্স (বিয়ার)– এর গুরুত্বপূর্ণ খাতের সম্ভাবনাকে নতুন করে খুঁজে দেখা, এসব খাতে তরুণ মেধার সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং শিল্প ও একাডেমিয়ার মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা। এই আয়োজন বাংলাদেশের উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তিবিদদের জন্য ট্রিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ঢোকার পথ সুগম করবে বলেও তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, এবার বিয়ার (BEAR) সম্মেলনের পাশাপাশি একটি সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হবে, যা বাংলাদেশের জন্য ট্রিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে প্রবেশের পথ সুগম করবে এবং দেশকে Deep Technology-এর একটা গ্লোবাল হাব হিসেবে পরিচিত করবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, এই সামিট দেশের ও প্রবাসের শিক্ষাবিদ, উদ্যোক্তা, ও তরুণদের সমন্বিত শক্তির ফসল। আমাদের তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা এবং তা বিশ্বকে দেখিয়ে দেয়া প্রত্যয়ের নাম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রযুক্তি বিষয়ে বাংলাদেশীরা গবেষণা অধ্যাপনা করছেন উল্লেখ করে বুয়েটের উপাচার্য বলেন, যেখানে আমাদের এতে এতো ভালো ছাত্র শীর্ষবিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছেন, সেখানে এই খাতে আমরা পিছিয়ে থাকতে পারিনা। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।