সাইবার অপরাধ দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। শুধু ব্যক্তিগত তথ্য নয়, লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে হাসপাতাল, সরকার, এবং কূটনৈতিক সংস্থাগুলোর মতো সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠান। এই প্রেক্ষাপটে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। ‘অপারেশন এন্ডগেম’ নামের এক গোপন অভিযানের মাধ্যমে রাশিয়াভিত্তিক একটি সুসংগঠিত সাইবার অপরাধী চক্রকে ভেঙে দিয়েছে তারা।
আন্তর্জাতিক অভিযানে ৭টি দেশের অংশগ্রহণএই যৌথ অভিযানে অংশ নিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ ও তদন্ত সংস্থাগুলো। এতে ২০ জন সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
নেতৃত্বে ম্যালওয়্যার নির্মাতারাযুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজনের নাম প্রকাশ করেছে:
>> রুস্তাম রাফাইলেভিচ গাল্লিয়ামভ, মস্কো (বয়স ৪৮)
>> আলেক্সান্ডার স্তেপানোভ ওরফে ‘জিমবি’, নভোসিবিরস্ক (বয়স ৩৯)
>> আরতেম কালিনকিন ওরফে ‘অনিক্স’, (বয়স ৩৪)
তারা ‘কোয়াকবট’ ও ‘ডানাবট’ নামের দুটি শক্তিশালী ম্যালওয়্যার নেটওয়ার্ক পরিচালনা করতেন।
লক্ষ্যে হাসপাতাল, সরকারি সংস্থা, এবং সাধারণ ব্যবহারকারীবিশেষত কোভিড-১৯ মহামারির সময় এ চক্রটি যুক্তরাষ্ট্রের বহু হাসপাতালের বিরুদ্ধে হামলা চালায়। ‘কন্টি’ র্যানসমওয়্যার গ্যাং এর মাধ্যমে এসব হামলার নেতৃত্ব দেন ভিতালি নিকোলায়েভিচ কোভালেভ নামের এক রাশিয়ান নাগরিক। জার্মানির বিকেএ (BKA) সংস্থা তাকে ‘সাইবার অপরাধ ইতিহাসে অন্যতম সফল ব্ল্যাকমেইলার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
কোভালেভের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি: >> শত শত কোম্পানিতে হামলা চালিয়েছেন
>>ব্ল্যাকসুইট ও রয়েল নামক অন্যান্য সাইবার গ্যাংও পরিচালনা করেছেন
>>তাঁর ক্রিপ্টো ওয়ালেটে রয়েছে প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরো!
কে কোথায়?বেশির ভাগ সন্দেহভাজন রাশিয়ায়, কিছু দুবাইয়ে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। যদিও প্রত্যর্পণ জটিল, তবু তাঁদের শনাক্ত করাই তদন্তে এক বড় অগ্রগতি।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নাম >> রোমান মিখাইলোভিচ প্রোকপ: ইউক্রেনীয় নাগরিক, ‘কোয়াকবট’ ম্যালওয়্যার নেটওয়ার্কের অন্যতম সদস্য হিসেবে চিহ্নিত।
>> ‘ডানাবট’-এর এক সংস্করণ কূটনৈতিক ও সামরিক সংস্থার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির কাজে ব্যবহৃত হয়েছে।
>> আক্রান্ত কম্পিউটারের সংখ্যা: ৩ লাখেরও বেশি, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, পোল্যান্ড, ভারত ও ইতালির ডিভাইস।
অপারেশন এন্ডগেম: সফলতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা‘অপারেশন এন্ডগেম’-এর সূচনা হয় ২০২২ সালে জার্মানির উদ্যোগে। অভিযানের নেতৃত্বে থাকা জার্মান তদন্ত সংস্থা BKA বলছে, এবার তারা দ্বিতীয় পর্যায়ে যাচ্ছে-‘অপারেশন এন্ডগেম ২.০’। সংস্থার প্রধান হোলগার মুনশ বলেন, “আমরা আবারও প্রমাণ করেছি-আমাদের কৌশল কাজ করে, এমনকি তথাকথিত বেনামি ডার্কনেটেও।”
বিশ্বজুড়ে সাইবার অপরাধ এখন জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। এই অভিযান প্রমাণ করেছে-আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এমন শক্তিশালী চক্রও ভাঙা সম্ভব। তবে সামনে এখনো অনেক পথ বাকি। প্রযুক্তি যত উন্নত হবে, অপরাধীরা তত বেশি পরিশীলিত হবে-তাই দরকার আরও সমন্বিত ও বুদ্ধিবৃত্তিক অভিযান। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান