জিপিটি-৫: প্রথম দিনেই চার্ট ক্রাইম ও বিভ্রান্তি, স্যাম অল্টম্যানের দুঃখ প্রকাশ

প্রকাশ: সোমবার, ১১ অগাস্ট, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

ওপেনএআই-এর নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল জিপিটি-৫ উন্মোচনের পর থেকেই ব্যবহারকারীদের মধ্যে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একদিকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির আশ্বাস, অন্যদিকে বাস্তব ব্যবহার অভিজ্ঞতায় দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি, যা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সিইও স্যাম অল্টম্যান পর্যন্ত প্রকাশ্যে দুঃখপ্রকাশ করেছেন।

প্রথম দিনেই ‘চার্ট ক্রাইম’ ও বিভ্রান্তি
জিপিটি-৫-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল একটি রিয়েল-টাইম রাউটিং সিস্টেম, যা ব্যবহারকারীর প্রশ্ন বুঝে সিদ্ধান্ত নেবে, কখন দ্রুত উত্তর দিতে হবে আর কখন ‘চিন্তা’ করে জবাব দেওয়া ভালো। কিন্তু মডেলটি বাজারে আসার দিনেই এই ফিচার প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়।

স্যাম অল্টম্যান নিজেই স্বীকার করেন, “জিপিটি-৫-এর প্রথম দিনটা একটু বেশি অগোছালো ছিল। রাউটার কাজ করেনি, যার ফলে মডেলটি আগের তুলনায় কম বুদ্ধিমান মনে হয়েছে।”

এই সমস্যার ফলে অনেক ব্যবহারকারী জিপিটি-৫-এর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সবচেয়ে আলোচিত হয় একটি ভুল গ্রাফ, যা মডেলটির পারফরম্যান্স বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছিল। ইন্টারনেটে মুহূর্তেই এটি নিয়ে মিম ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। অল্টম্যান একে ‘মেগা চার্ট স্ক্রু-আপ’ হিসেবে স্বীকার করেন। যদিও অফিসিয়াল ব্লগ পোস্টে থাকা গ্রাফগুলো ছিল সঠিক।

জিপিটি-৪ ফেরানোর দাবি ও রেট লিমিট দ্বিগুণ
ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ জিপিটি-৪-এর ব্যবহার সুবিধা ফেরত চায়। তাদের মতে, এখনও অনেক ক্ষেত্রে জিপিটি-৪ বেশি নির্ভরযোগ্য ও কার্যকর।

এ নিয়ে রেডিটের একটি অ্যাস্ক মি এনিথিং (এএমএ) সেশনে স্যাম অল্টম্যান বলেন, “আমরা প্লাস গ্রাহকদের জিপিটি-৪ ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছি এবং এ বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করছি।”

এর কিছুক্ষণ পরেই তিনি ঘোষণা দেন, “প্লাস গ্রাহকদের জন্য রেট লিমিট দ্বিগুণ করে দেওয়া হচ্ছে।” এ ঘোষণায় অনেক ব্যবহারকারী স্বস্তি প্রকাশ করলেও, মডেল পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

চিন্তাভাবনার সময় ব্যবহারকারীর হাতে
ওপেনএআই জানায়, তারা এমন একটি নতুন ইউজার ইন্টারফেস (ইউআই) তৈরির কাজ করছে, যাতে ব্যবহারকারীরা চাইলে মডেলটিকে ‘চিন্তা করার সময়’ দিতে পারবেন। এই ‘রিফ্লেকশন মোড’ চালু হলে মডেলটি দ্রুত উত্তর না দিয়ে কিছুটা সময় নিয়ে আরও পরিশীলিতভাবে জবাব দেবে। 

তবে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, এই ফিচার সবার কাছে পৌঁছাতে সময় লাগবে। ইতোমধ্যে এপিআই ট্র্যাফিক দ্বিগুণ হওয়ায় সার্ভারে চাপও বেড়েছে।

জিপিটি-৫-এর সম্ভাব্য অগ্রগতি
যদিও জিপিটি-৫-এর প্রাথমিক রাউটিং বিভ্রাট হতাশাজনক ছিল, তবুও এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নির্দেশ করে। যেমন,  শক্তিশালী মাল্টিমোডাল রিজনিং (টেক্সট, ইমেজ, অডিও একসঙ্গে বিশ্লেষণ করার সক্ষমতা)। দীর্ঘমেয়াদি মেমোরি সাপোর্ট। উন্নত লজিক্যাল প্রসেসিং ক্ষমতা,  ২,৫৬,০০০ টোকেন বা তার বেশি কনটেক্সট উইন্ডো।

এই উন্নয়নগুলো ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক হলেও, ব্যবহারযোগ্যতা ও নির্ভরযোগ্যতার প্রশ্নে উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে।

চাপের মুখে ওপেনএআই: করপোরেট ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ
জিপিটি-৫ উন্মোচনের সময়ের সমালোচনার পাশাপাশি, ওপেনএআইকে ঘিরে করপোরেট দ্বন্দ্বও প্রকট হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে ১৩.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা মাইক্রোসফট চাইছে আরও নিয়ন্ত্রণ। একই সঙ্গে অন্যান্য  নিয়োগকারীরা দ্রুত বাণিজ্যিকীকরণের জন্য চাপ দিচ্ছে।

অন্যদিকে সাইবার অপরাধী ও প্রতারকেরাও জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন মাত্রায় প্রতারণা শুরু করেছে, যা নিরাপত্তার দিক থেকে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
 
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিপিটি-৫ প্রযুক্তিগতভাবে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক, তবে এর সূচনা হয়েছে কিছুটা বিতর্ক ও বিভ্রান্তির মধ্য দিয়ে। স্যাম অল্টম্যান নিজেই সতর্ক করে বলেছেন, “এআই-এর অগ্রগতি মানবজাতির নিয়ন্ত্রকের তুলনায় অনেক দ্রুত।” অতএব, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে উচ্ছ্বাস থাকলেও আমাদের প্রয়োজন সংবেদনশীলতা, সতর্কতা অবলম্বন করা। সূত্র: টেকক্রাঞ্চ, দ্য ভার্জ।

image

আপনার মতামত দিন