২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে রেকর্ডসংখ্যক সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। দেশটির সরকারি তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত ৯ হাজার ২৬২ বার সাইবার আক্রমণের চেষ্টা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৪৫ শতাংশ বেশি।
এই হামলার বেশিরভাগই এসেছে উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যদিও হামলাকারীদের নির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা যায়নি।
সাইবার হামলার পরিসংখ্যান: প্রতি বছরই বাড়ছে হুমকি
সাম্প্রতিক বছরগুলোর সাইবার আক্রমণের পরিসংখ্যান তুলে ধরলে স্পষ্ট হয়, এই হুমকি দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। ২০২১ সালের প্রথমার্ধে হামলা হয়েছে ৬ হাজার ১৪৬, ২০২২ সালে ৪ হাজার ৯৪৩, ২০২৩ সালে ৬ হাজার ৮০৫, ২০২৪ সালে ৬ হাজার ৪০১, ২০২৫ সালে ৯ হাজার ২৬২।
২০২৫ সালের প্রথমার্ধেই সাইবার হামলার সংখ্যা বেড়েছে ৪৪.৭%, যা পূর্ববর্তী যেকোনো বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ।
কীভাবে এই হামলা হয়েছে?
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ৯ হাজার ১৯৩টি হামলা হয়েছে সামরিক ওয়েবসাইটে অবৈধ প্রবেশের মাধ্যমে। ৬৯টি চেষ্টা হয়েছে ইমেইল হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে। আশ্চর্যজনকভাবে, কোনো ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস-ভিত্তিক হামলা শনাক্ত হয়নি।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর দাবি, সব হামলাই প্রতিহত করা হয়েছে এবং কোনো ধরনের তথ্যচুরি বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।
কে করছে এসব সাইবার হামলা?
সরাসরি হ্যাকারদের শনাক্ত করা না গেলেও, সাইবার অপারেশনস কমান্ড জানায়, হামলায় ব্যবহৃত আইপি ঠিকানা, রাউটিং ও অন্যান্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বোঝা যায়, এগুলোর অধিকাংশই উত্তর কোরিয়া থেকে পরিচালিত হয়েছে।
প্রতিরোধ ও নিরাপত্তাব্যবস্থা
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী জানায়, তারা একটি সুনির্দিষ্ট ও সুসংহত সাইবার প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি বজায় রাখছে এবং নিরাপত্তাব্যবস্থাকে নিয়মিত হালনাগাদ করছে। তবে, প্রধান বিরোধী দল পিপল পাওয়ার পার্টির প্রতিনিধি ইউ ইয়ং-ওন এই পরিস্থিতিকে “গুরুতর সতর্ক সংকেত” বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, “সামরিক নেটওয়ার্কে মাত্র একটি অনুপ্রবেশও কমান্ড ও কন্ট্রোল সিস্টেমসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সামরিক বাহিনীকে আরও বেশি সচেতন ও প্রস্তুত থাকতে হবে।”
ইউ ইয়ং-ওনের প্রস্তাবনা
প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে তিনি যে সুপারিশগুলো দিয়েছেন সেগুলো হলো-
>> নিরাপত্তাব্যবস্থার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ
>> সাইবার অনুপ্রবেশ অনুশীলনের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি
>> সামরিক কর্মকর্তাদের জন্য নিয়মিত নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ
>> রাষ্ট্রপতির সরাসরি তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় সাইবার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার গঠন
>> সংশ্লিষ্ট আইনের সংশোধন করে সর্বব্যাপী নিরাপত্তা কাঠামো নির্মাণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর ওপর এই সাইবার হামলাগুলো শুধু একটি দেশের নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং আধুনিক বিশ্বে সাইবার যুদ্ধের একটি বাস্তব ও উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরছে। এখন সময় এসেছে শুধু প্রতিক্রিয়া নয়, বরং সক্রিয়, টেকসই এবং সমন্বিত প্রতিরক্ষা নীতি গঠনের, যা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকে সাইবার দুনিয়ার ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে পারে। সূত্র: দ্য কোরিয়া হেরাল্ড