কিছু বছর আগেও আমরা কল্পনা করতে পারতাম না, একটা যন্ত্র আমাদের সঙ্গে কথা বলবে, ছবি আঁকবে বা এমনকি কবিতা লিখবে! কিন্তু এখন এই দৃশ্যটাই বাস্তব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই আমাদের প্রতিদিন চমকে দিচ্ছে নতুন নতুন কাজ করে। আর এই দ্রুত পরিবর্তনের মধ্যে একটা প্রশ্ন প্রায়ই আমাদের মাথায় আসে-আমাদের চাকরি কি টিকে থাকবে?
এই প্রশ্ন একেবারে অমূলক নয়। এমনকি বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি এবং মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। তবে তিনি শুধু ভয় দেখাননি, বরং আশার কথাও শুনিয়েছেন। তাঁর মতে, ভবিষ্যতে মানুষের অনেক কাজ এআই করে ফেলবে ঠিকই, কিন্তু অন্তত তিনটি পেশা টিকে থাকবে এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
প্রোগ্রামার: যারা এআই তৈরি করে
এআই যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তার পেছনে মানুষের কাজ থাকবেই। বিল গেটস বলেন, “এআই নিজে কোড লিখতে পারলেও, নতুন সফটওয়্যার তৈরি, ত্রুটি সংশোধন কিংবা আরও উন্নত করার কাজ মানুষকেই করতে হবে।” অর্থাৎ, যারা কোড জানে, প্রোগ্রামিং করে-তাদের চাকরি বরং আরও মূল্যবান হবে। কারণ এই প্রযুক্তি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য দক্ষ মানুষ লাগবেই।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ: যারা শক্তির জোগান নিশ্চিত করে
জ্বালানি খাতটি অতি জটিল ও বহুমাত্রিক। কোথায় নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হবে, কীভাবে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব-এসব সিদ্ধান্ত কেবল এআই নিতে পারবে না। বিল গেটস মনে করেন, এআই এই খাতে বিশ্লেষণ করে সাহায্য করতে পারলেও, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব থাকবে অভিজ্ঞ মানুষের উপরেই।
জীববিজ্ঞানী: যারা জীবনের রহস্য উন্মোচন করে
জীববিজ্ঞানের জগৎ এত বিশাল ও গভীর যে, আজও এআই তার পুরোটা আয়ত্ত করতে পারেনি। রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে নতুন ওষুধ আবিষ্কার-এসব কাজের জন্য মানবিক সৃজনশীলতা ও যুক্তিশক্তি অপরিহার্য। এআই হয়তো সহায়ক হতে পারে, কিন্তু গবেষণার নতুন দিক খুঁজে বের করা, হাইপোথিসিস তৈরি বা জীবনের গভীর রহস্য উন্মোচন এখনো মানুষের কাজই।
সতর্কবার্তাও দিয়েছেন বিল গেটস
এই তিনটি পেশার সম্ভাবনা বলার পাশাপাশি, বিল গেটস একটি সতর্কতা দিতেও ভুলেননি। তিনি বলেন, ভবিষ্যতের কথা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। প্রযুক্তির জগতে পরিবর্তন এত দ্রুত হয় যে আজকের ধারণা কাল বদলে যেতে পারে। সম্ভবত আগামী দশকের মধ্যেই এআই এমনভাবে বিকশিত হবে যে আরও বহু পেশা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
তাহলে আমাদের করণীয় কী?
ভবিষ্যত নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বরং আমাদের শিখতে হবে, মানিয়ে নিতে হবে। এআই যতই শক্তিশালী হোক না কেন, কিছু মানবিক গুণ যেমন আবেগ, সৃজনশীলতা ও নৈতিকতা-এই তিনটি দিক কখনোই পুরোপুরি নকল করতে পারবে না।
একজন নার্সের সহানুভূতি, একজন শিক্ষকের মমতা বা একজন শিল্পীর কল্পনা-এসব কিছুই একান্ত মানবিক। তাই মানবিক গুণাবলি ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা-দুইয়ের সমন্বয়ই ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
শিল্পবিপ্লব কিংবা ইন্টারনেট বিপ্লবের মতোই এআই বিপ্লবও আমাদের জীবন পাল্টে দিচ্ছে। তবে অতীতেও মানুষ টিকে থেকেছে, নতুন দক্ষতা অর্জন করে নিজেকে গড়ে তুলেছে। এবারও ব্যতিক্রম হবে না। বিল গেটসের পরামর্শ হলো-নতুন কিছু শেখা বন্ধ করবেন না। এআইকে ভয় নয়, বরং সেটাকে সঙ্গী করে এগিয়ে যান। কারণ এআই প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, হতে পারে আমাদের সবচেয়ে বড় সহকারী। সূত্র: দ্য ইকোনমিকস টাইমস