বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে প্রতিযোগিতা এখন তুঙ্গে। প্রযুক্তির এই বিস্ময়কর শাখা ভবিষ্যতের অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা, শিক্ষাসহ নানা খাতে বিপ্লব ঘটাতে চলেছে। এ প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন একটি নতুন নীতিমালার খসড়া প্রকাশ করেছে, যার মূল লক্ষ্য-যুক্তরাষ্ট্রকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে বৈশ্বিক নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত করা।
ওপেন এআই মডেলের উপর জোর
প্রকাশিত খসড়ায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ওপেন সোর্স ও ওপেন ওয়েট এআই মডেলের প্রতি উৎসাহ দেওয়া। ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বজুড়ে ডেভেলপারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা এসব ওপেন মডেল সহজে ডাউনলোড ও ব্যবহার করতে পারেন। এই ধরণের মডেল উন্মুক্ত করার ফলে শুধু গবেষক ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা উপকৃত হবেন না, বরং উদ্ভাবনের গতি বহুগুণ বেড়ে যাবে। এতে যেমন নতুন স্টার্টআপের উত্থান সহজ হবে, তেমনি ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষেও এআই প্রযুক্তিকে নিজেদের সেবায় যুক্ত করা সম্ভব হবে।
চীনা মডেলের উপর নজরদারি
এআই খাতে চীনের অগ্রগতি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন প্রশাসনের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খসড়া নীতিমালায় মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চীনা এআই মডেলগুলো নিয়ে গবেষণা করতে। বিশেষ করে, এই মডেলগুলোতে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বক্তব্য বা রাজনৈতিক সেন্সরশিপ কতটা প্রতিফলিত হচ্ছে, তা বিশ্লেষণ করতে বলা হয়েছে।
এ ধরনের পদক্ষেপ শুধু প্রযুক্তির নিরপেক্ষতা রক্ষা নয়, বরং তথ্যপ্রবাহ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
রাজ্যভিত্তিক তহবিল বরাদ্দে শর্ত
খসড়ায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এআই উন্নয়নের জন্য ফেডারেল সরকারের তহবিল বরাদ্দের ক্ষেত্রে যেন কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপকারী অঙ্গরাজ্যগুলোকে অগ্রাধিকার না দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন বোঝাতে চেয়েছে-নীতিগতভাবে উদার ও উদ্ভাবন-বান্ধব রাজ্যগুলোতেই যেন গবেষণা ও উন্নয়নের পরিবেশ গড়ে ওঠে।
চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেতৃত্বের সংগ্রাম
এই নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য স্পষ্ট-যুক্তরাষ্ট্রকে এআই খাতে শীর্ষ নেতৃত্বে নিয়ে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বিশেষ করে চীনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া। বর্তমানে চীন বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এআই খাতে বিপুল বিনিয়োগ করে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে তারা বৈশ্বিক বাজারে দ্রুত প্রভাব বিস্তার করছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই উদ্যোগ যদিও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত, তবে এর মধ্য দিয়ে উদ্ভাবন ও গবেষণার ক্ষেত্রে উন্মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের। সূত্র: রয়টার্স।