চীনের ‘কে’ ভিসা: প্রতিভা টানার নতুন কৌশল

প্রকাশ: সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png নিজস্ব প্রতিবেদক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

চীন প্রযুক্তি খাতে বৈশ্বিক প্রতিভা টানতে এগিয়ে এলো নতুন উদ্যোগ নিয়ে। নতুন ভিসার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কে ভিসা’। চলতি সপ্তাহ থেকেই এটি কার্যকর হচ্ছে, যা তরুণ বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের জন্য খুলে দিচ্ছে ভিন্ন এক দুয়ার।

এই ভিসা বিশেষভাবে লক্ষ্য করছে তরুণ স্টেম স্নাতকদের। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত এই চার বিষয়ে যারা বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করেছেন, তাদের জন্যই মূলত এই সুযোগ। সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো, কোনো চাকরির অফার ছাড়াই চীনে আসা, থাকা ও কাজ করার অনুমতি।

যুক্তরাষ্ট্রের কড়াকড়ি, চীনের সুযোগ
যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি এইচ-১বি ভিসার নিয়ম কঠোর করেছে। প্রতি কর্মীর জন্য বছরে ১ লাখ ডলার ফি দিতে হবে কোম্পানিগুলোকে। তার সঙ্গে লটারির বাধা তো আছেই। ফলে অনেক দক্ষ তরুণ নতুন বিকল্প খুঁজছেন।

চীন সেই জায়গাটাই ধরেছে। চীনে দক্ষ প্রকৌশলীর অভাব নেই। তবু বিদেশি বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি প্রতিভা আনার জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে তারা।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার এ সময়ে পদক্ষেপটি অনেক তাৎপর্য বহন করছে।

আইওয়ার ইমিগ্রেশন আইনজীবী ম্যাট মাউনটেল-মেদিচি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাধা তৈরি করছে, আর চীন সেই বাধা সরাচ্ছে।” এটি প্রতীকীভাবেও এক শক্ত বার্তা।

আকর্ষণ ও চ্যালেঞ্জ
বিদেশি প্রযুক্তিবিদদের জন্য কে ভিসা আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ভারতীয় তরুণদের কাছে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি ভিসা পাওয়া ব্যক্তিদের ৭১ শতাংশ ছিলেন ভারতীয় নাগরিক। এখন তাদের একটি বড় অংশ চীনের দিকে তাকিয়ে আছেন।

তবে প্রশ্নও আছে। চীনা সরকার এখনো জানায়নি বয়সসীমা, শিক্ষাগত যোগ্যতা বা কাজের অভিজ্ঞতার শর্ত। আর্থিক সুবিধা, স্থায়ী আবাসন বা পরিবার আনার সুযোগ নিয়েও কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। এই বিষয়গুলো ভিসার গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ভাষা আরেকটি বড় বাধা। চীনের বেশির ভাগ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ম্যান্ডারিনে কাজ করে। বিদেশিদের জন্য ভাষা শেখা সহজ নয়। ভাষা না জানলে চাকরি পাওয়াই কঠিন হয়ে যাবে। প্রতিভা ফেরানো ও নতুন প্রতিভা আনা।

চীন অতীতে প্রতিভা ফেরাতে অনেক কিছু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা চীনা বিজ্ঞানীদের দেশে ফেরাতে দেওয়া হয়েছে কোটি টাকার প্রণোদনা। বাড়ি ভর্তুকি, সাইনিং বোনাস সবই ছিল অফারে। একেকজনকে দেওয়া হয়েছে ৫০ লাখ ইউয়ান পর্যন্ত, যা প্রায় সাত লাখ ডলার।

তবু বিদেশিদের সংখ্যা চীনে খুবই সীমিত। দেশটির মোট জনসংখ্যার এক শতাংশেরও কম বিদেশি নাগরিক সেখানে বাস করেন। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রে ৫ কোটির বেশি অভিবাসী আছে, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ।

এই ব্যবধান চীন ভালোভাবেই বোঝে। তাই বিদেশি প্রতিভা আনার ওপর জোর দিচ্ছে তারা। দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি ও নিউজিল্যান্ডও দক্ষ কর্মীদের জন্য ভিসা সহজ করেছে। চীন সেই দৌড়ে যুক্ত হলো নতুন কে ভিসা দিয়ে।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, কে ভিসা কেবল প্রযুক্তি খাতের জন্য নয়। এটি চীনের ভূরাজনৈতিক কৌশলেরও অংশ। যুক্তরাষ্ট্র যখন প্রযুক্তি প্রতিভা আনার পথে কড়াকড়ি করছে, তখন চীন বিপরীত পথ নিচ্ছে। এভাবে তারা নিজেদের অর্থনীতি ও প্রযুক্তি খাতকে আরও শক্ত করতে চাইছে।

চীনের সিচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় শিক্ষার্থী বিকাশ কালিদাস বললেন, “ভারতীয় স্টেম পেশাজীবীদের জন্য যারা নমনীয় ভিসা খুঁজছেন, এটি হতে পারে দারুণ বিকল্প।”

তবে শেষ পর্যন্ত কতটা সফল হবে কে ভিসা, তা নির্ভর করবে নীতির স্পষ্টতা ও বাস্তব প্রয়োগের ওপর। কারণ প্রতিভা শুধু ভিসার সুযোগ দেখে আসে না, আসে কাজের পরিবেশ, নিরাপত্তা ও দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা খুঁজে। সূত্র: রয়টার্স

image

আপনার মতামত দিন