অবশেষে অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের মহাকাশ সংস্থা ব্লু অরিজিন তাদের বহু প্রতীক্ষিত বাণিজ্যিক মহাকাশযাত্রা শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে নাসার গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান মিশন এসকাপেড-কে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে ব্লু অরিজিনের শক্তিশালী ও বিশাল নিউ গ্লেন রকেটের মাধ্যমে। এটাই ব্লু অরিজিনের প্রথম কোনো ফ্লাইট, যা সরাসরি মঙ্গল অভিযানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে।
৩২ তলা ভবনের সমান রকেটের ঐতিহাসিক উড্ডয়ন
দুই ধাপবিশিষ্ট উচ্চক্ষমতার নিউ গ্লেন রকেটটি ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন থেকে আকাশে উঠে। গত ১৬ জানুয়ারির সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের পর এটিই ছিল নিউ গ্লেনের প্রথম বাণিজ্যিক মিশন।
লাইভ ওয়েবকাস্টে দেখা যায়, রকেটের সাতটি বিই-৪ ইঞ্জিন গর্জন করে চালু হতেই শিখা ও বাষ্পে আকাশ আলোকিত হয়ে ওঠে। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১,২৭০ কেজি তরল জ্বালানি ব্যবহার করে রকেট আকাশে ধীরে ধীরে উঠতে থাকে। মেঘলা আকাশ ও ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের কারণে কয়েক দিন বিলম্বের পর শেষ পর্যন্ত সফলভাবে উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়।
মঙ্গলে যাচ্ছে নাসার যমজ মহাকাশযান ‘ব্লু’ ও ‘গোল্ড’
এই মিশনের মূল লক্ষ্য হলো নাসার দুটি যমজ মহাকাশযান এসকাপেড-কে মঙ্গলের পথে পাঠানো। ‘ব্লু’ ও ‘গোল্ড’ নামের এই দু’টি যান একসঙ্গে মঙ্গল গ্রহকে প্রদক্ষিণ করবে এবং সৌর বায়ু মঙ্গলের দুর্বল চৌম্বকক্ষেত্রের সঙ্গে কীভাবে প্রতিক্রিয়া করে, তা বিশ্লেষণ করবে। একই সঙ্গে সৌর বায়ুর প্রভাবে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল ক্ষয়ের হারও পর্যবেক্ষণ করবে।
উৎক্ষেপণের প্রায় ৩০ মিনিট পর মহাকাশযান দু’টি রকেটের ওপরের অংশ থেকে আলাদা হয়ে যায়। প্রায় ২২ মাস ধরে মঙ্গলের পথে ভ্রমণ শেষে তারা ১১ মাস ধরে লাল গ্রহের মহাকাশ, আবহাওয়া ও পরিবেশ নিয়ে গবেষণা চালাবে। এ ছাড়াও স্যাটেলাইট কোম্পানি ভায়াস্যাট-এর একটি পেলোডও নিউ গ্লেনের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এসকাপেড হলো ব্লু অরিজিনের প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক পেলোড।
স্পেসএক্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বড় পদক্ষেপ
এই মিশনকে স্পেসএক্সের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানানোর বড় একটি অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও বর্তমানে স্পেসএক্সই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রকেট উৎক্ষেপণকারী প্রতিষ্ঠান-মাত্র দুই বছরে তারা প্রায় ২৮০টি ফ্যালকন রকেট মিশন পরিচালনা করেছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি পরবর্তী প্রজন্মের শক্তিশালী স্টারশিপ রকেট তৈরিতেও ব্যস্ত।
অন্যদিকে ব্লু অরিজিনের নিউ গ্লেন রকেটটির উত্তোলন ক্ষমতা ফ্যালকন ৯-এর দ্বিগুণ। দশকের বেশি সময় ধরে কয়েক শ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত নিউ গ্লেনের নামকরণ করা হয়েছে প্রথম আমেরিকান মহাকাশযাত্রী জন গ্লেন-এর নামে।
নাসা এই এসকাপেড মিশনের জন্য প্রায় ৫৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে এবং নিউ গ্লেন রকেট ব্যবহার বাবদ ব্লু অরিজিনকে দিয়েছে ১৮ মিলিয়ন ডলার। সূত্র: রয়টার্স, এনডিটিভি