বাস্তবে দেহ না থাকলেও মানুষ বেঁচে থাকবে ডিজিটালি

প্রকাশ: সোমবার, ০২ জুন, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
মানবজীবনের সবচেয়ে বিপ্লবী ধারণাগুলোর একটি হতে পারে ‘মাইন্ড আপলোডিং’। এটি এমন এক প্রক্রিয়া, যেখানে মানুষের মন-স্মৃতি, চেতনা, অনুভব-সবকিছু স্থানান্তর করা হবে কম্পিউটারের ভেতর। 

বাস্তব দেহ না থাকলেও, মানুষ "ডিজিটাল জীবিত" থাকবে। এই ধারণাটি যতটা অবাস্তব মনে হয়, বিজ্ঞানীরা বলছেন-এটি একেবারে অসম্ভব নয়, কল্পনাও নয়। এটা হবে ভবিষ্যতের বিজ্ঞান।

মাইন্ড আপলোডিং কী?
মাইন্ড আপলোডিং হলো একটি প্রক্রিয়া, যেখানে মানুষের মস্তিষ্কের সমস্ত তথ্য-স্মৃতি, অনুভূতি, আত্মসচেতনতা, এমনকি চিন্তার ধরণ পর্যন্ত-কম্পিউটারে কপি করে সংরক্ষণ করা হবে। এতে আপনি ‘ডিজিটাল সত্ত্বা’ হিসেবে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারবেন, এমনকি শারীরিক অস্তিত্ব ছাড়াও। এই ভার্চুয়াল রূপে আপনি ভার্চুয়াল জগতে চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া, এমনকি দেয়ালের ভেতর দিয়ে হাঁটা বা অন্য গ্রহে যাওয়ার মতো কাজও করতে পারবেন-যেটা বাস্তবে অসম্ভব।

এটা কি সম্ভব?
জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক ডব্রোমির রাহনেভ মনে করেন, মাইন্ড আপলোডিং তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব। তিনি বলেন, “যদিও আমরা এখনো সেখানে পৌঁছাইনি, তবে বিজ্ঞান অসম্ভবকে সম্ভব করার ইতিহাস রেখেছে। মানুষকে চাঁদে পাঠানো, জিনোম ডিকোড করা কিংবা স্মলপক্স নির্মূল-সবই একসময় কল্পনা ছিল।”

 কেন এতটা কঠিন?
মানব মস্তিষ্ককে বলা হয় "পরিচিত মহাবিশ্বের সবচেয়ে জটিল বস্তু"। এতে রয়েছে প্রায় ৮৬ বিলিয়ন নিউরন, প্রতিটিই অসংখ্য সংযোগ তৈরি করে।
এই পুরো কাঠামো ত্রিমাত্রিকভাবে স্ক্যান, ম্যাপ এবং ডিজিটালি পুনর্গঠন করাই মাইন্ড আপলোডিংয়ের প্রথম চ্যালেঞ্জ।

বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এখনো পর্যন্ত কেবল একটি মাছির মস্তিষ্ক বা ইঁদুরের অল্প অংশ স্ক্যান করতে সক্ষম হয়েছেন। মানুষের মস্তিষ্কের পূর্ণাঙ্গ স্ক্যানের জন্য প্রয়োজন এমন এক ‘মেগা-এমআরআই’, যা এখনো তৈরি হয়নি।

 শুধু স্ক্যান নয়, অনুভবও দরকার
মন শুধু চিন্তার বিষয় নয়, সেটি অনুভূতিরও। চোখে দেখা, কানে শোনা, ব্যথা পাওয়া, ঘ্রাণ পাওয়া-এসব না থাকলে একটা সত্ত্বা কতটুকু "জীবিত" থাকবে?
ডিজিটাল সত্তার জন্য তাই বাস্তবের মতো ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতাও সিমুলেট করতে হবে। না হলে তা হয়ে উঠবে এক ধরনের ইন্দ্রিয় বঞ্চনার (Sensory Deprivation) অভিজ্ঞতা-যা অনেক সময় মানসিক নির্যাতনের মতো ভয়ংকর হতে পারে।

 আরও কোন কোন পদ্ধতি নিয়ে ভাবছেন বিজ্ঞানীরা?
 সম্পূর্ণ স্ক্যান ও ডিজিটাল পুনর্নির্মাণ: নিউরন ধরে ধরে স্ক্যান করে কম্পিউটার মডেল বানানো।

কৃত্রিম নিউরনে ধাপে ধাপে রূপান্তর: মানব নিউরনকে কৃত্রিম নিউরনে একে একে বদলে ফেলা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বাস্তব কোনো নিউরনকে কৃত্রিম নিউরনে সফলভাবে রূপান্তর করা যায়নি।

 কবে নাগাদ সম্ভব হতে পারে, এ বিষয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের মতভেদ রয়েছে। কেউ বলছেন ২০৪৫ সালের মধ্যেই সম্ভাবনা আছে, কেউ আবার বলছেন এই শতকের শেষের আগেও না। ড. রাহনেভ নিজে মনে করেন,  “এই শতকের মধ্যে এটি হবে-আমি বিশ্বাস করি না। তবে ২০০ বছরের মধ্যে সম্ভব হতে পারে।”

  চিরজীবনের স্বপ্নে বিলিয়ন ডলারের বাজি
এই ধারণাকে ঘিরে আগ্রহের শেষ নেই প্রযুক্তি দুনিয়ায়। বড় বড় টেক উদ্যোক্তারা ইতিমধ্যে এই প্রযুক্তিতে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করছেন। কারণ একটাই-চিরজীবনের স্বপ্ন।

মাইন্ড আপলোডিং হয়তো এখনো বহু দূরের বাস্তবতা। তবে এটি আর নিছক কল্পকাহিনি নয়। যেহেতু এটা তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব, তাই একদিন হয়তো সত্যিই আমরা এমন এক দুনিয়ায় পৌঁছাবো, যেখানে দেহ নেই-তবুও মানুষ বেঁচে আছে, অনুভব করছে, এবং ডিজিটাল আকারে জীবন কাটাচ্ছে। সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট, আজকের পত্রিকা
image

আপনার মতামত দিন