কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন আর কেবল স্মার্টফোন অ্যাপ, চ্যাটবট বা সার্চ ইঞ্জিনেই সীমাবদ্ধ নয়। আধুনিক প্রযুক্তির চমৎকার অগ্রগতি এবার ছড়িয়ে পড়েছে খাদ্যশিল্পেও। রান্নাঘরের প্যানে এখন ঢুকেছে প্রোগ্রামিং কোড। এই ধারাবাহিকতায় দুবাইয়ে চালু হতে যাচ্ছে 'উহু' বিশ্বের প্রথম সম্পূর্ণ এআই-চালিত রেস্তোরাঁ। এখানে মানুষের বদলে কাজ করবে উন্নত এআই প্রযুক্তি।
কী আছে এই রেস্তোরাঁয়?
উহু রেস্তোরাঁটি অবস্থিত দুবাইয়ের প্রতীকী স্থাপনা বুর্জ খলিফার সন্নিকটে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো, এখানে মানব শেফ নেই। এই পাকশালার সব কাজই করবে একটি উন্নত এআই সিস্টেম। মানবাকৃতির শেফের নাম ‘আইমান (এআই-ম্যান)’। খাবার তৈরি থেকে পরিবেশন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে কাজ করবে এই মডেল।
আইমান: কেমন এই এআই শেফ?
‘আইমান’ হলো এক ধরনের শক্তিশালী এআই সিস্টেম, যেটি হাজার হাজার আন্তর্জাতিক রেসিপি, উপাদান, স্বাদের গঠন, পুষ্টিমান এবং খাদ্যবিজ্ঞানের গবেষণা বিশ্লেষণ করে প্রস্তুত করা হয়েছে। যদিও এটি মানুষের মতো স্বাদ বা ঘ্রাণ বুঝতে পারে না, তবে এটি উপাদানের রাসায়নিক গঠন ও স্বাদপ্রোফাইল বিশ্লেষণ করে অসংখ্য সম্ভাব্য রেসিপি সাজাতে পারে।
তবে এখানেই শেষ নয়। আইমানের তৈরি রেসিপিগুলো অভিজ্ঞ মানব রাঁধুনিদের দ্বারা যাচাই করা হয় এবং তাঁদের মতামতের ভিত্তিতেই খাবার চূড়ান্ত করা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক শেফ রেইফ ওথমান, যিনি সৃজনশীলতা ও গুণগত মানের ভারসাম্য বজায় রাখার দায়িত্বে রয়েছেন।
প্রযুক্তি ও সৃজনশীলতার এক অপূর্ব মেলবন্ধন
উহুর সহপ্রতিষ্ঠাতা আহমেদ ওয়েতুন চাকির জানিয়েছেন, তাদের লক্ষ্য কখনোই মানুষের রান্নার দক্ষতাকে প্রতিস্থাপন করা নয়; বরং এআই-এর সহায়তায় মানবিক সৃজনশীলতা ও টেকসই চিন্তাকে আরও সমৃদ্ধ করা।
‘আইমান’ শুধু সুস্বাদু খাবার তৈরি করতেই পারে না, বরং এটি পরিবেশবান্ধব রান্নার ধারণাকেও সামনে নিয়ে এসেছে। সাধারণ রান্নার সময় যেসব উপাদান ফেলে দেওয়া হয়, যেমন, হাড়, চর্বি বা সবজির খোসা, সেগুলোকেও কাজে লাগিয়ে নতুন ও পুষ্টিকর খাবার তৈরি করতে পারে আইমান। এর ফলে খাদ্য অপচয় কমে যাবে এবং রেস্তোরাঁ পরিচালনাও হবে আরও টেকসই।
ভবিষ্যতের রান্নাঘর
‘উহু’ শুধু একটি রেস্তোরাঁ নয়; এটি একটি নতুন ধারার সূচনা। উদ্যোক্তাদের ভাষ্যমতে, ভবিষ্যতে ‘আইমান’ সফটওয়্যারটি লাইসেন্স আকারে বিশ্বের অন্যান্য রেস্তোরাঁয় ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এতে রান্নার সৃজনশীলতা এবং পরিবেশসচেতনতা ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বজুড়ে।
গ্রাহকদের জন্য এক ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা
উহু রেস্তোরাঁর প্রতিটি দিক, মেনু, পরিবেশন, পরিবেশ এমনকি আলোকসজ্জা পর্যন্ত, পরিকল্পনা করা হয়েছে এআই বিশ্লেষণের মাধ্যমে। ফলে রেস্তোরাঁয় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই অতিথিরা পাবেন এক আধুনিক ও অভিনব অভিজ্ঞতা, যা খাবারের স্বাদ ছাড়াও পরিবেশনা ও উপস্থাপনাকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যাবে।
দুবাইয়ের আরেকটি প্রযুক্তিগত চমক
দুবাই এমনিতেই উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিনির্ভর পরিকল্পনায় বিশ্বের অগ্রগামী শহরগুলোর একটি। এই এআই-চালিত রেস্তোরাঁ সেই ধারায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। 'উহু'-এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধু কাজের গতি বাড়ায় না, বরং মানবিক চিন্তাভাবনার সঙ্গে একত্রে কাজ করে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়।
খাবার কখনো শুধু শরীরের প্রয়োজন মেটায় না, এটি হয়ে উঠতে পারে এক শিল্প, এক অভিজ্ঞতা। ‘উহু’ সেই শিল্পকে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করে একটি নতুন যুগের সূচনা করছে। এটি শুধু দুবাইবাসীর জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের খাদ্যপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য উদ্ভাবন। সূত্র: দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট